প্রকাশ্যে এল লাদাখের স্যাটেলাইট চিত্র! বারংবার বৈঠকের পর আদৌও কতটা লালফৌজ মুক্ত প্যাংগং?
লাদাখ নিয়ে ভারত-চিন বিবাদ কি তবে এখনকার মতো শান্ত হতে চলেছে? এমনই ইঙ্গিত মিলল। শুক্রবার জানা যায় যে লাদাখের মোট তিনটি জায়গা থেকে চুক্তিমতো সেনা প্রত্যাহার শুরু করল চিন। জানা গিয়েছে এলএসি-র হট স্প্রিং এলাকা থেকে পিছু হঠল লালফৌজ। একইভাবে ভারতীয় সেনাও পিছু হঠেছে। তবে প্যাংগংয়ে গতকাল পর্যন্তও প্রচুর সেনা মোতায়েন রেখেছিল চিন। তবে ছবি বদলাচ্ছে।
কী দেখা যাচ্ছে স্যাটেলাইট চিত্রে?
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রকাশিত এক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গিয়েছে প্যাংগং থেকেও ক্রমশ সরছে চিনের সেনাবাহিনী। শুক্রবারের যে স্যাটেলাইট ইমেজ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে যে প্যাংগং লেকের ধারে ক্রমশ কমে আসছে চিনা সেনার উপস্থিতি।
আগে দেখা যায়, চিনা সৈন্যের ভিড়
এর আগে গত ২৬ জুনের যে ছবি দেখা গিয়েছিল, সেখানে লেকের নীল জলের ধারে ছিল চিনা সৈন্যের ভিড়। আজ সেই অংশ অনেকটাই ফাঁকা। তবে এখনও কয়েক'শ চিনা সৈন্যের তাঁবু দেখা যাচ্ছে ওই অঞ্চলে। এখনও চিনা সেনার পুরোপুরি সরে যাওয়ার ছবি দেখা যাচ্ছে না।
টহলদারী সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা
টহলদারী সীমান্ত নিয়ে বরাবরই ভারত ও চিনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। ভারত বিশ্বাস করে 'ফিঙ্গার ১' থেকে 'ফিঙ্গার ৮' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের এবং চিন মনে করে যে 'ফিঙ্গার ৮' থেকে 'ফিঙ্গার ৪' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদেরই।
এই 'ফিঙ্গার ৪' এলাকাতেই সংঘর্ষ হয়
১৫ জুন, এই 'ফিঙ্গার ৪' এলাকাতেই উভয় পক্ষের সেনার মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ বাঁধে। পরে উভয় পক্ষের সীমানা যেখানে কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্যকে কাঁটাতারের সাথে জড়িত লাঠির মতো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। 'ফিঙ্গার ৪'-এ এই জন্যেই উল্লেখযোগ্য হারে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছিল চিন যাতে ভারতীয় সেনারা আর 'ফিঙ্গার ৮' এর দিক দিয়ে টহল দেওয়ার সুযোগ না পায়।
ডোভাল ও বায়ুসেনার তৎপরতা
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে চিনের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই দুই দেশ সীমান্ত থেকে তিন দফায় সেনা সরানোর চুক্তি করে। সেই মতো কাজ হচ্ছে সীমান্তে। এদিকে আজ ফের বৈঠকে বসবেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ও অজিত ডোভাল। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গালওয়ান, গোগরা ও হট স্প্রিংস এলাকা থেকে প্রাথমিকভাবে বাড়তি সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ এরই মধ্যে এদিকে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে অত্যাধুনিক সেনা কপ্টার চিনুক ও অ্যাপাচে এসে পৌঁছেছে।
সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে ভারতীয় সেনা
চিন পিছু হটলেও সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে ভারতীয় সেনা৷ ভারত-চিন সীমান্তে রাত্রিকালীন টহল দিতে দেখা গেল ভারতীয় বায়ুসেনার অ্যাপাচি হেলিকপ্টার, চিনুক হেলিকপ্টার ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানকে৷ প্রসঙ্গত, ১৫ জুন ভারত ও চিনা সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল রাতের অন্ধকারেই। তাই আগাম সতর্কতা হিসাবেই চিনের উপর নজরদারি চালাতে ভারতীয় বায়ুসেনার এই পদক্ষেপ।
১৯৬২ সালের স্মৃতিচারণ
১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি ইপনীত হয়েছে লাদাখে। এই আবহে চিনা সেনা পিছু হটার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছালেও সেই কাজে ঢিলেমি দিচ্ছে বলে খবর। আর এই পরিস্থিতিতে এক ইঞ্চিও জমি চিনকে না ছাড়তে বিশেষ ভাবে তৈরি হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনা। দুর্গম পাহারে আকাশ থেকে চিনা গতিবিধির উপর নজর রাখতে তৈরি হচ্ছে নতুন ব্লুপ্রিন্ট।
২৪ ঘণ্টা সজাগ রয়েছে ভারত
কোনও ভাবে যাতে চিন ধোকা দিয়ে গালওয়ানে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা না করে তার জন্য ২৪ ঘণ্টা সজাগ রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। দিনের পাশাপাশি এখন তাই রাতেও আকাশে টহল দিচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এর ফলে কোনও রকম চিনা গতিবিধি খুব সহজে এবং খুব দ্রুত নজরে আসবে ভারতের।