পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া অযোধ্যা আন্দোলনের নায়ক বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী
১৯২৭ সালে বর্তমান পাকিস্তানে অবস্থিত সিন্ধ প্রদেশে জন্ম নেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। দেশভাগের পর সেখান থেকে সপরিবারে চলে এসেছিলেন মুম্বইতে। গতকাল, অর্থাৎ ৮ নভেম্বরই পালন করলেন নিজের ৯২তম জন্মদিন। আর এরপর দিনই প্রকাশ করা হল সেই মামলার রায়, যেই মামলার হাত ধরেই মোটামুটি বিজেপি-র উত্থান ঘটিয়েছিলেন। তিনি লালকৃষ্ণ আডবাণী।

রামজন্মভূমি আন্দোলনের প্রধান
নয়ের দশকের শুরুতে রামজন্মভূমি আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন বিজেপির লালকৃষ্ণ আডবাণী। ১৯৯০ সালে তত্কালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণী রাম মন্দির নির্মাণে সমর্থন আদায়ে গোটা দেশে রথযাত্রায় বেরোন। এর আগে ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংসদে মাত্র দুই জন সাংসদ ছিল দলের। ১৯৮৯ সালেই সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫-তে। ১৯৯১ সালে আরও বেড়ে সাংসদ সংখ্যা হয় ১২০। এরপরেই ১৯৯২ সালে করসেবকদের নিয়ে সেই রথযাত্রা।

১৯৯৬-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ইস্তাহারে রামমন্দির
প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধী লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছিলেন এই ফৈজাবাদ থেকে। এই ফৈজাবাদ জেলার মধ্যেই অযোধ্যা। পরবর্তীতে পুরো জেলার নাম বদলে করা হয় অযোধ্যা। সেই নির্বাচনে তুলনামুলক ভালো ফল করলেও সরকার গঠনের ধারের কাছে আসেনি বিজেপি। এরপর ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে যাওয়ার পরে ১৯৯৬-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ইস্তাহারে প্রথম রামমন্দিরের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিটি নির্বাচনের ইস্তেহারেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি।

বর্তমান বিজেপি-র রূপকার
শুক্রবারও তাঁর জন্মদিনে তাঁকে বর্তমান বিজেপি-র রূপকার ও মার্গদর্শক বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। হয়ত এখনকার জামানাতে বা বর্তমান রাজনীতিতে আডবাণীর সেই প্রাসঙ্গিকতা আর নেই। তবে দুই জন সাংসদের দল পরপর দুইবার কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছে, এর অনেকটা কৃতিত্বের অধিকারি নিঋসন্দেহে আডবাণী।

রাম জন্মভূমির ডাক দিয়ে ১৯৮০ থেকে আন্দোলন
রাম জন্মভূমির ডাক দিয়ে ১৯৮০ থেকে আন্দোলন শুরু করেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। সেই আন্দোলনে বিজেপির সঙ্গী ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেই সময় সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যার উদ্দেশ্যে রথযাত্রা শুরু করেন আডবাণী। পরবর্তীতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে মূল ইন্ধন যোগানোর পিছনেও দায়ী করা হয় এই রথযাত্রাকে।

উপ-প্রধানমন্ত্রী হন আডবাণী
এরপর ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসাবে উঠে আসে। ১৩দিনের জন্য সরকারও চালায় তারা। পরে ১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গঠন করে ন্যাশনাল ডেমক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স। সেই সময় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী হন আডবাণী। পরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হন। বিজেপ থেকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দাবিদারও ছিলেন তিনি।

মোদীকে জায়গা ছেড়ে দেন আডবাণী
তবে ২০০৪ ও ২০০৯ সালের নির্বাচনে হারতে হয় দলকে। পরে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে আসেন আডবাণী। সংসদীয় রাজনীতিতে ধীরে ধীরে হয়ে পড়েন অপ্রাসঙ্গিক। তবে আজ শনিবার অযোধ্যা বিবাদ মামলার রায় প্রকাশ হতেই ফের একবার পাকিস্তান থেকে আসা সেই রাজনীতিবিদকে কুর্নিশ জানান গেড়ুয়া শিবিরের নেতারা।