২০২১-এ পুনরুত্থান তৃণমূলের, বাংলার রাজনীতিতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে মমতার নাম
২০২১-এর আয়ু আর কটা দিন। আর কিছু দিনের মধ্যেই ২০২১-এর বিদায় আর ২০২২-এর শুভাগমন ঘটবে। তার আগে এবার ফিরে দেখা ২০২১-কে। কী ঘটল এবার। বাংলার রাজনীতি কোন দিকে আবর্তিত হল ২০২১-এ। সারা বছরের রাজনীতির পর্যালোচনায় যে সার বস্তু উঠে এল, তা হল এই এবার বাংলার রাজনীতিতে জ্বলজ্বল করছে একটাই নাম- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


মমতা একক দক্ষতায় কুপোকাত করে দিয়েছেন মোদী-শাহদের
২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কেরল, তমিলনাডু, অসম ও পুদুচেরির নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সব নির্বাচনকে টেক্কা দিয়ে বাংলার নির্বাচন এবার নজর কেড়েছিল গোটা দেশে। সারা দেশের নজর ছিল বাংলায়। সেই আঙ্গিকে বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূলের জয় হয়েছে। বলা যায় পুনরুত্থান হয়েছে মমতার দলের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একক দক্ষতায় কুপোকাত করে দিয়েছেন মোদী-শাহদের মতো বৃহত্তর শক্তিকে।

২০২১-এ মমতার বঙ্গ-জয় সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে
বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লির রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে আবার। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প মুখ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে এসেছে আবারও। এবং বাংলার নির্বাচনে জেতায় সঙ্গে সঙ্গে সেই দাবি ফের জোরালো হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতিতে। রাজনৈতিক ইতিহাসের দকে তাকালে দেখা যাবে ২০২১-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

বিজেপির সমস্ত পরিকল্পনা নস্যাৎ করে জয় হাসিল তৃণমূলের
২০২১-এ সবথেকে বড় রাজনৈতিক ঘটনাক্রম হিসেবে উঠে আসছে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিধানসভা নির্বাচনে জয়। বাংলায় তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল দিল্লির শাসকদল বিজেপি। এবার তারা বাংলাকে পাখির চোখ করে ভোটযুদ্ধে নেমেছিল। বাংলায় পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঘূঁটি সাজিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপির সমস্ত পরিকল্পনা নস্যাৎ করে ফরে বিজয় হাসিল করে তৃণমূল।

মোদী-শাহরা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেও মমতাকে আটকাতে পারেননি
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার তৈরির যাবতীয় সম্ভাবনা ধূলিসাৎ করে ফের একবার সবুজ ঝড় তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঝড়ে উড়ে যান নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের মতো বড় বড় নামও। পুরো দিল্লিকে উড়িয়ে এনে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এনে মোদী-শাহরা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেও মমতার বিজয়রথ আটকাতে পারেননি।

বাংলার নির্বাচনের কুরুক্ষেত্রে একা কুম্ভ হয়ে ওঠেন মমতা
এবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী যুদ্ধ আদতে কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। তৃণমূলকে ভাঙিয়ে বিজেপি নেমেছিল এই যুদ্ধে জয় পেতে। কিন্তু বাংলার নির্বাচনের কুরুক্ষেত্রে একা কুম্ভ হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির প্রতিটি তির ফালাফালা করে দিয়েছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের মতো অভিজ্ঞ নেতাদের এনেও ফায়দা তুলতে পারেনি বিজেপি।

প্রতিকূলতাকে জয় করে মমতার লড়াই বাংলার নির্বাচনে
বিজেপির হাজারো নামের বিরুদ্ধে একা তৃণমূলের গড় সামলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবুও তাঁর বিরুদ্ধে ধোপে টেকেননি মোদী-শাহরা। এই যুদ্ধে মমতাকে লড়তে হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের ছাড়া। শুভেন্দু-রাজীবরা শত্রুশিবিরে যোগ দিয়ে তৃণমূলের লড়াই কঠিন করে দিয়েছিলেন। তবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা কুম্ভ হয়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ জিতে নিয়েছেন ২০২১-এ।

মমতা-ক্যারিশ্মায় মাত্র ৭৭-এই থমকে যায় বিজেপি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এবারের জয় খবু সহজ ছিল না। বাংলার ভিতরে নির্বাচনী হাওয়া বইছিল বিজেপির পক্ষে। ২০১৬-র নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসনে জিতলেও ২০১৯-এর লোকসভা প্রবল প্রতাপশালী হয়ে দেখা দিয়েছিল বিজেপি। ১৮টি লোকসভা আসনে তাঁরা জয় পেয়েছিলেন। তারপর তৃণমূলকে ভেঙে শক্তি বাড়িয়ে বিজেপি ২০০ আসন জয়ের টার্গেট খাঁড়া করে। কিন্তু মমতা-ক্যারিশ্মায় মাত্র ৭৭-এই থমকে যায় বিজেপি, তৃণমূল জয় হাসিল করে নেয়।

বাংলার মাটিতে রাজনীতি পাশা খেলায় মমতাই সেরা
২০২১-এর নির্বাচন আদতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মোদী-শাহদের লড়াইয়ে রূপান্তরিত হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে ঘরের মাটিতে মমতার জয় হয়েছে। নিরঙ্কুশ প্রাধান্য নিয়ে দিল্লির ভোট ম্যানেজারদের হারিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন- বাংলার মাটিতে রাজনীতি পাশা খেলায় তিনিই সেরা। সেখানে মোদী-শাহদের কোনও স্থান নেই।

দেশের আর কোনও নেতা এই কঠিন কাজ করতে পারেননি
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার বিরাট জয় শুধু বাংলার রাজনীতিতেতেই তাঁর হারানো জমি ফিরিয়ে দেয়নি, তাঁকে ২০২৪-এর আগে দিল্লির রাজনীতিতেও প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি মোদীর বিকল্প মুখ হয়ে উঠেছেন। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী প্রজেক্ট করতেও পিছপা হচ্ছে না তৃণমূল। কারণ তিনিই একমাত্র মোদী-শাহদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছেন। দেশের আর কোনও নেতা এই কঠিন কাজ এত সহজভাবে করতে পারেননি।