'নিউটন' ছবিটি দেখেছেন কি, তাহলে চিনে নিন বাস্তবজীবনের এই সব নিউটনদের
এবার দেখা মিলল বাস্তবজীবনের এমনই কিছু নিউটনের সঙ্গে। যাঁরা ছত্তিশগঢ়ের মাওবাদী অধ্যুষত এলাকায় ভোট করাতে ময়দানে নেমেছেন। এঁদের সকলেরই ধনুরভাঙ্গা পণ, যে কোনও মূল্যে ভোট করতেই হবে।
আইএসএ-র চাকরি পেয়েই নিউটনকে যেতে হয়েছিল মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ভোট করাতে। পদে পদে বিপদ, যে কোনও মুহূর্তে আইডি মাইন পাতা ফাঁদে প্রাণ খোয়ানোর আশঙ্কা। এমনকী অলক্ষ্য়েই চলে আসতে পারে শরীর লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। আতঙ্কে এই অঞ্চলে মানুষ ভোটই দিতে আসে না। কিন্তু নিউটনের একটাই কথা 'ভোট আমি করাবই এবং ভোটের গ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করব, কোনও চাপের কাছে মাথা নত করব না।'
রিল লাইফের সেই নিউটন ভারতীয় জনমানসে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। এবার দেখা মিলল বাস্তবজীবনের এমনই কিছু নিউটনের সঙ্গে। যাঁরা ছত্তিশগঢ়ের মাওবাদী অধ্যুষত এলাকায় ভোট করাতে ময়দানে নেমেছেন। এঁদের সকলেরই ধনুরভাঙ্গা পণ, যে কোনও মূল্যে ভোট করতেই হবে।
এর জন্য দন্ডকারণ্যের দুর্গম অঞ্চলে এখন ঢুকে পড়েছে বাস্তব-জীবনের এমনই কিছু নিউটন। এরা এমন সব জায়গায় ভোট করাতে গিয়েছেন যেখানে ২০ বছর পর ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এই সব এলাকার অনেক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছনোর সঠিক কোনও রুট ম্যাপও নেই। কিন্তু, এই ভোটকর্মীরা গুগল ম্যাপ দেখে রুট তৈরি করেন। অধিকাংশই ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছেন হেলিকপ্টারের মাধ্যমে, কেউ আবার কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পায়ে হেঁটে, নদী পার করেছেন। বাস্তার জেলার এই পুরো এলাকাটাই নকশাল অধ্যুষিত। সেখানে রাস্তার মাঝে রাত নামায় জঙ্গলের মধ্যেই রাত কাটিয়েছেন।
ভোট নিতে যাওয়া বছর পঁচিশের এমনই এক মহিলা কর্মী জানান তিনি সুকমা জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ঘরে মা ও দুই সন্তানকে রেখে এসেছেন। নকশালদের ডেরায় ঢুকে ভোট নেওয়াটা তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ। এতসব কষ্ট তিনি বাবা ও ভাই-কে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেই করছেন। কারণ তাঁর বাবা ও ভাই সরকারের তৈরি করা 'সালওয়া-জুড়ুম' বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এর জন্য নকশালরা ওই ভোটকর্মীর বাবা ও ভাইকে খুন করেছিল।
'সালওয়া জুড়ুম' আসলে নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি মদতে স্থানীয়দের নিয়ে তৈরি গণ-মিলিশিয়া। কিন্তু ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই বাহিনীকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। সুকমা থেকেই ভোট করাতে নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় পা রেখেছেন বছর বাইশের এই পঞ্চায়েত কর্মী। চিন্তলনারের মতো নকশালি এলাকায় তাঁর ভোটের ডিউটি পড়েছে। তবে, ভয়ডরহীন ভাবেই এই ভোটকর্মী জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি হেলিকপ্টারে চড়লেন। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর গ্রাম থেকে একমাত্র তাঁকেই এই কাজের দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়েছে। কারণ অন্যরা বিবাহিত। নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় ভোট করাতে গিয়ে বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, কিন্তু, তিনি যেহেতু অবিবাহিত তাই, প্রশাসন তাঁকেই ভোটকর্মী হিসাবে বেছে নিয়েছে। ভোটগ্রহণেরক মতো কাজে অংশ নিতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত বোধ করছেন বলেও জানিয়েছেন ওই ভোটকর্মী।
[আরও পড়ুন:বিহারে এনডিএ জোটে দ্বন্দ্ব, বিজেপির সঙ্গ ত্যাগের মুখে জোটসঙ্গী ]
সুকমার কালেক্টর জয় প্রকাশ মৌর্য জানিয়েছেন, ৮০ কিলোমিটার বেশিরভাগ উত্তেজনা-প্রবণ বুথ দ্রোনাপল থেকে জাগারগুণ্ডা এলাকার মধ্যে ৮০ কিলোমিটার এলাকা জুড়়ে। এই সব এলাকায় ভোটকর্মীদের হেলিকপ্টারে চাপিয়ে ২ থেকে ১ দিন আগে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় ভোট করাতে গিয়েছেন বিজাপুরের বছর ৩০-এর এক শিক্ষকও। তাঁর মতে তিনি ভগৎ সিং-কে স্মরণ করেই এই কাজে নেমেছেন। তিনি ভগৎ সিং-কে খুবই শ্রদ্ধা করেন। তাঁর পূর্বপুরুষ স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ নিয়েছিল। তিনি ছাত্রদেরও ভগৎ সিং-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার শিক্ষা দেন। প্রত্যেকেরই দেশের জন্য কিছু করা উচিত। তাই ভোটের মতো কাজে অংশ নিতে পেরে তিনি খুশি। ভগৎ সিং-এর মতোই তিনি কিছু নজির করতে চান।
[আরও পড়ুন: ফের আইইডি বিস্ফোরণ ছত্তিশগড়ে, হেলিকপ্টারে চড়ে কেন্দ্রে পৌঁছলেন ভোটকর্মীরা]
ছত্তিশগঢ়ের বিজাপুরের ৪৩৭টা বুথকে অতি-উত্তেজনা প্রবণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বিজাপুরের কালেক্টর কেবি কুঞ্জাম জানিয়েছেন, ভোট নিয়ে যাওয়া ৮০টি দলকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ৭৬ বুথকে নিরাপদ স্থানে সরানো হলেও, ৪০টি বুথ বিপজ্জনক এলাকায় রয়ে গিয়েছে। বেশকিছু বুথে লাল-কালি দিয়ে নির্বাচন বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভোটকর্মীরা। এই সব এলাকায় ভোটকর্মীদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়েছে বিএসএফ, আইটিবিপি এবং সিআরপিএফ-এর উপরে।
[আরও পড়ুন: ভোট প্রচারে গিয়ে 'বিড়ম্বয়না'য় বাবুল! 'ফাঁকা' চেয়ার দেখে সভা ছাড়লেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী]