চোর বদনাম দিয়ে বাবা–মেয়েকে অপদস্থ কেরল পুলিশের, রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
চোর বদনাম দিয়ে বাবা–মেয়েকে অপদস্থ কেরল পুলিশের
এক আট বছরের শিশু ও তার বাবাকে পুলিশ অফিসারের হাতে অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় কেরল হাইকোর্ট কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করল। হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের রিপোর্ট গ্রহণ না করে বরং এই ঘটনায় সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে। তিরুবন্তপুরম জেলার আত্তিঙ্গালে চারদিন আগে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।
বাবা–মেয়েকে অপদস্থ পুলিশের
রাজ্য সরকারের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে মহিলাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা উদ্দেশ্যে 'পিঙ্ক পেট্রোল'-এর দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার কোনও ধরনের ভুল কিছু করেননি বা বাজে আচরণ করেননি, যাতে ওই ছোট্ট মেয়ের মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সরকার তার এই বিবৃতিকে সঠিক প্রমাণিত করতে হাইকোর্টে চারজন সাক্ষীকেও নিয়ে আসে। রাজ্য সকার ওই শিশুকে ক্ষতিপূরণ দিতেও অস্বীকার করে।
কি ঘটনা ঘটেছিল
এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৭ অগাস্ট। ৩৮ বছরের জয়চন্দ্রন ও তাঁর আট বছরের শিশু ইসরো ইউনিটের সরঞ্জাম বহনকারী একটি বিশাল ট্রেলারের গতিবিধি দেখার জন্য আত্তিঙ্গগালের কাছে উপকণ্ঠে প্রধান রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। আচমকা মহিলা পুলিশ অফিসার রেজিতার মনে হয় যে তাঁর মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গিয়েছে এবং তিনি সরাসরি তার জন্য জয়চন্দ্রনকে অভিযুক্ত করেন, যিনি পুলিশ পেট্রোল গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এমনকী ওই মহিলা পুলিশ এও অভিযোগ করেন যে জয়চন্দ্রন তাঁর অপরাধের সহযোগী আট বছরের মেয়ের কাছে মোবাইল ফোনটি দিয়ে দিয়েছেন। রেজিতা প্রকাশ্যেই বাবা-মেয়েকে অপমান করেন এবং তাঁদের নিকটবর্তী পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দেন। এই ঘটনার সাক্ষী হিসাবে ওখানে জমায়েত হওয়া পথচারিরা ছিলেন। পরে রেজিতা তাঁর মোবাইল ফোন গাড়ির মধ্যেই খুঁজে পান। এই গোটা ঘটনাটি একজন পথচারি মোবাইলে ভিডিও করেন এবং তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পরই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ, হাইকোর্টের দ্বারস্থ পরিবার
এটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়ানক ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও কেরল সরকার ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে নরম অবস্থান গ্রহণ করে এবং দাবি করে যে অপদস্থ হওয়ার কারণে ওই ছোট্ট মেয়ে কাঁদেনি বরং মানুষের ভিড় দেখে সে কেঁদে ফেলে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ওই অফিসারকে কোল্লামে বদলি করে দেওয়া হয় শাস্তি হিসাবে। ৩১ অগাস্ট জয়চন্দ্রন রাজ্য পুলিশের প্ররধান অনিল কান্তকে রেজিতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জনান, কারণ তাঁর মেয়েকে প্রকাশ্যে চোরের বদনাম দেওয়ায় তার মেয়ের মানসিক স্থিতি ঠিক নেই। ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনিল কান্ত গোটা ঘটনাটির ও রেজিতার বদলি নিয়েএ তদন্ত করতে বলেন রাজ্যের দক্ষিণ জোনের আইজি হর্ষিতা আট্টালুরিকে। তদন্তে যদিও উঠে আসে যে রেজিতাকে আরও সুবিধাজনক জায়গায় বদলি করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই পরিবার সারাদিন ব্যাপী অবস্থানে বসেন কেরল সচিবালয়ে। যখনন গোটা বিষয়টি কারোর নজরে না পড়ে তখন পরিবার হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শিশুটির পরিবার অভিযোগ করে যে সরকার ওই মহিলা পুলিশ অফিসারকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং শিশুটির প্রাথমিক অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমকে যদিও জয়চন্দ্রন জানান যে তিনি এগিয়ে যাবেন এই মামলা নিয়ে এবং তাঁর আদালতের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
মহিলা পুলিশকে হাইকোর্টের ভর্ৎসনা
২৯ নভেম্বর, বাবা-মেয়েকে পুলিশ অফিসারের অপদস্থ করার ভিডিও দেখার পর আদালত জানায় যে তাঁর আচরণ 'খাঁকি উর্দির প্রতি অহং ও অহংকার বোধকে' ইঙ্গিত করছে। বিচারপতি দেবেন রামচন্দ্রন এটাও পর্যবেক্ষণ করেন যে ছোট শিশুটির কাছে ওই মহিলা অফিসার ক্ষমাও চাননি। তবে এক সপ্তাহ পরে ওই মহিলা অফিসার হাইকোর্টে লিখিতভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা চাআন এবং সেখানে জানান যে তাঁর বাড়িতেও শিশুরা রয়েছে। কিন্তু ওই শিশু বা তার পরিবার কেউই মহিলা অফিসারের ক্ষমা গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না কারণ তিনি আদালতের নির্দেশে এটা করেছেন।
জয়চন্দ্রন ও তাঁর মেয়ের বয়ান রেকর্ড হয়নি
যে মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি পরিবার সম্মুখীন হয়েছেন তার জন্য ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের আবেদন চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পরিবার। এই মামলার শুনানিতে যদিও হাইকোর্ট লক্ষ্য করে যে ৫০ লক্ষ টাকা একটু বেশি পরিমাণ হয়ে যাচ্ছে, তাই ওই অর্থ দেওয়া যাবে না বলেই জানানো হয় পরিবারকে। হাইকোর্টের আদেশে সরকার নতুন করে রিপোর্ট তৈরি করে। শুনানি চলাকালীন জয়চন্দ্রন হাইকোর্টকে জানান যে ওই পুলিশ অফিসার তাঁর ও তাঁর মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি তা প্রমাণ করার জন্য সরকার চারজন সাক্ষীরও বন্দোবস্ত করে ফেলল যা সত্যিই হতবাক হওয়ার মতো ঘটনা। জয়চন্দ্রন হাইকোর্টকে বলেন, 'পুলিশের তদন্তকারী দল এখনও পর্যন্ত আমার ও আমার মেয়ের বয়ান বাদে অন্য সবকিছু করেছে এবং ওই চারজনের বয়ানও নিয়েছে। তারা এই ত্রুটিপূর্ণ মহিলা আধিকারিককে রক্ষা করার চেষ্টা করছে এবং কেউ জানে না কেন রাজ্য সরকার তাঁকে রক্ষা করার জন্য এত অর্থ ব্যয় করছে'।