টয়োটা কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত, লোকসান বিপুল
টয়োটা কির্লোস্কার ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আর সতীশের অভিযোগ, ঝামেলা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষই। তারাই গায়ের জোরে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে সাসপেন্ড করেছে। অথচ ওরা ন্যায্য দাবিদাওয়াই জানাতে গিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, "রাজ্য শ্রম দফতরের ডাকে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। অথচ সাসপেন্ড হওয়া ৩০ জন সহকর্মীর ব্যাপারে ওরা কোনও উচ্চবাচ্য করল না। আগে এটার সমাধান হোক। নইলে কোনও আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।"
জবাবে সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান শেখর বিশ্বনাথন বলেছেন, "সাসপেন্ডের বিষয়টি একটি সাময়িক প্রক্রিয়া। আমরা আইন মেনে এগোচ্ছি। তাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চললেও এখনই চার্জশিট দেওয়ার কথা ভাবছি না। যদি তদন্তের পর দোষ প্রমাণ হয়, তবেই শাস্তি দেওয়া হবে। নইলে তাঁদের ফের কাজে মোতায়েন করা হবে এবং যতদিন ধরে ওঁরা সাসপেন্ড ছিলেন, ততদিনের বেতন বুঝিয়ে দেওয়া হবে।"
প্রসঙ্গত, প্রায় মাসখানেক আগে কারখানার ৩০ জন শ্রমিককে সাসপেন্ড করে টয়োটা কির্লোস্কার মোটরস। অসদাচরণের অভিযোগে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এর পরই ৪৩০০ শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করেন। ১৬ মার্চ থেকে কারখানায় লক-আউট শুরু হয়। ২৪ মার্চ লক-আউট তুলে নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে সন্ধি সম্ভব হয়নি। শ্রমিকরা লাগাতার অনশন ধর্মঘট শুরু করে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, এমন টালমাটাল পরিস্থিতির জেরে উত্পাদন অন্তত ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে মার্চে। ফলে হুন্ডাই, হোন্ডা, ভোক্সভাগেন ইত্যাদি গাড়ি নির্মাতাদের সঙ্গে দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে টয়োটা।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে মারুতির মানেসর কারখানায় ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। অসদাচরণের অভিযোগে কয়েকজন শ্রমিককে সাসপেন্ড করায় শুরু হয় ধর্মঘট। মারুতি সুজুকি হরিয়ানা থেকে কারখানা গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দিলেও তাতে কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটীদের সঙ্গে একপ্রকার রফা করেই শুরু করতে হয় উত্পাদন। সেই সময় বিপুল লোকসান হয়েছিল মারুতি সুজুকির।
বলা ভালো, মারুতি সুজুকির ওই ধর্মঘট ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছিল। হিরো হোন্ডা কারখানায়ও ২০০৬ সালে শ্রমিক বিক্ষোভ ঘিরে অশান্তি ছড়িয়েছিল। পুলিশ বেধড়ক মারধর করেছিল। সেই সময় সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত লোকসভায় বিষয়টি নিয়ে সরব হন। সরকারের চাপে হোন্ডা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটায়।
টয়োটার ক্ষেত্রে বিষয়টি কোন দিকে গড়ায়, তা জানতে অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই।