মোদীর স্বপ্নের স্বাস্থ্য প্রকল্পে মমতার ধাক্কা, তুড়ি মেরে 'না' বলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
এবারের সাধারণ বাজেটে 'ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিম'-এর ঘোষণা করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এর জন্য কেন্দ্র ৪০% অর্থ রাজ্যগুলিকে দিতে বলছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাস্থ্য প্রকল্পে তীব্র বাক্যবাণ হানলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে ঘোষণাও করে দিলেন কেন্দ্রের এই প্রকল্পে কোনওভাবেই রাজ্য অংশ নেবে না। মমতার এমন ঘোষণায় পশ্চিমবঙ্গ হল প্রথম রাজ্য যারা 'ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিম' থেকে নাম তুলে নিল বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরের সমাবেশে এই কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, যেখানে রাজ্যের নিজস্ব 'স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্প' আছে সেখানে কেন আবার কেন্দ্রের একইরকম প্রকল্পে রাজ্য শরিক হবে। তাই কোনওভাবেই 'ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিম'-এ রাজ্য তার কষ্টার্জিত অর্থ অপচয় করবে না।
এবারের সাধারণ বাজেটে 'ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিম'-এর ঘোষণা করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এর জন্য কেন্দ্র ৪০% অর্থ রাজ্যগুলিকে দিতে বলছে। কিন্তু, রাজ্যের নিজস্ব স্বাস্থ্য প্রকল্প থাকতে কেন একই রকম আরও এক প্রকল্পে টাকা ঢালা হবে?'
নীতি আয়োগের প্রধান অমিতাভ কান্ত জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারে 'এনএইচপিএস'-এর জন্য ৫,৫০০ থেকে ৬,০০০ কোটি টাকা বছরে লাগবে। এর জন্য কেন্দ্র ২,০০০ কোটি টাকা দেবে। বাকি টাকা রাজ্যগুলিকে দিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি যেখানে তাঁর সরকার রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছে। তাই নতুন করে একই রকমের আরও এক প্রকল্পে সংযুক্ত হওয়ার কোনও অর্থ নেই।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের তুলোধনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঋণের সুদের জন্য বছরে ৪৮,০০০ কোটি টাকা নিচ্ছে কেন্দ্র। তারপরও রাজ্য সরকার তার 'স্বাস্থ্য-সাথী' প্রকল্পের আওতায় ৫০ লক্ষ মানুষকে নথিভুক্ত করিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'বেটি-বাঁচাও বেটি পড়াও' প্রকল্পেরও ফের একবার কড়া সমালোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও' প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র সারা দেশে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অথচ , বাংলা কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য ৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এমনকী, 'ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ফিনান্স' বা 'এফআরডিআই' বিল-এর প্রবল সমালোচনা করেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, এই বিল কার্যকর হলে ব্যাঙ্ক সাধারণ মানুষের ফিক্সড-ডিপোজিট তচ্ছরূপ করার সুযোগ পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কের উপর থেকে আস্থা উঠবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ব্যাঙ্কের উপর থেকে মানুষের ভরসা উঠে গেলে বাড়-বাড়ন্ত হবে চিট-ফান্ডগুলির। ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ঠার্জিত অর্থ প্রতারকদের হাতে চলে যাবে। এই বিল যাতে প্রত্যাহার করা হয় তার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস দাবিও জানিয়েছে বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কৃষ্ণনগরের এই সমাবেশস্থল থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'নোট বাতিলের সময় ঘটে জমানো অর্থও বের করে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর জিএসটি এনে ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে অতিরিক্ত অর্থের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার ফিক্সড-ডিপোজিট-এর উপর নজর দিয়েছে। '
দেশে কৃষক-আত্মহত্যা নিয়েও এদিন সরব হন মমতা। কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী নীতির জন্য ১২,০০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের জন্য তাঁর সরকার জমির খাজনা মুকুব করে দিয়েছে। অকাল বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ায় ৩০ লক্ষ কৃষকদের পরিবারের জন্য ১২০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। কৃষকদের পেনশন স্কিমে তাঁর সরকার ২৫০ টাকা করে বরাদ্দ বাড়িয়েছে বলেও দাবি করেন মমতা। সুতরাং, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল প্রার্থীদেরই ভোট দেওয়া উচিত বলেও আবেদন করেন তিনি।