৩৭০ ধারা বাতিলের পর ১০০ দিন পার, একনজরে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি
৩৭০ ধারা বাতিলের ১০০ দিন পার, একনজরে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি
চলতি বছরের ৫ই আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির মধ্য দিয়ে বাতিল করা হয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা। যবনিকা পরে স্বাধীনতা পরবর্তী ৭০ পছরের ইতিহাসে। বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা হারায় ভূস্বর্গ। পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরকে দুটি পৃথক ভাগে ভেঙে ফেলা হয় বিজেপি সরকারের তরফে।
জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে ওইদিন সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেন, এখন থেকে রাজ্যটি দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে পরিগণিত হবে। তারপর তিন মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও প্রত্যহই কাশ্মীর ইস্যুতে নতুন করে দানা বেঁধেছে একাধিক বিতর্ক।
৩৭০ ধারা বাতিলের ১০০দিন পার
৩৭০ ধারা বিলোপের পরই ভারত-পাক সম্পর্কের ফাটল আরও চওড়া হয়। পাশাপাশি কেন্দ্র সরকার উপত্যকার মানুষের কথা না শুনে জোর করে তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে বলে বিজেপির কড়া সমালোচনা করে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা মন্ত্রীরা। পাশাপাশি কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও টেলিভিশন পরিষেবাও। একই সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসবাদী হামালার পরিমাণও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। ৫ই আগস্টের পরই জম্মু কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করতে দেখা যায় পাকিস্তানকে।
জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন,২০১৯
চলতি বছরের ৫ই আগস্ট ৩৭০ ধারা বিলোপের পর জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন,২০১৯ পাশ করা হয় সংসদে। ৯ই আগস্ট সবুজ সংকেত মেলে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। জম্মু কাশ্মীরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে ফেলা হয়। একটি লাদাখ ও অন্যটি জম্মু-কাশ্মীর। লাদাখের কোনও বিধানসভা না থাকলেও, জম্মুর জন্য একটি আলাদা বিধানসভা থাকছে বলেও জানানো হয় সরকারি নির্দেশিকায়।
লাদাখের নতুন গভর্নর
৩১ শে অক্টোবর, রাধা কৃষ্ণ মাথুর লাদাখের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ভারতের প্রধান তথ্য কমিশনারের দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ওই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
জম্মু-কাশ্মীরের নতুন গভর্নর
৩১ অক্টোবরই ১৯৮৫ ব্যাচের গুজরাট ক্যাডারের আইএএস অফিসার গিরিশচন্দ্র মুর্মু হাইকোর্টে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসাবে শপথ নেন। নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ওই রাজ্যের মুখ্য সচিবও ছিলেন।
আটক একাধিক রাজনৈতিক নেতা
৩৭০ ধারা বিলোপের পর জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের আটক ও গৃহবন্দি করা হয়। এদিকে অক্টোবরে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির ইয়াওয়ার মীর, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা নূর মোহাম্মদ এবং উত্তর কাশ্মীরে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শোয়েব লোনকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহ এখনও আটক রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের একাধিক পিটিশন
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আবেদন করা হয় এই কদিনে। প্রথমটি অ্যাডভোকেট এমএল শর্মা দায়ের করেছিলেন বলে জানা গেছে। এর পরে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স সহ রাজনৈতিক দল গুলিকেও একই রকম আবেদন করতে দেখা যায়।
পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টে
৩৭০ ধারা বিলোপের সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক রিভিউ পিটিশন দাখিলের পর ওই আবেদন গুলির শুনানির জন্য পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চও তৈরি করা হয় সুপ্রিম কোর্টের তরফে। ওই বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এন ভি রমনা, এস কে কৌল, আর সুভাষ রেড্ডি, বি আর গাভাই এবং সূর্য কান্ত।
বিপাকে রেল ও সংবাদমাধ্যম
যোগাযোগ ব্যবস্থা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে জম্মু ও কাশ্মীরের গণমাধ্যম গুলিকেও বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমানে কাশ্মীর ইস্যুতে কোনও সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করলে উপত্যকার সাংবাদিকরা প্রাণ নাশের হুমকিও পাচ্ছেন। এদিকে প্রায় ৩ মাসেরও অধিক সময় ধরে রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত থাকার পর ১২ই নভেম্বর নতুন করে বেশ কিছু জায়গায় আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয় শুরু হয়।