ঘুষের ৫০ লক্ষ টাকা বাড়িতে, ঘুষ নেন কেন? লখনৌ ইঞ্জিনিয়ারের যুক্তি শুনলে ঘাবড়ে যাবেন
নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, ঘুষ নিয়ে তিনি লজ্জিত নন। বরং কমিশন নেওয়া আবশ্যক বলেই মত তার।
লখনৌ, ২৩ নভেম্বর : ৮ নভেম্বর সন্ধেবেলায় নিয়ম মেনে ধ্যানে বসেছিলেন লখনৌয়ের এক সরকারি ইঞ্জিনিয়ার। এমনটা তিনি নিয়মিতই করে থাকেন। হঠাৎই ফোন এল এক সহকর্মীর। অপর প্রান্তে ভয় মিশ্রিত গলা শুধু বলল, 'টিভিটা খুলে দেখ একবার'।
ঘুষ চাই! বাড়তি আবদার, দিতে হবে ১০০ টাকার নোট, গ্রেফতার সরকারি কর্মচারী
গুজরাতে নতুন ২ হাজার টাকার নোট দিয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকা ঘুষ!
কাট টু। প্রধানমন্ত্রী তখন টিভিতে ভাষণ দিচ্ছেন। ততক্ষণে জানিয়ে দিয়েছেন যে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ৫০০ ও ১ হাজারের নোট বাতিল হতে চলেছে। অর্থাৎ বুধবার সকাল থেকে এই নোটগুলি অচল হয়ে গেল।
কালো টাকা ও দুর্নীতি রোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বহু মানুষ করের টাকা ফাঁকি দিয়ে ও নানা অসৎ উপায় অবলম্বন করে টাকা জমিয়েছে। সেই টাকা উদ্ধারে কড়া পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। আর তার ফলেই সেই ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে রাখা প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা একলপ্তে বাতিল হয়ে গিয়েছে।
সুইস ব্যাঙ্কে কারা জমিয়েছে কালো টাকা? এবার সেই তথ্য হাতে পেতে চলেছে কেন্দ্র
#NoteBan নিয়ে জনতার মত চাইলেন প্রধানমন্ত্রী, জানাতে পারবেন এই অ্যাপের মাধ্যমে
তবে দমে না গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার পাল্টা তোপ দেগেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। বলেছেন, প্রথম কয়েক মিনিট তিনি বুঝতে পারেননি কি হচ্ছে। তাঁর যুক্তি, সকলেই ঘুষ নেয়। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা সকলেই ঘুষ নেন। সরকারি জায়গায় এটাই নিয়ম।
উল্টে ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, সকলে এই ঘটনায় বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে। সরকার তাদের প্রতারিত করেছে বলেও মনে করছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এই ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ার।
নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, ঘুষ নিয়ে তিনি লজ্জিত নন। বরং কমিশন নেওয়া আবশ্যক বলেই মত তার।
কেন এমন বলছেন তিনি? তাঁর মতে, প্রতি দিওয়ালিতে বা উৎসবের সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এমনকী তাদের বাড়ির লোকদেরও দামী উপহার উপঢৌকন হিসাবে দিতে হয়। সেই টাকা না দিলে কার্যোদ্ধার হয় না। সেই টাকা আমি কোথা থেকে দেব? আমার মাইনের টাকা থেকে? কখনওই নয়। রীতিমতো গর্জে উঠেছেন তিনি।
ভারতে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘুষ নেওয়া নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপর তলা থেকে নীচতলা, সরকারি অফিসে কাজ হাসিল করতে গেলে সকলেই ঘুষ নেন। অনেকে বলছেন, জীবনে সবচেয়ে সুন্দর জিনিসটিকে পাওয়ার ইচ্ছে থেকেই সাধারণত সকলে ঘুষ নেন। আর তারপর তা বাড়তে বাড়তে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
অনেকে বলছেন, আমলারা কম পড়াশোনা জানা মন্ত্রীদের নিজের হাতে ধরে ঘুষ নিতে শেখান। আর পুরোটাই করেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে। আর এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে ঘুষের কারবার। আর সেটাতেই কুঠারাঘাত করেছে কেন্দ্র। এখন দেখার, পুরনো নোট বাতিল হলেও ঘুষের নেশা সরকারি কর্মীরা ছাড়তে পারে কিনা।