এম করুণানিধি - রাজনীতিবিদ, চিত্রনাট্যকার, সাহিত্যিক ও আরও অনেক কিছু
গত ৫০ বছর ধরে একটানা ডিএমকে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এম করুণানিধি। ১৯৬৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পাঁচবার মুখ্যমন্ত্রিত্ব করেছেন তামিলনাড়ুর। অত্যন্ত অল্প বয়স থেকেই সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন এই প্রবাদপ্রতীম তামিল নেতা। দ্রাবিড়িয় আন্দোলনের প্রথম ছাত্র সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল তাঁর হাত ধরেই।
তবে শুধু রাজনীতি নয়, শিল্প সংস্কৃতি জগতেও ছিল তাঁর সমান যাতায়াত। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তামিল চলচ্চিত্র্র চিত্রনাট্যকার হিসেবে। পরবর্তীকালে সিনেমাকেই হাতিয়ার করেন দ্রাবিড়িয় আন্দোলনকে তুলে ধরতে। পাশাপাশি তামিল সাহিত্য জগতেও তাঁর অবদান রয়েছে। বেশ কিছু ছোট ও বড় গল্প রচনার সঙ্গে রয়েছে তাঁর ১১ খন্ডে লেখা আত্মজীবনী।

প্রথম জীবন
১৯২৪ সালে তামিলনাড়ুর নাগাপত্তিনম জেলার তিরুক্কুভালাই গ্রামে জন্মগ্রহন করেন মুথুভেল করুণানিধি। স্কুলজীবন থেকেই নাটক, কবিতা, সাহিত্যে ঝোঁক ছিল তাঁর। কিন্তু তা পাল্টে যায় ন্যায়বিচার পার্টির নেতা আঝাগিরিসামির ভাষণ শুনে। তিনিই দ্রাবিড়িয় আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেন ছাত্রদের মধ্যে।

চিত্রনাট্যকার করুণানিধি
২০ বছর বয়সে তিনি চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তামিল চলচিত্র শিল্পে। তাঁর লেখা প্রথম ফিল্ম হল রাজকুমারি। যাতে অভিনয় করেনন এম জি রামাচন্দ্রন। এই সময় থেকেই রামাচন্দ্রনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুতা গড়ে উঠেছিল, যা পড়ে পাল্টে যায় তিক্ততায়। চিত্রনাট্যকার হিসেবে তিনি সবচেয়ে সাড়া ফেলেছিলেন পরাশক্তি ফিল্মে। এই চিত্রনাট্য়ে তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে দ্রাবিড়িয় আন্দোলনকে তুলে আনেন। পরবর্তীকালে রাজনীতিতেই বেশি জড়িতে থাকলেও সমানতালে ২০১১ সাল পর্যন্ত চালিয়ে গিয়েছেন চিত্রনাট্য রচনা।

সাহিত্যিক করুণানিধি
কবিতা, পত্রসাহিত্য, চিত্রনাট্য, উপন্যাস, জীবনী, ঐতিহাসিক উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত - সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রয়েছে এম করুণানিধির। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্তগুলির মধ্যে অন্যতম সাঙ্গা থামিঝ, থিরুক্কুরাল উরাই, পোন্নার শঙ্কর, রামাপুরি পান্ডিয়ান, থেনপান্ডি সিঙ্গম ইত্যাদি। এরসঙ্গে রয়েছে মনিমগুদম, ওরে রথম, পালানিয়াপ্পান, সিলাপ্পদিকরম-এর মতো বেশকিছু জনপ্রিয় নাটক।

রাজনীতিতে প্রবেশ
১৪ বছর বয়স থেকেই সামাজিক আন্দেলনে জড়িয়ে পড়লেও এম করুণানিধি প্রচারের আলোয় আসেন কাল্লাকুড়ি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এই শিল্পনগরীর আসল নাম কাল্লাকুড়ি হলেও একটি সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের পর নগরীর নাম পাল্টে ডালমিয়াপুরম করা হয়েছিল। এই নামবদলের প্রতিবাদে করুণানিধি তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে রেলস্টেশনের বোর্ডে ডালমিয়াপুরম নাম ঢেকে দিয়েছিলেন, এবং রেল লাইনের উপর শুয়ে অবরোধ করেন। দুই বিক্ষোভকারী ওই ঘটনায় মারা যান, এবং করুণানিধিকে গ্রেফতার করা হয়।

ক্ষমতার অলিন্দে
১৯৫৭ সালে ৩৩ বছর বয়সেই কুলিথালাই কেন্দ্র থেকে জিতে তামিলনাড়ু বিধানসভায় প্রথম পা রেখেছিলেন করুণানিধি। ১৯৬১ সালে তিনি ডিএমকের ট্রেজারার হন। ৬২-তে হন বিরোধী দলনেতা। ১৯৬৭-তে ডিএমকে ক্ষমতায় এলে করুণানিধিকে পাবলিক ওয়ার্ক মিনিস্টার করা হয়। ১৯৬৯ সালে আন্নাদুরাইয়ের মৃত্যুর পর করুণানিধি প্রথমবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন। তারপর থেকে ক্ষেপে ক্ষেপে আরও ৪ বার এই পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

বিতর্কে করুণানিধি
বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ইন্দিরা গান্ধীর কেন্দ্রীয় সরকার একবার এই অভিযোগে করুণানিধির নেতৃত্বাধীন সরকারও ফেলে দিয়েছিল। ২০০১-এ অপর এক দুর্নাতির মামলায় গ্রেফতারও হয়েছিলেন। রামসেতু নিয়ে বিতর্কে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, 'রাম কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করেছিলেন?' যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। এমনকী, জঙ্গিগোষ্ঠী এলটিটিই-কে মদত দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এছাড়া দলের একাংশেরও তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ রয়েছে।