'বর'-এর বেশে নয় চিত্রেশ এলেন কফিনবন্দি হয়ে, উঠল 'অমর রহে ধ্বনি', কাঁদল দেহরাদূন, কাঁদল দেশ
বিয়ের ট্রেনটা আর ধরা হল না চিত্রেশের। কর্মস্থল রাজৌরি থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব সাড়ে ছয়শো কিলোমিটারের সামান্য কিছু বেশি।
বিয়ের ট্রেনটা আর ধরা হল না চিত্রেশের। কর্মস্থল রাজৌরি থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব সাড়ে ছয়শো কিলোমিটারের সামান্য কিছু বেশি। গুগুল ম্যাপ বলছে মেরেকেটে কর্মস্থল থেকে চিত্রেশের বাড়ি পৌঁছতে সময় লাগার কথা সাড়ে চোদ্দ ঘণ্টা। কিন্তু, ট্রেনটা যেদিন ধরার কথা ছিল তাঁর আগেই মৃত্যু এসে চিত্রেশকে যে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে তা গোটা দেশই জেনে গিয়েছিল শনিবার। অবশেষে চিত্রেশ-এর কফিনবন্দি দেহটা সোমবার পৌঁছল দেহরাদূনের বাড়িতে। সেনাবাহিনীর শববাহি শকট থেকে কফিনবন্দি দেহটা নামতেই উঠল 'অমর রহে ধ্বনি'।
৭ মার্চ সহপাঠিনী অঙ্কিতার সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা ছিল চিত্রেশের। ২৭ অথবা ২৮ তারিখেই তাঁর বাড়ি চলে আসার কথা ছিল। চিত্রেশের বাবা এসএস বিস্ট সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছেলের ভরসায় না থেকে অধিকাংশ বিয়ের কার্ড আমন্ত্রিতদের মধ্যে বিলিয়েও দিয়েছিলেন। কিছু কার্ড রাখা ছিল যা চিত্রেশের নিজের হাতেই বিলি করার কথা ছিল। ছেলের প্রতীক্ষায় প্রতিটি দিন গুণে গুণে কাটাচ্ছিলেন বিস্ট দম্পতি।
#WATCH Slogans of 'Amar Rahe' raised as people pay last respects to Major Chitresh Singh Bisht in Dehradun. He lost his life on 16 Feb while defusing an IED which was planted by terrorists across the LoC in Rajouri's Naushera sector in J&K. Uttarakhand CM also present. pic.twitter.com/cjD5JYUi1h
— ANI (@ANI) February 18, 2019
এখন শুধুই তাঁদের একরাশ হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস। ১৫ তারিখ থেকেই ছেলের দেহের জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন এসএস বিস্ট। একটা সময় পুলিশবাহিনীতে চাকরি করতেন। স্ত্রী- ঘর সামলানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত থেকেছেন। আর তাঁদের এই ছোট্ট সুখি পরিবারের নয়নের মণি ছিলেন চিত্রেশ। বাল্যকালের বান্ধবী অঙ্কিতার সঙ্গে মহাধুমধাম করে বাগদানও সেরে ফেলেছিলেন চিত্রেশ। এসএস বিস্ট ছেলের বিয়ের জন্য গ্রামের বাড়ি পিপালি-তে গিয়ে প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণও করে এসেছিলেন। কিন্তু সব কিছুই যেন আজ ফিকে হয়ে গিয়েছে এসএস বিস্ট-এর কাছে।
Uttarakhand: Mortal remains of Major Chitresh Singh Bisht being taken for last rites from his residence in Dehradun. He lost his life on 16 Feb while defusing IED planted by terrorists across LoC in Rajouri, J&K. Uttarakhand CM Trivendra Singh Rawat also present. pic.twitter.com/b2u2Prr3yq
— ANI (@ANI) February 18, 2019
সোমবার সকালে চিত্রেশের কফিনটা যখন সেনার শববাহি শকট থেকে নামানো হয় তখন চারিদিকে তিলধারনের জায়গা নেই। এত মানুষের ভিড় তো ৭ তারিখে হওয়ার কথা ছিল! এমনকী মানুষগুলো যখন চিৎকার করে বলে যাচ্ছিলেন 'মেজর চিত্রেশ অমর রহে' তখনও যেন এসএস বিস্ট সত্যটা বুঝতেই পারছিলেন না। ভেবে চলেছেন এ কেমন নিয়তি!
Guard of honour to major chitresh bisht #SaluteToASoldier #MajorChitresh #RIPBraveHearts #ChitreshSinghBisht pic.twitter.com/J1EbxB15c9
— Hemant Matta (@matta_hemant) February 18, 2019
একমাত্র ছেলে-কে হারিয়ে ভেঙেছেন চিত্রেশের বাবা। কিন্তু, দেশের জন্য ছেলের প্রাণ বিসর্জনের গৌরবগাথা কিছুটা হলেও বুকে বল জুগিয়েছে তাঁকে। চিত্রেশকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন সাহসী ও দক্ষ অফিসার হিসাবেই সারাজীবনের মতো মনে রাখতে চান আত্মীয়-স্বজন। শোকে মূহ্যমান তাঁরা-ও। কিন্তু, সকলেই চিন্তুত চিত্রেশের বান্ধবী অঙ্কিতার কথা ভেবে। দেশের জন্য অঙ্কিতার সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্নটাকে এভাবে ছেড়ে চিত্রেশ যে মাঝপথে বিদায় নেবেন তা ভাবতেই পারছেন না অঙ্কিতা। যেন সব-হারানোর শূন্যতা তাঁর চোখে। তবু, হবু স্বামীর বীরগাথা তাঁকেও নাড়া দিয়েছে।
আসলে সেনাদের জীবন-ই এমনই। হুঁইসল বাজিয়ে আসা ট্রেনের পা-দানিতে চিত্রেশ হয়তো পা রাখতে পারলে না। পৌঁছতে পারলেন না বিয়ের মণ্ডপে। কিন্তু, ওপরওয়ালা তো জানে তিনি কতটা ইচ্ছুক ছিলেন সেই ট্রেন আর অঙ্কিতার সঙ্গে দেখা সুখের সময়টাকে ধরতে। এ যেন আরও এক 'ফাইভ হান্ড্রেড মাইলস'! যাতে চিত্রেশের ফেরাটা থেমে গেল সাড়ে ছয়শো কিলোমিটার দূরে।