কেউ শোনে না আমাদের কথা, আমরা যেন রাস্তায় পড়ে থাকা আবর্জনা, ফুঁসে উঠছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা
কেউ শোনে না আমাদের কথা, আমরা যেন রাস্তায় পড়ে থাকা আবর্জনা, ফুঁসে উঠছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা
কালো পিচের চওড়া রাস্তা ধরে কতদিন হেঁটে চলেছে দয়ারাম আর জ্ঞানবতী তা তাঁদের হিসেবে নেই। তাঁদের সঙ্গী ছোট্ট পাঁচ ছরের সন্তান। তাঁকে কাঁেধ চড়িয়েই হাঁটা শুরু করেেছন দয়ারাম। ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। বাড়ি পৌঁছতে মরিয়া সংগ্রাম পরিযায়ী শ্রমিকদের। লকডাউন কী কেন, করোনা ভাইরাসই বা কী জানেন না তাঁরা। তাঁদের কাছে এখন একটাই লক্ষ্য বাড়ি ফেরা। খিদে, ক্লান্তি সব ভুলে বাড়ি ফেরার আদম্য চেষ্টা চালিয়ে চলেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা লাখো লাখো পরিযায়ী শ্রমিক।
চলছে লকডাউন
গরিব দেশ ভারত। সেখানে দেড় মাসের লকডাউনের পরিণতি যে ভয়ঙ্কর হবে তা অজানা ছিল না রাষ্ট্রনেতাদের। কিন্তু ভাইরাস নামক বিদেশি শক্তির হাত থেকে বাঁচতে এই লকডাউন অস্ত্রেই ভরসা রাখতে হয়েছে তাঁদের। তার জন্য ১৭০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ১৫০ কোটির দেশে ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা। লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিকরা দিনের পর দিন রাস্তায় পড়ে রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে মহিলা শিশু এমনকী সদ্যোজাতও। মাথায় ছাদ নেই, পেটে খাবার নেই, জল নেই। বৃষ্টি হলে বাঁচার উপায় নেই। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ মাথায় করেই দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। দয়ারাম আর জ্ঞানবতীর মতো লাখো লাখো পরিযায়ী শ্রমিক হেঁটে চলেছেন মাইলের পর মাইল। বাড়ি ফিরতে হবে তাঁদের। লকডাউনে সোশ্যাল ডিসট্যান্স মানতে হবে তাই জাতীয় সড়কেও কড়া প্রহরা। পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে সেকারণে জাতীয় সড়কেও তাঁদের উপর নজরদারি চলছে। ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ার উপায় নেই। সঙ্গে সঙ্গে তাড়া দিচ্ছে পুলিস। এগিয়ে চলো।
খাবার সংকটে পরিযায়ী শ্রমিকরা
পুলিসের তাড়া খেতে খেতে ক্লান্ত অবসন্ন দয়ারাম, জ্ঞানমবতী আর তাঁদের ৫ বছরের শিশু দিনের শেষে খোলা আকাশের নীতে অনাহারেই ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ছে। আবার পরের দিন সূর্য উঠতেই হাঁটা শুরু। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যান প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ঠিকই । সেটা পাওয়া যাচ্ছে রেশনে। আর দেশের সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিকই সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত কারণ তাঁদের নির্দিষ্ট কোনও ঠিকানা নেই। তাঁরা পরিযায়ী। এখনও চালু হয়নি একদেশ এক রেশন কার্ড। অতএব কিছু রাজনৈিতক দল আর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে জোরে দুমুঠো কোনও কোনও দিন জুটছে ঠিকই কিন্তু তাতে ক্ষিদে মিটছে না। ক্ষিদের জ্বালায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন তাঁরা। যদিও অনেক রাজ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকদের আশ্রয় খাদ্যের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেটা সমুদ্রে একবিন্দু জল ছাড়া আর কিছুই নয়।
চূড়ান্ত অবহেলায় ফুঁসছে পরিযায়ী শ্রমিকরা
অন্নের সংস্থানে ঘরবাড়ি ছেড়ে সূর দেশে পাড়ি দেওয়া। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, কোথা থেকে কোথায় যান তাঁরা। অধিকাংশই নির্মাণ শ্রমিক। করোনা সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাঁদের একমাত্র ভরসার ঠিকাদারদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁদের ভরসায় কাজ করতে আসা তাঁরাই হাত ছেড়ে দিয়েছেন। টাকা নেই, খাবার নেই অনেকটা আবর্জনার মতই পড়ে থাকতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাই তো বারবার ফুঁসে উঠে দয়ারামরা বলে ওঠেন আমাদের কথা শোনেনা কেউ। আমরা যেন আবর্জনার মত পড়ে রয়েছি রাস্তায়।