'বাঙালি' দেওধরের হাত ধরেই ত্রিপুরায় বাজিমাত মোদী-অমিত শাহদের
ত্রিপুরায় টানা ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছে বিজেপি। এই জয়ের পিছনে যে মানুষটির অবদান বিজেপির কাছে সব থেকে বেশি তিনি হলেন সুনীল দেওধর। ২০১৪-র নভেম্বরে দায়িত্ব পাওয়ার প্রাক্তন এই আরএসএস নেতা ত্রিপুরার জন্য সময় দিয়েছেন প্রতি মাসে অন্তত ১৫ দিন।

২০১৩-তে ত্রিপুরায় বিজেপির ভোটের হার ছিল নগন্য। রাজ্যে বলতে গেলে ছিল না কোনও জনপ্রতিনিধি। সেই জায়গা থেকে ৫ বছর পর বিধানসভা নির্বাচনে ৬০টির মধ্যে থেকে ৪০টির বেশি আসনে জয়। এই অসম্ভবকে যিনি সম্ভব করেছেন, তিনি হলেন, আদতে মুম্বইয়ের বাসিন্দা ৫২ বছরের সুনীল দেওধর। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে রাজ্যে দলের সংগঠনে নির্দিষ্ট রূপ দিয়েছেন তিনি। যা গড়ে তুলেছিলেন একেবারে বুথ লেভেল থেকে। মাসে অন্তত পনেরোটি দিন কাটিয়েছেন উত্তর-পূর্বের এই ছোট রাজ্যে।
বাংলাভাষীদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাই মাস্টার রেখে যত্ন করে বাংলা শিখেছেন আদতে মারাঠি সুনীল দেওধর। আর তিনি যখন ত্রিপুরার দায়িত্ব পেলেন, সেইসময় কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছিলেন নেতা-কর্মীরা। সুনীল দেওধর তাঁদেরই আস্তে আস্তে নিয়ে আসেন বিজেপির ছাতার তলায়।
অন্যদিকে, ত্রিপুরায় ভোট নিয়ন্ত্রক উপজাতি সম্প্রদায়ের সঙ্গেও যোগসূত্র গড়ে তোলেন তিনি। কাজে লাগান আরএসএস-এর বনবাসী সংগঠনকেও। উপজাতির পোশাকে ভারতমাতার কাটআউট তৈরি করে ধর্মনগর-কৈলাশহর-বিলোনিয়ায় প্রচার করেন।
বেঙ্গালুরুতে ম্যানেজমেন্ট পড়তে যাওয়া ত্রিপুরার ছাত্রদের নিয়ে যেমন সভা করেছেন তেমনই ভোটের আগে আইটিবিপির প্রধান রঞ্জিত পচনন্দাকে পর্যবেক্ষক করে ত্রিপুরায় পাঠিয়ে সিপিএমের কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহও করা হয়।
আরএসএস-এ থাকার সময় থেকেই উত্তর পূর্বের প্রতি দুর্বলতা ছিল দেওধরের। ১৯৯১-এ উত্তর পূর্বে কাজ করেন তিনি। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় দলের সংগঠনের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে আরএসএস-এর প্রচারক হিসেবে মেঘালয়ে ৮ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা উত্তর-পূর্বের রাজ্য জয়ে বিশেষ ভাবে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনিই কি ত্রিপুরার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি সরাসরি গুজব বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। দল যদি তাঁকে সেই দায়িত্ব দেয়ও, সেই দায়িত্ব তিনি নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেওধর। তবে দলের সভাপতি অমিত শাহ তাঁর ওপর দায়িত্ব দিয়ে যে বিশ্বাস রেখেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেওধর।
সুনীল দেওধরের অভিযোগ, মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরার সরকার রাজ্যের জন্য কিছুই করেনি। রাজ্যের ৬৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচের রয়েছে। সেই হতাশা থেকেই তাঁদের কাছে আর কোনও বিকল্প ছিল না বলেও দাবি করেছেন দেওধর।
ত্রিপুরায় দায়িত্ব সামলানোর আগে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী ক্ষেত্র বারানসী এবং তারও আগে ২০১৩-তে দিল্লির নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন দেওধর।