ধাক্কা অর্থনীতিতে! করোনা আতঙ্কে ফেরত আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে রাজী নন ভিনরাজ্যে
ধাক্কা অর্থনীতিতে! করোনা আতঙ্কে ফেরত আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে রাজী নন ভিনরাজ্যে
দেশজুড়ে মার্চ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন যা জুন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, এই সময় প্রায় ১০ মিলিয়ন পরিযায়ী শ্রমিক দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহর থেকে বেড়িয়ে নিজেদের গ্রামে চলে গিয়েছেন। যার সবচেয়ে বড় কারণ হল বেকারত্ব ও ক্ষিদে। কিন্তু বর্তমানে যখন দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে নিজের জায়গায় ফেরার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই দেশজুড়ে শ্রমিকদের অভাব দেখা দিয়েছে।
শ্রমিকরা ফিরতে চাইছেন না
শহরের শিল্পগুলিতে এখন পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব রয়েছে, তাই এখনই তারা তাদের সক্ষমতাতে ফিরতে পারছে না, অন্যদিকে গ্রামীণ রাজ্যগুলি আশঙ্কা করছে যে শহর থেকে যদি অর্থের প্রবাহ না আসে তবে গরীব পরিবারগুলির অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়ে যাবে, বিনিময়ে যা রাষ্ট্রীয় মজুতগুলিতে আরও চাপের সৃষ্টি হবে। অর্থনীতির সঙ্গে এই সমস্ত সমস্যার মধ্যে, পরিযায়ী শ্রমিকরা এখনই শহরে ফিরতে রাজি নন, কারণ একে তো মারণ ভাইরাসের ভয় ও দ্বিতীয়ত কাজের অনিশ্চয়তা। যদিও রাজ্যগুলি বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও ভারতের অর্থনীতি ৪০ বছরেরও বেশি সময়ে প্রথম সঙ্কোচনের জন্য ছুটে চলেছে, তাও আবার পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক আবহাওয়ার মধ্যে।
শ্রমিকদের শহরে ফেরার কোনও তাড়া নেই
ভারতীয় পরিযায়ী সংস্থার তথা মুম্বইয়ের গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপের কর্ণধার বরুণ আগরওয়াল বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি চক্রাকার পরিযায়ীদের পরিবার, যাঁরা দুর্বল, দরিদ্র, নীচু জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে এসেছেন, তাঁদের কাছে বিশাল অর্থনৈতিক ধাক্কা লাগবে।' মুম্বইয়ের ফাইনো পেটেক লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ঋষি গুপ্তা বলেন, ‘প্রথম ১৫ দিনের লকডাউনে ঘরোয়া নগদ ৯০ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। মে মাসের শেষে নগদ ফের ফিরে আসে ১৭৫০ (২৩ ডলার)-এ, যা প্রাক-কোভিড গড়ের অর্ধেক, আর আমরা জানিও না কবে এই পরিস্থিতি শুধরাবে এবং পরিযায়ীদেরও ফেরার কোনও তাড়া নেই। হয়ত তারা এটাও বলতে পারে যে তারা ফেরার বিষয়ে ভাবছেই না।'
২৯৯ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা সরকারের
ভারত ২৭৭ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে মে মাসে এবং তার মধ্যে ১১৬টি জেলার গ্রামগুলিতে পরিযায়ীদের জন্য ১২৫ দিনের কর্মসংস্থানে ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করার লক্ষ্য রয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী জানিয়েছেন, যে ২,৫০০ একর জমি চিহ্নিত হয়েছে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য উপলব্ধ করা যেতে পারে। তবে বিনিয়োগকারীরা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এবং এর মধ্যে, রাজ্য সরকার তার কাজের জন্য জাতীয় নগদ-কর্মসূচির ওপর নির্ভর করছে যা প্রতি পরিবারকে ১০০ দিনের মজুরি দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এখন যে সব শ্রমিকরা সামাণ্য দক্ষ এবং কর্মসূচির মাধ্যমে প্রস্তাবিত কাজ করতে চান না এবং অনেকে এমনও রয়েছেন যারা হয়ত ভাবতে পারেন যে এই কাজ তাদের সমাজিক অবস্থানের চেয়ে নিম্নতর এবং যার ফলে তাদের বর্ণর মধ্যে ভেদাভেদ নিয়ে আসতে পারে।
শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ করছে বিভিন্ন রাজ্য
উত্তরপ্রদেশে লকডাউনের সময় ফেরা ৩.২ মিলিয়ন মানুষকে দক্ষ শ্রমিক হিসাবে স্থানীয় উৎপাদন ও রিয়াল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত নির্মাণ কাজ ও রিয়াল এস্টেট ফার্মে তিন লক্ষ মানুষকে কাজ দেওয়া হয়েছে। বিহার ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের দিয়ে রাজ্য পরিচালিত পরিকাঠামোগত প্রকল্পে কাজে লাগিয়েছে ও অন্যান্যদের সরকারি স্কুলের আসবারপত্র ও ইউনিফর্ম সেলাইয়ে নিয়োগ করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশা নগর মজুরি কর্মসংস্থান কার্যক্রম ঘোষণা করেছে, যাতে এর মাধ্যমে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাড়ে চার লক্ষ শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করা যায়। এখনও পর্যন্ত আড়াই লক্ষ শ্রমিক এই প্রকল্পের অন্তর্গত চাকরি পেয়েছে।
নীতিনির্ধারকদের সমস্যা বাড়বে
পরিযায়ী শ্রমিকরা যদি দীর্ঘ মেয়াদ পর্যন্ত নিজেদের গ্রামে থাকেন তবে নীতি নির্ধারকদের কাছে আর্থিক সমস্যা আর ঘনীভূত হবে এবং চিন্তার আরও কারণ তৈরি হবে। আর এভাবেই যদি চলতে থাকে তবে অর্থনীতিতে দ্বিতীয়বার ধাক্কা লাগতে পারে যা সামগ্রিকভাবে মোটেও ভালো নয়।
নির্মলার কথা ধ্রুবতারার মতো সত্যি! পরিযায়ীদের নামে নিজের বেস সেভ করার চেষ্টা অমিতের,বিস্ফোরক রাহুল