লকডাউন–স্কুল বন্ধ, নতুন উপায়ে পড়ুয়াদের পড়ানোর কৌশল বের করলেন দেশের শিক্ষকরা
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ দেশের আমূল পরিবর্তন এনেছে। লকডাউন যেখানে মানুষের জীবন একেবারে স্তব্ধ করে দিয়েছিল সেখানে পড়াশোনা ও শিক্ষা ব্যবস্থাও প্রায় ব্যহত হয়ে গিয়েছিল। তবে মাটির দেওয়ালকে ব্ল্যাকবোর্ডে পরিণত করা থেকে শুরু করে চলন্ত গাড়িতে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া, মহল্লা ক্লাস থেকে পঞ্চায়েত ভবনে গণ ঘোষণা, ২০২০ সালে শিক্ষা ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়লেও এবং বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষক–শিক্ষিকাদের বহু সংগ্রাম ও উদ্ভাবনী চিন্তা বের করতে হয়েছে পড়াশোনা চালু রাখার জন্য। ১০ মাসের দীর্ঘ লকডাউনে শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার পড়ুয়াদের অভিনব কায়দায় শিক্ষা দান করেছেন, কারণ তাঁদের অনলাইনে ক্লাস করার মতো স্মার্টফোন ছিল না।

ঝাড়খণ্ড
ঝাড়খণ্ডের দুমার্থার গ্রামের দুমকাতে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা পড়ুয়াদের নতুন উপায়ে শিক্ষাদান করেছেন, যে সব পড়ুয়াদের স্মার্টফোন নেই। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে পড়ুয়াদের বাড়ির মাটির দেওয়ালকে ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে শিক্ষাদান করছেন। দুমার্থার স্কুলের শিক্ষক তপন কুমার বলেন, ‘শিক্ষা আপনার দরজায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম আমরা সেই সব শিশুদের জন্য যাদের কাছে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট উপলব্ধ নয়। একশোরও বেশি ব্ল্যাকবোর্ড তৈরি করা হয় পড়ুয়াদের বাড়িতে।'

সিকিম
সিকিমের রাবাংলার গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক ইন্দ্র মুখি ছেত্রী প্রতিদিন বিভিন্ন পড়ুয়াদের বাড়ি যান তাদের পড়াতে। তিনি এরকম অসহায় ৪০টি পড়ুয়ার বাড়ি সনাক্ত করে, যারা প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে এবং তাদের পড়াতে যান তিনি। শিক্ষিকা বলেন, ‘আমি যদি অনলাইন ক্লাস করি, তবে ওই পড়ু্য়াদের কাছে না আছে স্মার্টফোন আর না আছে ইন্টারনেট। অনেকের কাছে তা থাকলেও আমি সমতা বজায় রাখব কি করে, অন্যরা বঞ্চিত হবে। তাই আমি সপ্তাহে প্রত্যেক পড়ুয়াদের সঙ্গে ২০ মিনিট করে কাটাই। আমি তাদের খাতা নিয়ে আসি এবং তাদের জন্য পড়া লিখে দিই, যা তারা এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে ফেলে। আমি অভিভাবকদেরও বলি কি করা প্রয়োজন।'

গুজরাত
গুজরাতের জানান গ্রামের ঘনশ্যামভাই এক অভিনব কায়দা বের করলেন পড়ুয়াদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তিনি গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে গণ ঘোষণা পদ্ধতির মাধ্যমে গল্প, গান, লকডাউনের সময় শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকদের আচরণের নির্দেশিকা, শরীর চর্চার প্রয়োজন সহ আরও অনেক কিছু লাউডস্পিকারে ঘোষণা করে বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি পঞ্চায়েত ভবনে থাকলেই এই ঘোষণাগুলি করি, যাতে পড়ুয়া বা অভিভাবক স্পষ্ট আমার কথা শুনতে পায় এবং কোনও সন্দেহ না রাখে এবং আমার সঙ্গে কথোপকথনও করতে পারেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে।'

ছত্তিশগড়
ছত্তিশগড়ের যে সব এলাকায় সংক্রমণের হার কম সেই সব জায়গায় শিক্ষকরা মহল্লা (পাড়া) ক্লাস শুরু করেন। এক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা ছোট করে ক্লাসরুম গড়েছিলাম, ছোট ছোট পড়ুয়াদের দল নিয়ে। প্রত্যেকটি ক্লাসে শিক্ষকরা দু'ঘণ্টা করে সময় দেবেন, কমপক্ষে সপ্তাহে দু'দিন।' ছত্তিশগড়ের আরও এক শিক্ষক রুদ্র রানা তাঁর বাইকে করে এসে ক্লাস নেন। তিনি বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকার দরুণ পড়ুয়াদের পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। তাই আমি চিন্তা করলাম তাদের কাছে বরং স্কুলকে নিয়ে আসি। স্কুল অনবরত বন্ধ থাকার জন্য গ্রামের অনেক পড়ুয়াই অনলাইনে ক্লাস করতে পারছেন না। আমি পোর্টেবল ছাতা ও চক-বোর্ড নিয়ে যাই যখন গ্রামে পড়াতে যাই।'

হরিয়ানা
হরিয়ানাতেও দারুণ এক উপায়ে পড়ুয়াদের শিক্ষাদান করা হয়েছে। কানওয়ারসিকা গ্রামে সকালের বেলের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে স্কুল শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে তা কোনও স্থানীয় স্কুল নয়, বরং একটি ভ্যান, যার সঙ্গে রয়েছে একটি লাউডস্পিকার। নুহ জেলার সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা নুর বানো বলেন, ‘পড়ুয়ারা বাড়িতেই প্রস্তুত হয়ে থাকে এবং গাড়িটি গ্রামের রাস্তায় ঘোরে। প্রথমে গাড়িতে স্কুলের প্রার্থনা হয় এবং এরপর প্রত্যেকদিন একটা করে বিষয় পড়ানো হয়।' নতুন এই অভ্যাস হরিয়ানার জামরি গ্রামের পড়ুয়াদের পাঠ্যবই খুলতে সহায়তা করে যখনই গাড়িটি তাদের বাড়ির কাছে আসে। স্কুল এই লকডাউনের সময় বন্ধ থাকার কারণে এবং ডিজিটাল পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্ত্বেও হরিয়ানার পড়ুয়ারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়নি।

বিদ্যুতের খরচ কমেছে গঙ্গাসাগর মেলার, দাবি শোভনদেবের