বাবার শেষকৃত্যে যাওয়ার জন্য মুম্বইবাসী ছেলেকে কলকাতায় যাওয়ার ছাড়পত্র দিল মহারাষ্ট্র সরকার
বাবার শেষকৃত্যে যাওয়ার জন্য মুম্বইবাসী ছেলেকে কলকাতায় যাওয়ার ছাড়পত্র দিল মহারাষ্ট্র সরকার
দেশের মধ্যে মুম্বইয়ে করোনা ভাইরাসের দাপট সব থেকে বেশি দেখা দিয়েছে৷ ২১ দিন গোটা দেশ লকডাউন৷ সরকারি নির্দেশিকা বাড়িতে থাকতে হবে৷ তবেই করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব হবে বলেই মনে করছে সরকার৷ জন ও গণ সচেতনতা বাড়ানোই এখন প্রধান লক্ষ্য৷ একের পর মৃত্যু মিছিলে কাহিল ইতালি, ফ্রান্স, আমেরিকা, স্পেনে। ভারতেও আস্তে আস্তে করোনা থাবা বসাচ্ছে৷ এরই মাঝে মুম্বইয়ের বাসিন্দা অনিন্দ্য রায় বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র পেয়েছেন। কেননা তাঁর বাবা মৃত হয়েছেন৷
বিশেষ ছাড়পত্র দিল মহারাষ্ট্র সরকার
অনিন্দ্য রায়ের বাবা কলকাতার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷ লকডাউনের কারণে ছেলে এতদিন মুম্বইয়ে আটকেছিল৷ মুম্বইয়ের একটি ল ফার্মে কাজ করেন তিনি৷ এই ঘটনায় মহারাষ্ট্র সরকার তাঁকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়েছে৷ এর জন্য অনিন্দ্য রায় বিশেষ ছাড়পত্র পেয়েছেন। ট্রেন, বাস বা বিমান বন্ধ থাকায় নিজের গাড়িতেই ২৩০০ কিমি সফর পার করতে হবে তাঁকে৷ গত বৃহস্পতিবার ৬১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন আনন্দের বাবা। বাবা মৃত্যু শংসাপাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় আর্জি অনিন্দ্যর
২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে মুম্বইয়ের পারেলে থাকতে শুরু করেন অনিন্দ্য। তিনি কলকাতার দমদমের বাসিন্দা। তিনি তিন সপ্তাহের লকডাউনের সব নিয়মই মেনেছেন। এমনকি সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মা কান্তা রায়ের ফোন আসে এবং তিনি বাবার মৃত্যুর খবর ছেলেকে দেন। কিন্তু লকডাউনের সময় যখন গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে রয়েছে এরকম পরিস্থিতিতে তিনি বাবার শেষকৃত্যে কিভাবে যাবেন তা চিন্তায় ফেলে দেয় অনিন্দ্যকে। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ৬১ বছরের আশিষ কুমার রায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কোনও বিকল্প না পেয়ে অবশেষে অনিন্দ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় গোটা ঘটনাটি বর্ণনা করেন এবং মানুষের কাছে আর্জি জানান যে তাঁকে তাঁর বাড়ি যাওয়ার জন্য সাহায্য করা হোক।
লকডাউনের সময় গাড়ি করে মুম্বই থেকে কলকাতা
মুম্বই থেকে কলকাতার দুরত্ব ২,১৫৮.৪ কিমি। অনিন্দ্যকে মহারাষ্ট্র পরিবহন দপ্তরের কমিশন শেখর চান্নের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তিনি শেখর চান্নেকে বাবার মৃত্যুর শংসাপত্র পাঠায় এবং তাঁর সমস্যার সম্পর্কেও জানান। কিছু মিনিটের মধ্যেই চান্নে বিশেষ ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করে দেন অনিন্দ্যকে। যাতে মহারাষ্ট্র থেকে কলকাতা যেতে কোনও সমস্যা না হয়। অনিন্দ্য বলেন, ‘চান্নে আমায় বলেছেন যে গাড়িতে করে মহারাষ্ট্র পেরোতে কোনও সমস্যা আমার হবে না, কিন্তু তিনি ঠিক জানেন না ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা সরকার আমায় গাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে কিনা। কিন্তু মহারাষ্ট্র সরকার যে বিশেষ ছাড়পত্র দিয়ে আমায় সহায়তা করেছে তা এই সঙ্কটের সময় আমি কখনই ভুলব না।'
শুক্রবার রাতেই কলকাতায় পৌঁছাবেন অনিন্দ্য
অনিন্দ্য ও তাঁর বন্ধু বিকাশ ওঝা বুধবার দুপুর তিনটে নাগাদ মুম্বই থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং শুক্রবার সকালে ছত্তিশগড়ে প্রবেশ করেন। সেখানে তাঁদের পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় কিন্তু তাঁদের সমস্যা ও বিশেষ ছাড়পত্র দেখার পর তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়। লকডাউনের কারণে কোনও খাবারের দোকান বা থাকার জায়গাও তাঁরা পাননি। যদিও অনিন্দ্য সফর শুরুর আগে পর্যাপ্ত খাবার ও জল নিয়ে নিয়েছিল গাড়িতে। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে তাঁরা ঝাড়খণ্ডে পৌঁছে যাবে যেখানে তাঁর বন্ধু বিকাশের বাড়ি রয়েছে। সেখানে বিশ্রাম নেওয়ার পর ফের সফর শুরু হবে অনিন্দ্যর। তিনি মনে করছেন শুক্রবার রাতের মধ্যেই তিনি দমদম সংলগ্ন পূর্ব সিঁথি এলাকায় তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যাবেন।