
কেরলের গ্রামের লক্ষ্য হিন্দিতে ১০০ শতাংশ সাক্ষরতা, জানকী আম্মা এক দৃষ্টান্তের নাম
কেরালার গ্রাম হিন্দিতে ১০০ শতাংশ সাক্ষরতার লক্ষ্যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। এ গ্রামে উল্লেখযোগ্য বাস পরিযায়ী শ্রমিকের। জনসংখ্যার সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তায় এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৭২ বছর বয়সী জানকী আম্মা কেরালার একটি ছোট্ট গ্রামে হিন্দির প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা জানিয়ে এই অভিনব উদ্যোগ শামিল হয়েছেন।

কেরালার গ্রামে ১০০ শতাংশ হিন্দি সাক্ষরতার জন্য একটি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তাঁকে শেখানো সংক্ষিপ্ত বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করেছেন। কেরালা, তামিলনাড়ু-সহ বিভিন্ন রাজ্য যখন 'হিন্দি আরোপ'-এর প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছে এবং নেটিজেনরা এই বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে, তখন জানকী আম্মা এক সেই হিন্দি ডায়লগকে হাতিয়ার করছেন।
তিনি বলেছেন, "এক ঠান্ডি আন্ধেরি রাত সাদাক পে জা রাহা হ্যায়"। অর্থাৎ একটি ঠাণ্ডা অন্ধকার রাতে রাস্তায় নেমে যাওয়া। তাঁর প্রশিক্ষক তাঁকে যা শিখিয়েছিলেন তা তিনি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করেন। গ্রামের উল্লেখযোগ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তায় এই ধরনের উদ্যোগ একটি অগ্নি-স্ফুলিঙ্গের মতো কাজ করেছে বলে মনে হয়।
চেলান্নুরকে একটি সম্পূর্ণ হিন্দি সাক্ষর পঞ্চায়েত ঘোষণা করা যেম উদ্দেশ্য, তেমনই এটা কেরালার প্রথম এবং সম্ভবত দক্ষিণ ভারতে প্রথম পঞ্চায়েত। আগামী বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের কংগ্রেসশাসিত চেল্লানুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তৃপক্ষ ১০০ শতাংশ হিন্দি স্বাক্ষর হয়ে ওঠার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ করতেও শুরু করে দিয়েছে।
এই হিন্দি সাক্ষরতা কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে তাদের প্ররোচিত করার মূল কারণ ছিল পঞ্চায়েতে অভিবাসী শ্রমিকদের বিশাল উপস্থিতি। অবশ্যই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দিকে একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করার জন্য একটি সংসদীয় প্যানেলের সুপারিশ দেয়। দেশে একটি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেওয়ার অনেক আগে কেরালা বা তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। এরই মধ্যে চেলান্নুর গ্রাম পঞ্চায়েত সম্পূর্ণরূপে নিজেকে পরিণত করার প্রচেষ্টা শুরু করেছিল। তাঁদের গ্রামে হিন্দিতে শিক্ষিত করার অভিযান চলছিল। এখন তা ১০০ শতাংশ পূর্ণ করাই লক্ষ্য।
৭২ বছর বয়সী জানকী আম্মা তাঁর শেখা বাক্যটি বারবার পুনরাবৃত্তি করতেন। সম্ভবত জীবন-সন্ধ্যায় এসে নতুন কিছু শেখার জন্য উত্তেজনা থেকেই তিনি নিজেকে দৃষ্টান্তের জায়গায় নিজেকে স্থাপন করেন। জানকী আম্মার মতো শত শত গ্রামবাসী বয়স, লিঙ্গ ও শিক্ষাগত বাধা অতিক্রম করে গ্রাম পঞ্চায়েতে এসে হিন্দি শিখছে।
কেরালার গ্রামে এই হিন্দি সাক্ষরতা অভিযানে লোকেদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিতভাবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই উদ্যোগ গ্রামের সকলকে হিন্দিতে প্রাথমিক দক্ষতায় পৌঁছে দেবে। ক্রমেই তাদের সামাজিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে। পঞ্চায়েত সভাপতি নৌশির পি পি বলেন, এই প্রকল্পের লক্ষ্য ২০ থেকে ৭০ বছর বয়সী প্রতিটি গ্রামবাসীকে হিন্দি সাক্ষর হিসেবে তৈরি করা।
তিনি বলেন, "আমাদের প্রকল্প এবং হিন্দি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক বিতর্কের মধ্যে কোনও সংযোগ নেই। প্রকল্পের ধারণা এবং অন্যান্য মৌলিক কাজগুলি গত বছর শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্প উপস্থাপনের আগে যাঁরা হিন্দি ভালো জানেন না এবং কারা হিন্দি ভাষা শিখতে আগ্রহী তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর জন্য একাধিক কর্মশালা পরিচালিত হয়েছিল। তৈরি করা হয়েছিল একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল।