বেঙ্গালুরুর বুকে দাপটে ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বাঙালি বধূ সঙ্গীতা
দূর্গা পুজো ঘিরে অপেক্ষা থাকে এক বছরের। প্রতিটা বছরের 'অপেক্ষা' য় মিশে থাকে এক অদ্ভুত নতুনত্ব।
দূর্গা পুজো ঘিরে অপেক্ষা থাকে এক বছরের। প্রতিটা বছরের 'অপেক্ষা' য় মিশে থাকে এক অদ্ভুত নতুনত্ব। প্রতি বছর উমাকে নতুন করে পাওয়ার আশায়, ..পুজো ঘিরে উৎসবকে নতুন করে পাওয়ার আশায় পথ চেয়ে থাকে বাঙালি। আর প্রতিবছরই বাঙালির পাওনার ঝোলা ভরিয়ে দিয়ে যায় দুর্গাপুজো।
পুজো মানে যতটা উৎসব ততটাই আরাধনা। আরাধনা.. উমার , আরাধনা ..দেবীশক্তির। আর এই আরাধনার মাঝেই লুকিয়ে থাকে মাতৃশক্তিকে সম্মান জানানোর শপথ । আর সেই শপথকে সঙ্গে নিয়েই 'ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা'-র ' জয়ং দেহি রূপং দেহি' বিভাগ কুর্নিশ জানাচ্ছে সমাজের সেই সমস্ত মহিলাদের , যাঁরা আগামীকে পথ চলতে সাহস , উৎসাহ যুগিয়েছেন। এমনই একজন বেঙ্গালুরুর সঙ্গীতা সিনহা।
বেঙ্গালুরু শহরে 'হিয়ার মাঝে কলকাতা ' রেস্তোরাঁর নাম প্রায় এই শহরের প্রতিটি বাঙালিরই জানা। এই রেস্তোরাঁকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনেছেন সঙ্গীতা সিনহা। প্রবাসে এসে ব্যবসায়িক উদ্যোগ ঘিরে সঙ্গীতার লড়াইটা নেহাত সহজ ছিল না। কেমন ছিল সেই পথ চলার গল্প? শুনে নেব সঙ্গীতা সিনহার কাছ থেকেই...
আগে শুনব কতটা কঠিন এই ছিল লড়াই?
লড়াইটা সহজ নয় একদমই! নিজের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছি লডা়ই।
সঙ্গীতা দি, ছোটবেলা কোথায় কেটেছে তোমার?
আমার ছোটবেলা কেটেছে পুরুলিয়ার ঝালদায়। সেখানে মামার বাড়িতেই আমার জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে। দিদা, বড় মামু, ছোট মামুদের সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটিয়েছি। সেই সময়টা খুব মিস করি।
শুরুর গল্প কেমন ছিল ?
ছোটবেলা কেটেছে সোদপুরে। ছোট থেকেই জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি। তখন একটা স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হব, কিন্তু পরে বহু সময়ে বহু পরিস্থিতি পাল্টায়। আর শেষে বেঙ্গালুরুতে এসে আপাতত একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছি। তবুও লড়াই চলছে, আরও ভালোভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার লড়াই।
বেঙ্গালুরুতে এই দাপটের সঙ্গে লড়াই চালানোর সফরটা কেমন উপভোগ করছ?
প্রথমে যখন শুরু করি, তখন বেঙ্গালুরুর কোরামঙ্গলার একটা পুজোতে স্টল রেখে শুরু করেছিলাম। প্রথমবার অতটা ওয়াকিবহাল ছিলাম না গোটা বিষয়টা সম্পর্কে। তবে পরের দিকে ব্যবসার চেনা অঙ্ক শিখে নিয়েছি। পরের বছরের পুজো থেকে পুরনো ভুল গুলো আর রিপিট করিনি (হেসে) !
'কিছু করব' .. এই ভাবনাটা তোমার কীভাবে সামনে আসে?
ব্যবসায় যে আসবই সেটা কোথাও একটা ভেতরে ভেতরে ছিল। তবে সেটা নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। বাবার অবসরগ্রহণের পর থেকেই ব্যবসা করার ভাবনা চিন্তা শুরু করি। উৎসাহ দেন মা বাবাও। কিন্তু কলকাতায় সেই ভাবনা বাস্তবায়িত না হলেও, বেঙ্গালুরু আমাকে সেই স্বপ্ন ছুঁতে সাহায্য করেছে।
রেস্তোরাঁর দিকেই কেন ঝুঁকলে?
আমি ছোট থেকেই রান্না করতে ভালোবাসি। ছোটবেলায় মা একটু সাহায্য করে দিতেন, আর আমি বহু ধরনের ডিশ বানাতাম। সেই থেকেই বলতে পার একটা ইচ্ছে ছিল রেস্তোরাঁ খোলার।
তোমার শত্রুর সংখ্যা ঠিক কতটা?
