রাম মন্দিরের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এঁরাই, তবুও অযোধ্যার ভূমিপুজোয় থাকছেন না আডবাণীরা!
বুধবার, অর্থাৎ, ৫ অগাস্ট রাম মন্দিরের ভূমিপুজোয় উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৭০ বছর ধরে চলা অযোধ্যার জমি জটের নিষ্পত্তি হয় গত বছরের ৯ নভেম্বর। সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের রায়ের পর সুগম হয় রাম মন্দির তৈরির রাস্তা। এই রাম মন্দির তৈরির আন্দোলনে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
রাম মন্দির আন্দোলনের এই ইতিহাস অনেক পুরানো
রাম মন্দির তৈরির এই ইতিহাস অনেক পুরানো। ১৯৫০ সালে 'আস্থান জন্মভূমি'-তে যে মূর্তিগুলি রয়েছে সেগুলি পুজো করার অধিকারের জন্য আদালতে আবেদন করেন গোপাল সিং বিশারদ। গোপাল সিং বিশারদ ১৯৮৬ সালে মারা যান। এরপর আইনি যুদ্ধ চালিয়ে যান তাঁর ছেলে রাজেন্দ্র সিং।
আইনি লড়াইয়ে ঢুকে পড়ে নির্মোহী আখড়া
মাঝে ১৯৫৯ সালে এই আইনি লড়াইয়ে ঢুকে পড়ে নির্মোহী আখড়া। ওই জমির অধিকারের দাবিতে আবেদন করে নির্মোহী আখড়া। ভগবান রামের জন্মভূমি বলে বিশ্বাস ওই জমির রক্ষক বলে নিজেদের দাবি রাখে তারা। নির্মোহী আখড়ার সরপঞ্চ মহন্ত ভাস্কর দাস ছিলেন এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। তিনি বেশ কয়েক বছর মামলায় নির্মোহী আখড়ার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
আসরে নামে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
এরইমধ্যে আসরে নামে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অযোধ্যার ওই জমিতে রাম মন্দির তৈরির দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে তারা। ১৯৮৪ সালে এই আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি অশোক সিংঘল। রাম মন্দির তৈরির আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ মনে করা হয় তাঁকে। এছাড়া আন্দোলনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন মহন্ত অবৈদ্যনাথ। তিনি শ্রী রাম জন্মভূমি মুক্তি যজ্ঞ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বজরং দলের প্রতিষ্ঠা করেন বিনয় কাটিয়াল
বজরং দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ালও সমর্থন করেছিলেন রাম জন্মভূমি আন্দোলনে। এই কাজ সম্পন্ন করতে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে নতুন করে আবেদন জমা করেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাপতি দেবকি নন্দন আগরওয়াল। ওই জমি ভগবান রামের নামে করে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়।
লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা
১৯৮৯ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অযোধ্যায় রাম মন্দিরের শিলান্যাস করে। তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণী গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু করেন। ওই রথযাত্রা অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির জন্য অনুগামীদের আবেগকে অনেকটাই বাড়িয়েছিল।
আডবাণী ও মুরলি মনোহর যোশীরর নেতৃত্ব
মূলত লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলি মনোহর যোশীরর নেতৃত্বেই গতি পেয়েছিল রাম মন্দির তৈরির আন্দোলন। অনুগামীদের উদ্বুদ্ধ করতে দেশজুড়ে রথযাত্রার ধারণা এনেছিলেন তাঁরা। ১৯৯১ সালে বিজেপি সভাপতি পদের দায়িত্বে আসেন মুরলি মনোহর। সেই সময়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন এই আন্দোলনে। বিজেপি নেতাদের আয়োজনে এই রথযাত্রা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও সংঘ পরিবারের সমর্থনও পেয়েছিল।
উমা ভারতীও ছিলেন অন্যতম প্রধান মুখ
১৯৯১ সালের ২৪ জুন থেকে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিং। তিনি ওই জমির ২.৭৭ একর অধিগ্রহণ করেন। তিনি ওই জমিতে রাম মন্দির তৈরির জন্য শপথ নিয়েছিলেন। শিবসেনার প্রধান বাল ঠাকরেও রাম মন্দির আন্দোলনের একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন। অনেক আগে থেকেই তিনি এর সমর্থন করছিলেন। বর্ষীয়ান বিজেপি নেত্রী উমা ভারতীও ছিলেন অন্যতম প্রধান মুখ। তাঁর ভাষণে রাম মন্দির তৈরির আন্দোলনে বাড়তি গতি এসেছিল। দ্রুত তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সংঘ পরিবারের নেতাদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন।
ভূমিপুজোয় নেই স্বপ্ন দেখানো মানুষরা
তবে এই দীর্ঘ আন্দোলন, মামলার পর বুধবার শেষ পর্যন্ত যখন রাম জন্মভূমি মন্দিরের ভিত্তপ্রস্তর স্থাপন হবে, তখন সোনে থাকবেন না এরা কেউ। বয়সের কারণে অনুষ্ঠানে থাকবেন না মুরলি মনোহর ও কল্যাণ সিং। আডবাণীকেও বয়সের কারণে বা রাজনৈতিক কারণেই ডাকা হয়নি অনুষ্ঠান স্থলে। হয়ত ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি পুজো দেখতে পারবেন। উমা ভারতীও ভূমি পুজোর সময় অনুষ্ঠানস্থলে থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।