সিএএ নিয়ে কেরলের চ্যালেঞ্জ, শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করবে সুপ্রিম কোর্ট
সিএএ নিয়ে কেরলের চ্যালেঞ্জ, শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করবে সুপ্রিম কোর্ট
দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ কেরল সরকার। সিএএ–কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হোক। মঙ্গলবার এই দাবি তুলেই শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের করে পিনারাই বিজয়নের সরকার। ভারতের প্রধান বিচারপতির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এই মামলাটির শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা, কারণ ভারতীয় সংবিধানের ১৩১ নম্বর ধারা মেনে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছে।
১৩১ অনুচ্ছেদটি আসলে কি
১৩১ ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্র ও এক বা একাধিক রাজ্যের মধ্যে সংঘাতের অভিযোগ শুনতে হবে শীর্ষ আদালতকে এবং বৃহত্তর তদন্তের সুযোগ দেয়। ১৯৭৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংবিধানের ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রশ্নে বলেছিল যে যখন রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে এবং যদি এই জাতীয় পার্থক্যের ফলাফল রাজ্যগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে এই বিরোধটি ১৩১ অনুচ্ছেদের আওতায় পড়বে। ১৩১ অনুচ্ছেদের আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেরকম দুটি রায় গত দশকে এসেছিল। ২০১১ সালে, মধ্যপ্রদেশ সরকার বনাম কেন্দ্র সরকারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে কেন্দ্রীয় আইনগুলির বৈধতা নিয়ে ৩২ অনুচ্ছেদের অধীনে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে, অনুচ্ছেদ ১৩১ এর আওতায় নয়। তবে ২০১৫ সালে, ঝাড়খণ্ড বনাম বিহার রাজ্যের মামলার শুনানি করা দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিলেন যে ১৩১ অনুচ্ছেদে কোনও সংবিধানের সাংবিধানিকতা যাচাই করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। পরে এই প্রশ্নটি তিন বিচারকের বেঞ্চে প্রেরণ করা হয় এবং এখনও তা বিচারাধীন রয়েছে।
১৩১ অনুচ্ছেদের আওতায় আবেদনে বলা হয়েছে
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কেরল সরকার এই আইনটি রাজ্য হিসাবে আইনী অধিকার প্রয়োগের পাশাপাশি কেরলের বাসিন্দাদের মৌলিক, বিধিবদ্ধ, সাংবিধানিক এবং আইনী অধিকারের প্রয়োগের সঙ্গে জড়িত বলে দাবী করে ১৩১ অনুচ্ছেদ অনুসারে চ্যালেঞ্জ করেছে। কেরলের আবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ নম্বর ধারায় সকলের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। ২১ এবং ২৫ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে যথাক্রমে বাঁচার অধিকার এবং স্বাধীনভাবে ধর্ম মানার অধিকার। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন এই তিন ধারার বিরোধী। কেরল সরকারের দাবি, সিএএ মূলত একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেই নিশানা করছে। কেরল সরকারের আবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই আইন পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের কথা চিন্তা করছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় যে তামিল হিন্দুরা রয়েছেন, কিংবা নেপালে যে মাধেশি জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের কথা ভাবা হচ্ছে না।' এক কথায় এই আইন নাগরিকদের সমানাধিকার খর্ব করছে।'
কেরলের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিকল্প উপায়
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ৩২ অনুচ্ছেদের অন্তর্গত সিএএ নিয়ে ৬০টি রিট পিটিশনের আবেদন শুনবেন ২২ জানুয়ারি। কিন্তু কেরলের ১৩১ অনুচ্ছেদের অন্তর্গত সিএএ নিয়ে চ্যালেঞ্জের শুনানি সেদিনই হওয়া সম্ভব হবে না। তবে বিকল্প হিসাবে দু'টি উপায় বের করা হয়েছে। প্রথমত কেরলের ১৩১ অনুচ্ছেদের আওতায় আবেদনের শুনানির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন করা, কিন্তু এর অর্থ একই বিষয় নিয়ে দু'টি শুনানি হবে। দ্বিতীয়টি হল পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে এই আবেদনের শুনানি করা।