কেরলের হটস্পট কাসারগড় জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সফল, জেনে নিন কিভাবে
কেরলের হটস্পট কাসারাগদ জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সফল, জেনে নিন কিভাবে
কেরলের উত্তরের রাজ্য কাসারগড়, যেটি হটস্পট হিসাবে পরিচিত, এখানে গোটা রাজ্যের ৫১২টি কেসের ১৭৮টি করোনা কেস ছিল। অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ কেস এ রাজ্যেই ছিল। রবিবার জানা গিয়েছে যে এই জেলার শেষ পজিটিভ রোগীও সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছেন।
করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল কাসারগড়
জেলার পর্যবেক্ষণ অফিসার ডাঃ এ টি মনোজ বলেন, ‘আমরা সফলতার সঙ্গে প্রথম পর্যায় অতিক্রম করেছি। আমরা সব কেস সনাক্ত করতে পারছি। সংক্রমণের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন একটিও কেস নেই। কড়া পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে যারা বাইরের দেশ বা রাজ্য থেকে এসেছেন তাঁদের পরিবারের মধ্যেই এই ভাইরাস ছড়াতে পেরেছে। বাইরের কেউ সংক্রমিত হয়নি।' মনোজ বলেন, ‘এখন আমরা পরবর্তী স্তরে চলে গিয়েছি। যেখানে বিদেশ থেকে ও দেশের অন্যান্য অংশের হটস্পট অঞ্চল থেকে ফেরা মানুষদের নিয়ে কাজ করতে হবে।' জেলা আধিকারিকদের মতে, তারা করোনা ভাইরাসের প্রকোপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হয়েছিল কারণ তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করে এগিয়ে চলছিল। যার মধ্যে কোয়ারান্টাইনের সময় ২৮ দিনের পরিবর্তে ৫৫ দিন করা হয়েছিল, স্থানীয় হটস্পটগুলির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম কেস সনাক্ত হয় এই জেলায়
কাসারগড়ে প্রাথমিকভাবে উহান থেকে আসা একটি কেসই পাওয়া গিয়েছে। যেটি ৩ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট করা হয়। ২৪ মার্চ যখন গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয় তখন এই জেলায় মাত্র ছ'টি কেস। কিন্তু দ্বিতীয়বারে এই সংক্রমণ হু হু করে বেড়ে যাওয়ার কারণ, যা ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়, মধ্য প্রাচ্যের দেশে থেকে ফেরা পর্যটকদের জন্য। যা পরে করোনা ভাইরাসে কেরলের উৎসকেন্দ্র বলে পরিচিত হয়। জেলা শাসক ডাঃ ডি সজিত বাবু বলেন, ‘মধ্য প্রাচ্যের দেশ ও মুম্বই থেকে প্রতিদিন বহু পর্যটক এ রাজ্যে এসে ঢুকছিল, তাঁদের জন্যই এটি সম্ভাব্য হটস্পটে পরিণত হয়। কিন্তু আমরা রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলাম। এমনকী নির্দেশও জারি করেছিলাম যে ২০ ফেব্রুয়ারির পর যাঁরা এই জেলায় ঢুকেছেন তাঁরা কোনও জনসমাগমে যোগ দিতে পারবেন না।'
কাসারগড় নিজেদের কৌশল প্রয়োগ করে
কিন্তু জেলায় করোনা ভাইরাসের কেস বেড়ে যাওয়ার ফলে স্থানীয় প্রশাসকরাও তাঁদের প্রচেষ্টা বাড়িয়ে দেন। জেলার দু'টি সরকারি হাসপাতালকেই কোভিড কেন্দ্রে পরিণত করা হয় এবং গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে স্বাস্থ্য কর্মীদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মাত্র চারদিনের মধ্যে নির্মিয়মান মেডিক্যাল কলেজকেও কোভিড কেন্দ্রে পরিণত করে দেওয়া হয়। এছাড়াও কেন্দ্র ও রাজ্যর পক্ষ থেকে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল সেগুলি ছাড়াও কাসারাগদ নিজস্ব কৌশল তৈরি করে, কারণ মার্চে করোনা কেস বেড়ে গিয়েছিল। সরকারিভাবে জানানো হয় যে তাদের নিয়ন্ত্রণের কৌশলটি কাজে লেগেছিল। লকডাউন ঘোষণার আগে জেলার সব হটস্পট এলাকাগুলিকে সিল করে দেওয়া হয়। ১৭ মার্চ থেকে প্রতিবেশী জেলা থেকেও গাড়ি প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেওয়া হয়। জেলা শাসক বলেন, ‘কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড়ার ১২টি অজ্ঞাতপরিচয় রাস্তা দিয়ে এই জেলায় বেশ কিছু করোনা কেস ঢুকেছে বলে খবর পাই।'
জনতা কার্ফুর আগে ১৪৪ ধারা জারি
২২ মার্চ জনতা কার্ফুর আগে এই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্যই কেবলমাত্র বাসিন্দারা সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই ছ'ঘণ্টার মধ্যে বেড়োতে পারবেন বলে নির্দেশ জারি করা হয়। লকডাউন ঘোষণার পর হটস্পট এলাকাগুলিতে পুলিশি পর্যবেক্ষণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনও কাজে নামে। হটস্পট এলাকায় কেউ বাড়ি থেকে বেড়োতে পারবে না। পুলিশ স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় সকলকে প্রয়োজনীয় খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অসংক্রমণকারীদের
জেলার মেডিক্যাল অফিসার (ডিএমও) ডাঃ এ ভি রামদাস জানিয়েছেন যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসংক্রমণকারীদের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করেন, যাদের মধ্যে সন্দেহজনক উপসর্গ মিলছে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর পুলিশ জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করে যার ফলে পজিটিভ কেসের সংস্পর্শে আসাও শূণ্য হয়ে যায়। রবিবার করোনা আক্রান্ত শেষ ৪৭ বছরের ব্যক্তি, যিনি মধ্য প্রাচ্যের দেশ থেকে এসেছিলেন, তিনিও সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যান বলে সরকারিভাবে জানা গিয়েছে।
মহামারির মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে ঘটতে পারে বড়সড় বিপত্তি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা