খুনের বিবরণ সহ শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্পর্ক–শৈশব, পলিগ্রাফ টেস্টে ধৃত আফতাবকে কি প্রশ্ন করা হল জানুন
বৃহস্পতিবার দিল্লির রোহিনীর ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে শ্রদ্ধা ওয়াকার খুনের প্রধান অভিযুক্ত আফতাব আমীন পুনাওয়ালার আট ঘণ্টা ধরে পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয়। পুনাওয়ালাকে এই সময় সে কীভাবে এই অপরাধ করেছে, তার সঙ্গে শ্রদ্ধার সম্পর্ক, যেখানে সে তার শৈশব এবং পরিবার সম্পর্কে প্রমাণ এবং প্রশ্ন লুকিয়ে রেখেছিল সহ একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
বৃহস্পতিবার এই পলিগ্রাফ টেস্ট শুরু হয় সকাল ১১টা ৫০ মিনিট থেকে এবং তার রক্তচাপ মাপা সহ বেশ কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয়। পলিগ্রাফ টেস্টের সময়, আফতাবকে তার শৈশব, তার বন্ধুবান্ধব ও লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধা ওয়াকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এই সেশন চলাকালীন, পুনাওয়ালাকে এই ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ দিতে বলা হয়, কী কারণে সে শ্রদ্ধাকে খুন করল, কখন সে এই অপরাধ ঘটালো, খুনের পর কীভাবে সে প্রণাণ লোপাট করল ইত্যাদি। জানা গিয়েছে যে আফতাবকে এই সব প্রশ্ন হিন্দিতে করা হলেও সে ইংলিশে উত্তর দেয়।
শ্রদ্ধার সঙ্গে ডেটিং শুরু হওয়ার পর কি কি হয়েছিল এবং কেন সে শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করার পর ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাও জিজ্ঞসা করা হয় শ্রদ্ধাকে। সূত্রের খবর, ফরেন্সিক আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞরা শ্রদ্ধার দেহাংশ ও তাঁর ফোন কোথায় কোথায় ফেলে দেওয়া হয় সেই সব জায়গার খোঁজ শুরু করেছে যাতে পরবর্তী তদন্তে তা সহায়ক হতে পারে। সূত্রের খবর, জেরা চলাকালীন পুনাওয়ালা সহযোগিতা করেছে এবং তাকে ৫০টি প্রশ্ন করা হয়েছে। বুধবার এই টেস্ট করার কথা থাকলেও আফতাবের জ্বর ও সর্দি হওয়ার কারণে এই টেস্ট করা যায়নি।
পলিগ্রাফ টেস্টের সময়, শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করতে আফতাব কি ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তাও জিজ্ঞাসা করা হয়। অভিযুক্ত পলিগ্রাফ টেস্টের প্রথম সেশন সম্পন্ন করেছে। এই পলিগ্রাফ টেস্ট লাই ডিটেক্টর নামেও পরিচিত। এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে, পুলিশ দিল্লি আদালতের কাছে পুনাওয়ালার হেফাজত বাড়ানোর অনুমতি চায়। কারণ তারা পলিগ্রাফ ও নার্কো-অ্যানালিসিস টেস্ট করতে চেয়েছিল আফতাবের। পুলিশ জানিয়েছে যে আগামী সপ্তাহে নার্কো টেস্ট হতে পারে আফতাবের। ইতিমধ্যেই দিল্লি পুলিশ শ্রদ্ধা ও আফতাবের বন্ধুদের বয়ান ১৬৪ ধারার অন্তর্গত রেকর্ড করেছে। উভয়ের বন্ধুরাই বলেছে যে শ্রদ্ধাকে আফতাব মারধর করত এবং তাঁকে প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছিল। পুলিশ শ্রদ্ধা ও আফতাবের বন্ধু, যিনি বেঙ্গালুরুতে থাকেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। পুলিশ শ্রদ্ধার চোয়ালে কিছু চুলের দাগ দেখতে পেয়েছে, যেটাকে ডিএনএ টেস্টে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ আফতাবের ফ্ল্যাট থেকে পাঁচটি ছুরি উদ্ধার করে যা ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ মনে করছে এই ছুরিগুলি দিয়েই আফতাব শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করে। তবে শ্রদ্ধা দেহ দু'টুকরো করার জন্য আফতাব যে করাতটি ব্যবহার করেছিল তা এখনও উদ্ধার হয়নি। এই বছরের মে মাসের ১৮ তারিখে আফতাব ২৭ বছরের শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে এবং এরপর তাঁর দেহের ৩৫টি টুকরো করে প্রায় তিন সপ্তাহ যাবৎ ৩০০ লিটার ফ্রিজে রেখে দেয়। দক্ষিণ দিল্লির মেহরুলির এই ঘটনা গোটা দেশাসীকে শিহরিত করে তোলে। এই দেহাংশ প্রতিদিন মাঝরাতে গিয়ে আফতাব মেহরুলির জঙ্গল সহ শহরের একাধিক জায়গায় ফেলে দিয়ে আসত। জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে এক ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে এই দু'জনের পরিচয় হয় এবং এরা দু'জন দিল্লিতে চলে আসে থাকতে। তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে যে বাড়ির খরচ, একে-অপরকে অবিশ্বাস করা নিয়ে এই দু'জনের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত।
হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন? গ্রহের খারাপ দশা আপনাকে অসুস্থ করতে পারে, জানুন বাঁচার উপায়