মুর্শিদাবাদের ‘নেমপ্লেট’-এ বদল, অধীরকে হটিয়ে বহরমপুর ছেয়েছে মমতার কাটআউট আর তোরণে
বহরমপুর, ২৭ সেপ্টেম্বর : চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। আজ মুর্শিদাবাদের দিকে আয়না ফেললে সেই প্রতিবিম্বটাই স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ। মাত্র একমাসের মধ্যেই হুবহু বদলে গেল চিত্রটা। যতদূর চোখ যায় কোথাও চোখে পড়ছে না বহরমপুরের রবিন হুডের ছবি, কোথাও নেই একটাও কাট আউট। বে'হাত' নবাব-গড়ে শুধু মমতা আর মমতা। গোটা শহর থেকেই যেন অধীরের নেমপ্লেট উঠে গিয়ে উজ্জ্বল হয়েছে পরিবর্তনের কাণ্ডারির নামটাই।
২০১১-য় রাজ্য পরিবর্তন এসেছিল মমতার হাত ধরে। কিন্তু মুর্শিদাবাদে তিনি দাঁত ফোটাতে পারেননি। এতদিনের চেষ্টায় নিজভূমে পরবাসী করে ছেড়েছেন অধীরকে। পাঁচ বছর পর ২০১৬-য় অবশেষে পরিবর্তন এসেছে অধীর-গড়ে। পরিবর্তনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পরই মমতা পা রেখেছেন মুর্শিদাবাদে। উপলক্ষ প্রশাসনিক বৈঠক হলেও মুখ্যমন্ত্রীর এই আগমন প্রকৃত পক্ষেই নবাব-গড়ে বিজয় দিবস পালন।
আর তার জন্য বেছে নিয়েছেন অধীর চৌধুরীর খাসতালুক বহরমপুরকেই।সেজে উঠেছে বহরমপুর। সেজে উঠেছে গোটা মুর্শিদাবাদ। অধীর চৌধুরীর কাট আউটগুলো হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গিয়েছে রাস্তা থেকে। গোটা শহরজুড়েই ছেয়েছে নীল-সাদা রঙে। আর মোড়ে মোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাট আউট। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত তোরণও নির্মাণ হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে। আজ যে উন্নয়নের ডালি সাজিয়ে মুর্শিদাবাদে আসছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জনতা তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় মমতার মুর্শিদাবাদ-প্যাকেজে কী রয়েছে, এই জেলার উন্নয়নে তিনি কী জাদুকাঠি নিয়ে আসেন, তা জানতে।সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রী ভোটের দিকে তাকিয়ে আজ কল্পতরু হবেন। এতদিন মুর্শিদাবাদের জন্য যা ঘোষণা করেছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি উদারতা দেখাবেন মমতা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এদিন জেলার জন্য ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন তিনি। মোট ১৮১টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উন্নয়ন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ৪০ হাজার সাইকেলও বিলি করবেন তিনি। সোমবার রাতেই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন বহরমপুরে। প্রশাসনিক বৈঠকের পরই মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা করার কথা। এরই ফাঁকে তিনি পরিদর্শনে যেতে পারেন মুর্শিদাবাদ জেলা হাসপাতালে। রাতারাতি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেজে উঠেছে হাসপাতালও। কিছুদিন আগেই আগুন লেগেছিল হাসপাতালে। সেই পোড়া দাগ নিমেষে উধাও। এখন মুখ্যমন্ত্রীর আসার প্রতীক্ষা।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে মুর্শিদাবাদ-তৃণমূল স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, এই জেলা থেকে অচিরেই তারা অধীর নামটা মুছে দিতে পারবেন। কংগ্রেসের হাতে কোনও ক্ষমতাই থাকবে না। সবই হাতছাড়া হয়েছে, রয়ে গিয়েছে শুধু মুর্শিদাবাদ ও কান্দি পুরসভা। দুই পুরসভাই শীঘ্রই তৃণমূলের দখলে আসবে।
পাশাপাশি একটা খটকা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে মুর্শিদাবাদবাসীর মনে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে এইভাবে একটার পর একটা বোর্ড দখল করে কি আদতে পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হয়েছে? সত্যিই কি পরিবর্তন হল নবাব-গড়ে? উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আগামী পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত।