মহারাষ্ট্র সরকার গঠন শুনানি : আদালত কক্ষে রবিবার যা যা হল
শুক্রবার রাত পর্যন্ত সবাই জানত যে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস, এনসিপির সমর্থনে সরকার গঠন করতে চলেছে শিবসেনা। তবে শনিবার সকালে সব কিছু ওলটপালট করে দিয়ে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ।
শুক্রবার রাত পর্যন্ত সবাই জানত যে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস, এনসিপির সমর্থনে সরকার গঠন করতে চলেছে শিবসেনা। তবে শনিবার সকালে সব কিছু ওলটপালট করে দিয়ে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। বিজেপির এই সরকার গঠনকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে শনিবার সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা। এক নজরে দেখে নিন সেই মামলার শুনানিতে আদালত কক্ষে আজ কী কী হল?
কার হয়ে মামলা লড়ছেন জানেন না তুষার মেহতা
আজ সেনা, এনসিপি, কংগ্রেসের আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি শুরু হতেই বিচারপতি ভূষণ আইনজীবীদের নিজেদের পক্ষ জানাতে বলেন। তখন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, তিনি জানেন না তিনি কোন পক্ষের হয়ে শুনানিতে হাজির। তিনি বলেন, "গতকাল সন্ধ্যায় আমার কাছে এই পিটিশনের একটি প্রতিলিপি আসে। আমাকে উদ্দেশ্য করেই সেটি পাঠানো হয়েছিল। আমাকে কোনও নির্দিষ্ট পক্ষএর হয়ে হাজির থাকার কথা বলা হয়নি। তাই আমি সলিসিটর জেনারেল হিসাবেই এখানে উপস্থিত।" এছাড়া তিনি বলেন, "আমি দেখলাম পিটিশনটি সংবিধানের ৩২ নম্বর ধারার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তবে এই ধারাটি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কারণ রাজনৈতিক দলের কোনও মৌলিক অধইকার থআকতে পারে না।"
রবিবার শুনানি হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ বিজেপি আইনজীবীর
এরপর বরিষ্ঠ অ্যাডভোকেট মুকুল রোহতাগি জানান যে তিনি মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধআয়ক ও কয়েকজন নির্দল বিধায়কদের হয়ে শুনানিতে হাজির হয়েছেন। পাশাপাশি রবিবার শুনানির দিন ধার্য করায় তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "রাজ্যে যদি সরকার গঠন হয়ে গিয়ে থাকে তবে রবিবার কোনও শুনানি হওয়া উচিত না। আমি রাজস্থানে ছিলাম। এই শুনানিতে থাকতেই আমাকে আজ সকালে দিল্লি পৌঁছআতে হল।" এরপর তিনি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেন যে এই সংক্রান্ত মামলায় আগে তাদের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়া উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, "কংগ্রেস, এনসিপিং শিবসেনার দাবির প্রসঙ্গ যেখানে আসছে, আমি বিশ্বাস করি ওদের আবেদন নাকচ করে দেওয়া উচিত।"
শিবসেনার হয়ে সওয়াল করেন কপিল সিব্বল
আজ বিরোধীদলগুলির হয়ে আদালতে সওয়াল করেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। আদালতে তিনি বলেন, "মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্টতা পেতে প্রয়োজন ১৪৫টি আসন। সেই ক্ষেত্রে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হবে নির্বাচনের আগে গড়া জোটে। তবে মহারাষ্ট্রে সেই জোট ভেঙে যায়। এখন সেই রাজ্যে সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন পরবর্তী জোটের উপর নির্ভর করা হবে।"
রাজ্যপালের ভূমিকার কড়া প্রতিবাদ
এদিকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের ভূমিকার কড়া প্রতিবাদ জানানো হল সুপ্রিম কোর্টে। এই বিষয়ে কপিল সিব্বল বলেন, "দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করানোর কড়া নিন্দা করছে শিবসেনা, কংগ্রেস ও এনসিপি। শনিবার ভোর ৫টা ৪৭মিনিটে হঠাৎ রাজ্য থেকে তুলে নেওয়া হল রাষ্ট্রপতি শাসন। এরপর ৮টার সময় দুই জনকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল। কিন্তু কোন নথির ভিত্তিতে সেই শপথ গ্রহণ পাঠ করান রাজ্যপাল
'শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের কাছে সংখ্যা রয়েছে'
এরপর শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা রয়েছে দাবি জানিয়ে কপিল বলেন, "মহারাষ্ট্রের জনগণের একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। আমরা বলছি আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা রয়েছে। আমরা আগামূকালই সেটি দেখাতে প্রস্তুত রয়েছি। আমরা দাবি জানাচ্ছি আজকেই ফ্লোর টেস্ট হোক মহারাষ্ট্রে। যদি ফড়নবিশের কাছে সংখ্যা থাকে তা তিনি প্রমাণ করুক। না হলে কালকে আমরা প্রমাণ করব। আমরা এর আগে কর্নাটকেও দেখেছি। সেখানে বিজেপি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ কেরছিল। তাদের কাছে সংখ্যা থাকলেও মহারাষ্ট্রেও তারা সেটা করুক।"
'কী করে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন অজিত?'
এদিকে বিরোধীদের পক্ষে অপর আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, "অজিত পাওয়ার কী করে উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন? এনসিপি ইতিমধ্যেই অজিত পাওয়ারকে পরিষদীয় দলনেতা পদ থেকে অপসারিত করেছে।"
এত দিন কী করছিল সেনা-এনসিপি, প্রশ্ন রোহতাগির
এদিকে কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভির যুক্তির পাল্টা যুক্তি দিতে গিয়ে বিজেপির তরফের আইনজীবী মুকুল রোহতাগি বলেন, "ফলপ্রকাশের পর এতদিন হয়ে গেলেও এনসিপি-শিবসেনা সরকার গঠন করেনি কেন? একদিকে আপনারা বলছেন যে জনগণ সরকার চাইছে। আবার অন্যদিকে বলছএন সরকার গঠন করা ভুল। আপনারা এতদিনে কিছুই করলেন না। রাজ্যপালকে বিধআয়কদের সমর্থনের বিষয়ে নিশঅচিত করা হয়েছিল। তাই তিনি সরকার গঠনের জন্য অনুমোদন দেন।"
'রাজ্যপালের পদক্ষেপকে প্রশ্ন করা যায় না'
পাশাপাশি রাজ্যপালের কোনও পদক্ষেপকে আদালতে প্রশ্ন করা যায় না বলেও জানান রোহতাগি। তিনি বলেন, "ভারতীয় সংবিধআনের ৩৬১ নম্বর ধারাতে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে যে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল কোনও আদালতের সামনেই জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। রাজ্যপালের পদক্ষেপকে আইনি প্রক্রিয়া থেকে সুরক্ষা দেওয়া হয় শমশের সিংয়ের মামলায়।"
তিন বাচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্র, অজিত ও ফড়নবিশকে নোটিশ ইস্যু করল
এরপর আদালত আজকের মতো মুলতুবি করে দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয় আজকেই নয় মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ফ্লোর টেস্ট। শীর্ষ আদালতের ৩ সদস্যের বেঞ্চ কেন্দ্র, মহারাষ্ট্র সরকার, দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ারের কাছে নোটিশ ইস্যু করেছে। তবে বিরোধীদের দাবি মতো এই মুহূর্তেই ফ্লোর টেস্টের রায় দেয়নি আদালত। এদিকে মহারাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়ার বিষয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে রাষ্ট্রপতিকে লেখা রাজ্যপালের চিঠি চেয়েছে শীর্ষ আদালত। সোমবার ১০টা ৩০ মানিটের মধ্যে তা জমা দিতে বলা হয়। সেই সময় এই আবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী শুনানি হবে। বিচারপতি রামান্না বলেন, ফ্লোর টেস্টটির বিষয় খতিয়ে দেখবে বেঞ্চ। সোমবার এই বিষয়ে রায়দান করতে পারে শীর্ষ আদালত।
বাল ঠাকরের উত্তরাধিকারকেই আঘাত! পর্বতের নিচে শিবসেনা, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মন্তব্যে জল্পনা