
দেশে কোথায় দাঁড়িয়ে নাগরিকত্ব সংশোনী আইন, কী বলছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
দেশে করোনা মহামারীর আগে পর্যন্ত শোরগোল ছিল সিএএ (CAA) নিয়ে। সেই সিএএ-র অবস্থান এখন কোথায়। 'দ্য হিন্দু'তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সংসদীয় কমিটির (Parliamentary Committee) কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (Ministry of Home Affairs) তরফে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৯-এর বিধি তৈরির জন্য বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে। বিধি নিয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানানো হয়েছে সংসদীয় কমিটিকে।


৯ জানুয়ারি বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছিল
এর আগে 'দ্য হিন্দু'তেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, সিএএ নিয়ে বিধি তৈরি করতে সংসদীয় কমিটির কাছ থেকে ৯ জানুয়ারি বাড়তি সময় চেয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সূত্রের খবর অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে সময়ের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে দুটি কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি কারণ হল, আলোচনার প্রক্রিয়া এবং করোনা পরিস্থিতি।

করোনার কারণেই বিধি তৈরিতে দেরি
একদিকে যেমন সিএএ-র বিধি নিয়ে আলোচনা চালানোর কথা বলা হয়েছে, অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছিল, দেশে করোনা মহামারীর কারণেই সিএএ-র বিধি তৈরিতে দেরি হচ্ছে। বিধি তৈরি না হলে আইন প্রয়োগ করাও যাবে না। তবে এব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বিধি তৈরিতে দেরির কারণ হিসেবে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি।

৩ মাসের সময়সীমা রাখার অনুরোধ করেছিল অসম সরকার
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০২০ সালে অসম সরকারের তরফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে সিএএ প্রয়োগ করা নিয়ে ৩ মাসের সময়সীমা রাখার দাবি করা হয়েছিল। তা না হলে এই আইন থেকে কেউ উপকৃত হতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করা হয়েছিল।

৩ প্রতিবেশী দেশ থেকে আগতদের নাগরিকত্বের প্রস্তাব
সিএএ-তে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে আসা সেখানকার সংখ্যালঘুদের জন্য নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও অসমের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে সিএএ-র বিরোধিতা করা হয়েছে। কেননা তা ১৯৮৫-র অসম চুক্তিকে লঙ্ঘন করবে। ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধী এবং অসমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহান্তের মধ্যে চুক্তিতে বলা হয়েছিল ১৯৭১-র ২৪ মার্চের পরে বাংলাদেশ থেকে অসমে প্রবেশ করাদের চিহ্নিতকরণ এবং নির্বাসনের কথা বলা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে অসমের এনআইসির যে তালিকা গতবছরের ৩১ অগাস্ট প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে ৩.৪ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে ১৯ লক্ষকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে অসমে এখনও এনআরসি নিয়ে চূড়ান্ত কিছু হয়নি।

সিএএ থেকে বাদ যেসব রাজ্যগুলি
সারা দেশে সিএএ-র কথা বলা হলেও, সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত অসম, মেঘালয়, মনিপুর, ত্রিপুরার উপজাতি এলাকা ছাড়াও উত্তর-পূর্বের অনুরণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং মনিপুরকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার ঠিক আগে ২০১৯-এর ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাশ করানো হয়েছিল সিএএ। পরের দিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর তা রাষ্ট্রপতি সম্মতি পায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয় ২০২০-র ১০ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর করা হবে। মন্ত্রকের তরফে ২০২১-এর ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছিল। পরে সংসদীয় কমিটিকে বিধি নথিভুক্তের জন্য ২০২১-এর ৯ জুলাইয়ের উল্লেখ করা হয়।
কোনও সংসদীয় কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছয়মাস সময়ের মধ্যে যদি কোনও বিধি তৈরি করা না যায় তাহলে সময় বৃদ্ধির উপায় আছে। তবে তার জন্য কারণ উল্লেখ করতে হয়। এই সময় বৃদ্ধি অবশ্য তিনমাসের বেশি হতে পারে না।

ঠিক কতজন উপকৃত হবেন
সিএএ লাগু করলে ঠিক কতজন উপকৃত হবেন, তা নির্দিষ্ট তথ্য অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে নেই। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০১৯-এর ১১ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় বলেছিলেন লক্ষ কোটি মানুষ সিএএ-র জেরে উপকৃত হবেন।