কলকাতার 'কঙ্কাল বাড়ি'! এমন ঘটনা তো প্রথমবার নয়, তবে এত হইচই কেন?
কলকাতা, ১৫ জুন : কলকাতায় এখন একটাই আলোচনা, একজনকে নিয়েই আলোচনা। তিনি পার্থ দে। ৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটের 'কঙ্কাল বাড়ির' সবচেয়ে বড় রহস্য তিনিই। এছাড়াও রয়েছে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া দেবযানী (আপাতভাবে মনে করা হচ্ছে, নিশ্চিত নয়) এবং মৃত অরবিন্দ দে-র রহস্যে মোড়া জীবনই এখন কলকাতাবাসীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। [৬ মাস ধরে দিদির কঙ্কালের সঙ্গে বসবাস ভাইয়ের, খাবারও দিতেন নিয়মিত!]
৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিট যেন ক্রমেই পর্যটন কেন্দ্রে পরিবর্তন হয়েছে। এই অলৌকিক বাড়িটি দেখতে দুর দুর থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু কেন? এমন ঘটনা তো এদেশে প্রথমবার নয়। [কলকাতায় কঙ্কালের টঙ্কার: মিস্ট্রি তো ছিলই, এবার যোগ হল কেমিস্ট্রিও]
- ২০০৭ সালে দিল্লি পুলিশ জানতে পারে বোন নীরুর বিশীর্ণ মৃতদেহের সঙ্গে কালকাজি হোমে বসবাস করছিলেন দুই বোন ডলি এবং পুনম। দারিদ্র এবং কাজের অভাবে প্রায় মাসখানেক বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এই তিন বোন। প্রায় একমাস উপোষ করে থাকতে হয়েছিল এই তিন জনকে। এর ফলেই নিরুর মৃত্যু হয়। কিন্তু বাকি দুই বোন মেনে নিতে চাননি যে নীরু মারা গিয়েছে।
- ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে আরও একটি হাড় হিম করা ঘটনা সামনে আসে। চেন্নাইয়ে এক ছাপাখানার এক কর্মী স্ত্রীয়ের মৃতদেহের সঙ্গে ৪ দিন বসবাস করেছিলেন। পুলিশের কথায়, গার্হস্থ্য ঝগড়ার পরেই শোয়ার ঘরের সিলিং থেকে গলা ফাঁস ঝুলিয়ে আত্মঘাতী হন পার্থসারথির স্ত্রী। যখন ছেলেমেয়ে বাবাকে মায়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তখন তিনি বলেন, মায়ের শরীরটা ভাল নেই তাই বিশ্রাম নিচ্ছে। যখন বাড়ির একটি ঘরে তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ পচতে শুরু করে, তখন তিনি পাশের ঘরেই রান্না করছিলেন, ছেলেমেয়েদের দেখভাল করছিলেন।
- ২০১৩ সালে তামিলনাড়ুর নাগেরকয়েলের ৩ সদস্যের পরিবার একটি কঙ্কালের সঙ্গে প্রায় ১০ মাস বসবাস করেছিলেন। পরে প্রতিবেশীরা কিছু একটা রহস্যের গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাটি সামনে আসে।
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিষয়টি প্রায় একই। কোনও এক ব্যক্তি বা পরিবার নিজের আপনজনের বিয়োগ মেনে নিতে পারেন না। এবং তাঁদের পচাগলা মৃতদেহ বা কঙ্কালের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। পচাগন্ধ ঢাকা দিতে কেউ ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে আষ্টেপিষ্টে রাখেন কঙ্কালকে। কেউ আবার বাড়িতেই সমাধি বানিয়ে কাছের মানুষকে কাছে রাখার চেষ্টা চালায়। অনেক ঘটনায় দেখা গিয়েছে, বড় ফ্রিজারে করে রেখে হয় মৃতদেহ।
এই ধরণের ঘটনা সামনে আসার পর অতি সহজেই আমরা তাদের পাগল, অপরাধী কি না কি অভিযোগ তুলে বিচার করে ফেলি। কিন্তু তাদের মানসিক পরিস্থিতি তা মৃতের সঙ্গে সেই ব্যক্তির আত্মিক যোগের কথা ভুলে যাই। পার্থ দে-র ক্ষেত্রেও এই একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবারের হইচইটা এত বেশি কেন, কারণ বাড়িটি কলকাতার বলে? নাকি এই তদন্তে যৌনতার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে তাই?