কর্ণাটকে প্রচারের শেষলগ্নে সরগরম রাজ্য, এদিনের প্রচারের বিশেষ কিছু মুহুর্ত
কর্ণাটক বিধানসভা ভোটের প্রচারের শেষ দিনেও জারি থাকল মোদী-রাহুল অসি-যুদ্ধ।
শুক্রবার ছিল কর্ণাটক বিধানসভা ভোটের প্রচারের শেষদিন। এর আগে বেশ কয়েকটি জনমত সমীক্ষা হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটিই এই বিধানসভা ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। বলেছে কংগ্রেস বা বিজেপি যেই সরকার গড়ুক, সাহায্য লাগবে তৃতীয় দল জেডি(এস)-এর। কিন্তু একটি জনমত সমীক্ষা আবার দাবি করেছে বিপুল জনমর্থন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বিজেপি। তাতেই প্রচারে জোর বাড়িয়েছে কংগ্রেস। সভাপতি রাহুল গান্ধী বারবার এসেছেন এরাজ্যে প্রচারে। পাশাপাশি প্রচারে দেখা গিয়েছে প্রাক্তন প্রধাণমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বছর দুয়েক পরে নির্বাচনী ময়দানে ফেরা ইউপিএ চেয়ার পার্সন সোনিয়া গান্ধীর মতো ব্যাক্তিত্বকে।
শুক্রবার শেষদিনের প্রচারের দুপক্ষের যুযুধান চিত্রটা অক্ষুণ্ণ ছিল। আসুন একঝলকে দেখে নেওয়া যাক কর্ণাটক বিধানসভা ভোটার শেষদিনের প্রচারের কিছু বিশেষ মুহুর্ত। এদিন প্রচারে একদিকে যেমন ছিলেন রাহুল গান্ধী, অন্যদিকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শআহ, স্মৃতি ইরানি, মুখতার আব্বাস নকভি-সহ একাধিক বিজেপি হেভিওয়েট নেতারা। পাশাপাশি এদিনই বেঙ্গালুরুর জাতাহাল্লি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে ৯ হাজারেরও বেশি ভোটার আইকার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে কমিশন। যা নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক মহল।
|
জনগণের হৃদয় থেকে মুছে গেছে কংগ্রেস: মোদি
শুক্রবার বিকেলে বেলাগাভিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি জনসভা করেন । সেই জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, কংগ্রেস মানুষের মন থেখে মুছে গেছে। তিনি বলেন, 'কংগ্রেস পার্টি আজ কোনঠাসা। ভারতের প্রতিটি কোণ থেকে তারা অপসারিত হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস জানে না যে, তারা জনগণের হৃদয় থেকেও মুছে গিয়েছে'। এছাড়া তিনি দাবি করেন, কর্ণাটকে প্রচারে কংগ্রেস সরকার তার কাজ তুলে ধরার চেষ্টা না করে, কেবলই নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে গিয়েছে। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াহ-এর একটি মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া ভুলকে নিয়ে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, 'এখন মোদী তাদের হৃদয়ে এমনভাবে চলে গেছে যে, কর্নাটক মুখ্যমন্ত্রীও নরেন্দ্র মোদীর বিষয়ে কথা বলছেন। এটাই প্রমাণ যে সত্যিই ঈশ্বর আছেন, কারণ তিনি কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীকে সত্য বলার জন্য বাধ্য করেছেন'। পাশাপাশি কর্নাটকের এক স্থান থেকে জাল ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার অভিযোগ করে তাঁর দাবি পরাজয়ের নিশ্চিত বুঝেই কংগ্রেস এসব অগনতান্ত্রিক পথ নিচ্ছে।
আটক ভোটার আইডি কার্ডগুলি আসল
মোদি জনসভা থেকে জাল ভোটার আই কার্ড-এর অভিযোগ করার একটু পরেই কর্ণাটকের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জীব কুমার সাংবাদিকদের জানান, 'এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ কারণেই কার্ডগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল। আমরা মোট ৯৮৯৬ টি কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছি। তবে ওই ভোটার আইডি কার্ডগুলি আসল বলে প্রমাণিত হয়েছে'। প্রসঙ্গত বেঙ্গালুরুর একটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে কমিশন ওই কার্ডগুলি পায়। সঞ্জীব কুমার জানান, 'ওই ফ্ল্যাটে তিনটি মাল্টিফাংশনিং কপিয়ার মেশিন, পাঁচটি ল্যাপটপ, যার একটি খারাপ, নয়টি মোবাইল ফোন, ছাড়াও প্যান কার্ড, এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি নথি মিলেছে।' এছাড়া ৬,৩৪২ জন ভোটারের আবেদনপত্রের অ্যাকনলেজমেন্ট রিসিপ্ট পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে আরও ২০,৭০০টি অ্যাকনলেজমেন্ট রিসিপ্ট যাতে কোনও সিল ছিল না।
|
কমিশনে বিজেপি
জাল ভোটার কার্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, মুখতার আব্বাস নাকভি, জেপি নাড্ডা, ধর্মেন্দ্র প্রধান ও এস এস আহলুওয়ালিয়া সহ বিজেপির এক প্রতিনিধিদল বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাটে পাওয়া জাল ভোটার আইকার্ডের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাতে নির্বাচন কমিশনের অফিসে যান। কমিশন থেকে বেরিয়ে বিজেপি প্রতিনিধিদল জানায় রাজরাজেশ্বরী আসনের নির্বাচন স্থগিত রাখার জন্য কমিশনে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। এছাড়া কর্ণাটকের অন্যান্য এলাকায় এই ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা কর্মী দেড় লক্ষ
নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন করার জন্য কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর ৫০ হাজারেরও বেশি সদস্য-সহ প্রায় দেড় লক্ষ নিরাপত্তা কর্মীকে কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে নিযুক্ত করা হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে সিআরপিএফ, বিএসএফ এবং আইটিবিপিসহ বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী মিলিয়ে মোট ৫২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে কর্ণাটকের ভোটে। তাঁরা প্রায় এক লক্ষ শক্তিশালী কর্ণাটক পুলিশের বাহিনীকে সহায়তা করবে।
|
অমিত শাহ-এর রোড শো
এদিন সন্ধেয় বেঙ্গালুরুর রাস্তায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ একটি রোড শো-ও করেন।
বিদার-এ মোদীর জনসভা
বেলাগাভীর পর নরেন্দ্র মোদী রাত আটটা নাগাদ বিদারে আরেকটি জনসভায় বক্তৃতা করেন। সেখানে তিনি বলেন, কর্ণাটকে বিজেপি জনগণের যে ভালবাসা পাচ্ছে তাই এই নির্বাচনে কংগ্রেসের হারের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। শেষ বেলাতেও কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র নিয়ে খোঁচা দেন তিনি। বলেন রাহুল মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর আসনটি বোধহয় একটি পরিবারের জন্য সংরক্ষিত। প্রধানমন্ত্রী হওয়াই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।
|
রাজকুমারের স্মরণে রাহুল গান্ধী
মোদী সভা চলাকালীনই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে দেখা যায় বেঙ্গালুরুতে কন্নড় অভিনেতা ডাঃ রাজকুমারের সৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। এর আগে তাঁকে দেখা গিয়েছিল আনজানেয়া স্বামী মন্দিরে পুজো দিতে।