শ্রমিকরা অসহায় নন, বিভ্রান্তির সৃষ্টি হল স্বারাষ্ট্রমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে
শ্রমিকরা অসহায় নন, বিভ্রান্তির সৃষ্টি হল স্বারাষ্ট্রমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ৩৭ দিন লকডাউনের পর অবশেষে কেন্দ্র সরকার পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যাদের, যাঁরা অসহায় অবস্থায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিলেন তাঁদের ঘরে ফেরার জন্য আন্তঃরাষ্ট্র চলাচলের অনুমতি দিলেন। যদিও এই অনুমতির আগে বহু পরিযায়ী শ্রমিক কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুণ পায়ে হেঁটেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিজেদের বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত করে নিয়েছিলেন। সূর্যের প্রখর রৌদ্র সহ্য করে, পেটে একরাশ ক্ষিধে নিয়ে মাইলের পর মাইল তাঁরা শুধু হেঁটেই যেতেন। রিপোর্ট বলছে, এই পরিস্থিতিতে বাড়ি ফেরার পথে প্রায় ২২ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন।
২৯ এপ্রিল জারি হয় নির্দেশ
২৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়ে নির্দেশ জারি করার পর বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে পরিযায়ী শ্রমিক ও আটকে পড়া মানুষ বাড়ি ফিরতে পারেন। তবে এই স্বস্তি ছিল স্বল্পস্থায়ী, তিনদিন পরে স্বরাষ্ট্র সচিবের জারি করা একটি ব্যাখ্যা কার্যত অভিবাসী শ্রমিকদের ২৯ এপ্রিলের আদেশের পরিধি থেকে বের করে আনল।
বিভ্রান্তিকর চিঠি
৩ মে সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিবদের লেখা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠি, যা সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর বলেই মনে হয়েছে। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্ত-রাষ্ট্র চলাচলের অনুমতি কেবলমাত্র অসহায় ব্যক্তিদের জন্য, যাঁরা লকডাউনের আগে তাঁদের আদি জায়গা/কর্মস্থান ছেড়ে চলে এসেছেন, কিন্তু নিজেদের আদি বাড়ি/কর্মস্থানে ফিরতে পারছেন না কারণ লকডাউনের নিয়ম অনুসারে সমস্ত জায়গায় কড়াকড়ি জারি করা হয়েছে এবং যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা। চিঠিতে এও বলা হয়েছে, পূর্বোক্ত আদেশগুলিতে বর্ণিত সুবিধা সেইসব দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য, তবে এটা তাঁদের জন্য নয় জন্মস্থানেই থাকেন এবং সেই স্থানেই কাজ করেন। এখানে কোথাও পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করা নেই।
কর্নাটকে বাতিল তিনটে বিশেষ ট্রেন
৩ মে যখন এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় ততদিনে বিশেষ ট্রেন পরিষেবা আটকে পড়া ব্যক্তিদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালু হয়ে গিয়েছে। এই অদ্ভুত বিজ্ঞপ্তির যখন কেউ কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না। ঠিক তখনই কর্নাটকে ঘটল এই ঘটনা। নির্মাণকারীরা কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে দেখা করার পরই ৬ মে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিহারে যাওয়ার তিনটি ট্রেনটি বাতিল করে দেওয়া হয় (অথচ সেই বিশেষ ট্রেনের নাম রাখা হয়েছিল শ্রমিক ট্রেন)। এই বিষয়ের জন্য যখন কর্নাটক সরকার সমালোচনার মুখে পড়ে তখন দক্ষিণ ব্যাঙ্গালুরুর সাংসদ তেজস্বী সুর্য জানান যে এটি ৩ মে-এর জারি করা বিজ্ঞপ্তির ফলস্বরূপ।
অসহায় নয় শ্রমিকরা
আসলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে পরিযায়ী শ্রমিকরা অসহায় ব্যক্তি নন। দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর সাংসদ জানিয়েছেন যে যাঁরা অসহায় বলে চিহ্নিত হবে একমাত্র তাঁরাই রাজ্য ছেড়ে যেতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত বেঙ্গালুরুর বহু শ্রমিকের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করে। যদিও ২৯ এপ্রিলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল যে লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক, পড়ুয়া ও পর্যটক আটকে রয়েছেন তাঁদের আন্তঃ-রাষ্ট্র চলাচলের অনুমতি দেওয়া হল। যদিও বিজ্ঞপ্তিতে অসহায় শব্দটি বলা হয়নি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। ‘অসহায়' শব্দটির সাধারণ অর্থ হল অর্থ ও পরিবহনের অভাবে সে ওই স্থানে থাকতে পারছে না। যদিও অনেক রাজ্য বিজ্ঞপ্তির আসল অর্থ বুঝে বহু শ্রমিককে ফিরিয়ে এনেছে এবং তাদের রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়েছে। রেলের দাবি ১ মে থেকে ১১৫টি বিশেষ ট্রেনের মাধ্যমে প্রায় এক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেটে কী আদৌ করোনা ভাইরাস সারে?