২৮ বছরের দীর্ঘ প্রতিক্ষা, শেষ পর্যন্ত বাবরি মামলায় শাপমুক্ত লৌহপুরুষ লালকৃষ্ণ আডবাণী!
১৯৯০ সালে তাঁর সেই রথযাত্রার যেন স্বার্থক পরিসমাপ্তি। আজ তাঁর লৌহ পৌরষত্বে যেন কোথাও একটা মরচে পড়ে গিয়েছে। রাম মন্দিরের ঐতিহাসিক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। এমনকি ২৮ বছর ধরে তাঁর গায়ে লেগে থাকা কলঙ্ক মোচনের দিনেও আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তাও শেষমেষ শাপমুক্তি হল লালকৃষ্ণ আডবাণী।
তাঁর রথযাত্রা ঘিরেই রক্ত ঝড়েছিল
১৯৯০ সালে তাঁর রথযাত্রা ঘিরেই রক্ত ঝড়েছিল। কর সেবকদের সেই মৃত্যু যেন গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতির দৃঢ়তা আরও বাডিয়ে দিয়েছিল। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলি মনোহর জোশিদের নেতৃত্বে হাজার করসেবকরা পৌঁছেছিলেন অযোধ্যা। সেই দিনের ২৮ বছর পর আজ আদালতের রায়তে বলা হল, বাবরি মসজিদ ধ্বংস পূর্ব-পরিকল্পিত ছিল না। আর বেকসুর খালাস হতেই ২৮ বছরের কলঙ্কের দাগ মুছতে সক্ষম হলেন আডবাণী।
বিজেপি রাম মন্দির নিয়ে নির্বাচনী লড়াই শুরু করেছিল
অটলবিহারী বাজপেয়ী ক্ষমতায় আসার আগে থাকতেই বিজেপি রাম মন্দির নিয়ে নির্বাচনী লড়াই শুরু করেছিল। সে সময় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কে অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তাহারে৷ গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা করেছিলেন আডবাণী।
আডবাণীর নেতৃত্বেই গতি পেয়েছিল রাম মন্দির তৈরির আন্দোলন
১৯৮৯ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অযোধ্যায় রাম মন্দিরের শিলান্যাস করে। তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণী গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু করেন। ওই রথযাত্রা অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির জন্য অনুগামীদের আবেগকে অনেকটাই বাড়িয়েছিল। মূলত লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলি মনোহর যোশীর নেতৃত্বেই গতি পেয়েছিল রাম মন্দির তৈরির আন্দোলন।
দেশজুড়ে রথযাত্রার ধারণা এনেছিলেন তাঁরা
অনুগামীদের উদ্বুদ্ধ করতে দেশজুড়ে রথযাত্রার ধারণা এনেছিলেন তাঁরা। ১৯৯১ সালে বিজেপি সভাপতি পদের দায়িত্বে আসেন মুরলি মনোহর যোশী। সেইসময়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন এই আন্দোলনে। বিজেপি নেতাদের আয়োজনে এই রথযাত্রা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও সংঘ পরিবারের সমর্থনও পেয়েছিল।
১৯৯২ সালে ভাঙা হয় বাবরি মসজিদ
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকরা বাবরি মসজিদ কাঠামোটি ভেঙে ফেলেন। তাঁদের দাবি, এই জায়গাটিতে রাম জন্মভূমি ছিল। প্রাচীন মন্দির ধ্বংস করার পর সেখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তাঁরা। অভিযোগ, এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপি নেতা এম এম যোশী, উমা ভারতী এবং বিনয় কাটিয়ার।
বিজেপি-র উত্থান ঘটিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী
এই মামলার হাত ধরেই মোটামুটি বিজেপি-র উত্থান ঘটিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে যাওয়ার পরে ১৯৯৬-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ইস্তাহারে প্রথম রামমন্দিরের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিটি নির্বাচনের ইস্তেহারেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি।
শাপমুক্ত আডবাণী
হয়ত এখনকার জমানাতে বা বর্তমান রাজনীতিতে আডবাণীর সেই প্রাসঙ্গিকতা আর নেই। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে আসেন আডবাণী। সংসদীয় রাজনীতিতে ধীরে ধীরে হয়ে পড়েন অপ্রাসঙ্গিক। তবে আজ বাবরি ধ্বংস মামলার রায় প্রকাশ হতেই পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া এই রাজনীতিবিদ শাপমুক্ত হলেন।
চিনা ড্রাগনের চোখ রাঙানির পাল্টা জাবাব, লাদাখ সীমান্তে রাস্তা-ব্রিজের নেটওয়ার্ক গড়ছে দিল্লি