(হেসে) আসলে প্রতিযোগিতা তো থাকবেই.. তবে আমি মানুষকে খুব সহজে বিশ্বাস করি, আর বিশ্বাস করতে ভালোবাসি। ....তবে টেনশন কী আর হয় না, সব মিলিয়েই চলি! তবে আমার প্রতিযোগিতা আমার নিজের সঙ্গে।
ব্যবসা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কোনও ভাবনা রয়েছে ?
আমরা 'হিয়ার মাঝে কলকাতা'-র পাশাপাশি এবার 'শাহিয়া' আনতে চলেছি বেঙ্গালরুর বুকে। ফলে শুধু বাঙালি খাবারই নয়, এবার অবাঙালি খাবার নিয়েও নতুন উদ্যোগ নিচ্ছি আমরা। 'শাহিয়া' আমার নতুন রেস্তোরাঁ । থেমে থাকতে আমি রাজি নই (হেসে)!
আপনি কারোর মা.. কারোর স্ত্রী, পুত্রবধূ আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনি কারোর মেয়ে। দায়িত্বটা কীভাবে ভাগ করে নেন?
শতাংশের হারে দিনটা কীভাবে ভাগ করি, তা বলাটা কঠিন! তবে এটুকু বলতে পারি মেয়েকে সবচেয়ে বেশি সময় দি, বা দিতে হয়! তবে খুব আক্ষেপ যে মেয়ে হয়ে বাবার জন্য সেভাবে সময় দিতে পারি না। বিভিন্ন ব্যাক্তিগত দায়িত্ব বা ব্য়বসায়িক দায়িত্ব থাকায় বাবাকে সময়টা কম দেওয়া হয়ে যাচ্ছে ! এটা আমার খুবই আক্ষেপ! যদিও বাবা নিজেই বলেন , এই মুহূর্তে মেয়েকে সময় দেওয়াটা সবচেয়ে জরুরি আমার জন্য।
কাজের ফাঁকে কখনও মনে হয়..এই সফরটা কীভাবে শুরু হয়েছিল.. যে ছোট্ট সঙ্গীতা দি কোথায় ছিল , আর কোথায় পৌঁছল?
মনে তো হয়ই! এখনও সে অর্থে 'ছোট'ই আছি(হেসে)! যেদিন নিজের ব্যবসাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারব, সেদিন বলতে পারব কিছু করতে পেরেছি। এখনও কিছুই হয়নি !
শত্রু দমন নিয়ে আপনার লড়াইয়ের মন্ত্র কী ?
আমার ছোট মামার কাছ থেকে শিখেছি , যে বন্ধু তাঁকে আলাদা করে বোঝাতে হবে না আন্তরিকতা। তবে যে শত্রু তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব মেপে নিয়ে এগোতে হবে। আমি সেটাকে মাথায় রেখেই চলি!
শত্রুর কথা তো হল... বন্ধু হিসাবে কাকে পাশে পেয়েছেন বেশি?
স্বামী তো আমার সবচেয়ে বন্ধু! আর মেয়েও খুব সাপোর্ট করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বাবাও বেশ সার্পোটিভ। আর একজনের কথা না বললেই নয়, সে হল আমার বন্ধু স্মিতা। এদিকে, আমার সঙ্গে আমার শাশুড়ির সম্পর্কটা খুব মজাদার! উনি যেভাবে আমার হয়ে অন্যের সঙ্গে লড়ে যান , তা ভাবা যায় না! (হেসে)
তাহলে শাশুড়ির সঙ্গে তোমার 'মা-মেয়ে সম্পর্ক' টাই রয়েছে?
এক্কেবারে। আমাদের ,আদর, অভিমান, স্নেহের সম্পর্কটা একদমই সেরকম! আর আমরা এই সম্পর্ককে যত্নে লালন করি।
তোমার কাছে 'যুদ্ধ জয়ের মন্ত্র' সে অর্থে কিছু আছে ?
(হেসে)সত্যি কথা বলছি, এর একটাই উপায় এক কান দিয়ে শোন , আর আরও এক কান দিয়ে বার করে দাও!
যে মহিলারা তোমার মতোই লড়াইয়ে আছেন, বা আগামীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের কী বলবে তুমি?
আসলে নতুন প্রজন্মের মেয়েরা অনেক অবেক পরিণতি, আরও বেশি বুদ্ধিমতী। তবে বলব, লড়াইয়ে কারোর ওপর যেন নির্ভর না করেন। নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণা করে তোলা খুবই জরুরি। কারোর থেকে প্রত্যাশা রাখা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে ,'কেউ কাউকে হেল্প করে না, নিজেকে নিজেই হেল্প করতে হয়'!
যুদ্ধ লড়াইয়ের গল্প তো অনেক হল, আসি দুর্গাপুজোয় । এবার পুজোয় 'হিয়ার মাঝে কলকাতা' -র স্টল বেঙ্গালুরুর কোথায় পাওয়া যাবে?
ইন্দিরানগরের সোশিও কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের পুজোয় এবার আমরা থাকছি। এই পুজো দেখতে এলে 'হিয়ার মাঝে কলকাতা'র স্টল একবার ঘুরে যেতেই হবে (হাসি)!