কর্তব্য ছেড়ে মায়ের শেষকৃত্যে যেতে পারেননি, ভিডিও কলের মাধ্যমেই বিদায়যাত্রা দেখলেন এই নার্স
কর্তব্য ছেড়ে মায়ের শেষকৃত্যে যেতে পারেননি, ভিডিও কলের মাধ্যমেই বিদায়যাত্রা দেখলেন এই নার্স
দেশ এখন আক্রান্ত মহামারি করোনা ভাইরাসে। এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সামনে এগিয়ে এসেছেন চিকিৎসক–নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা দিনরাত এক করে দিয়ে লড়ে চলেছেন এই কঠিন লড়াই। অধিকাংশ চিকিৎসক–নার্সরাই এই মারণ রোগের চিকিৎসায় রত থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে যেতে পারছেন না, প্রিয়জনদের দেখতে পারছেন না। তেমনি একজন যোদ্ধা হলেন রাজস্থানের জয়পুরের এসএমএস হাসপাতালে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)–এর দায়িত্বে থাকা রামামূর্তি মিনা। তিনি হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এতটাই মগ্ন যে তিনি তাঁর মায়ের শেষকৃত্যেও গেলেন না। কিন্তু ভিডিও কলের মাধ্যমে মায়ের শেষ যাত্রা দেখলেন।
কর্তব্য আগে, প্রমাণ করলেন রামামূর্তি
রামামূর্তির মা ভোলি দেবী ৩০ মার্চ মারা যান, তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। কিন্তু কর্তব্যবের চেয়ে বড় কিছু নেই, তাই রামামূর্তিকে চলে যেতে হয় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে। তাই চোখের জলকে চেপে রেখে তিনি ক্রমাগত পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন রোগীদের এবং মায়ের শেষকৃত্য করলেন তাঁর ভাই। প্রসঙ্গত রাজ্যের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল এই এসএমএস। এখানেই প্রথমদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতালিয়াল পর্যটকরা ভর্তি হয়েছিলেন ও পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
করোনা রোগীদের সেবায় নার্স
রামামূর্তি বলেন, ‘আমার মা মারা গিয়েছেন কিন্তু আমার মনে হয়েছে যাঁরা এখনও বেঁচে রয়েছেন এবং জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন এই সময় তাঁদের আমাকে বেশি দরকার।' তিনি আরও বলেন, ‘আমি রোগীদের এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। আমরা সকলে একসঙ্গে মিলেমিশে এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমার স্ত্রী এবং সন্তানরা আমাদের আদি গ্রাম কারাউলি জেলায় রয়েছেন। আমার তিন ভাই এবং বাবা আমায় সমর্থন করে জানিয়েছেন শোকপ্রকাশ নয় বরং করোনা রোগীদের সেবা করো। এটাই আমায় প্রেরণা জুগিয়েছে ক্রমাগত কাজ করার।' সহকর্মী নার্সরা রামামূর্তির প্রতিশ্রুতি বোধের প্রশংসা করেছিল।
রাজস্থানের গর্ব রামামূর্তি মিনা
অল রাজস্থান নার্সিং সংগঠনের সভাপতি রাজেন্দ্র রানা বলেন, ‘কাজের প্রতি নিষ্ঠার এটি একটি অনন্য নজির। যদি রামামূর্তি মায়ের শেষকৃত্যে যেতে চাইতেন, তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে সহায়কা করত যাওয়ার জন্য, কিন্তু তিনি আইসিইউ ছাড়েননি কারণ সেখানে অনেক গুরুতর রোগী ভর্তি রয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক যে এই সময় তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারলেন না কিন্তু তিনি দেশের সব স্বাস্থ্য পেশার সঙ্গে যুক্ত সকলের কাছে আর্দশ হয়ে উঠলেন। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্বিত।'
রাজস্থানে সুস্থ ৪০ জন
বৃহস্পতিবারও রাজস্থানে ২৭টি নতুন কেস ধরা পড়েছে, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৩২৮ জন। এর মধ্যে ১০৩টি জয়পুরের এবং অনেকেই ভর্তি রয়েছেন এসএমএস হাসপাতালে। রামামূর্তির মতো মানুষদের সেবার কারণে ৪০ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।