সোনা পাচারকাণ্ডে অভিযুক্তের ফাঁস হওয়া ভয়েসমেলের তদন্তে কেরল পুলিশ
কেরলের সোনা পাচারকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত স্বপ্না সুরেশের বিরুদ্ধে কেরল পুলিশকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার। একটি ভয়েসমেলের মাধ্যমে স্বপ্না সুরেশ দাবি করেছেন যে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই চক্রের সঙ্গে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের নাম জড়াতে বলছে।

স্বপ্না সুরেশের ভয়েসমেল
বৃহস্পতিবার সকালে এই ভয়েসমেল প্রকাশ করে একটি ওয়েব পোর্টাল এবং তা সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। সুরেশ ইডির বিরুদ্ধে এও অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে না পড়িয়েই বিবৃতিতে তাঁর সাক্ষর নেওয়ার জন্য বাধ্য করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই ভয়েসমেল কিছুক্ষণের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িযে যাওয়ার ফলে বিতর্কের সৃষ্টি হয় এবং এরপরই ডিজিপি (জেল) ঋষিরাজ সিং এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। ডিআইজি অজয় কুমার, যিনি এই ঘটনার তদন্তে রয়েছেন, তিনি তদন্তের নতুন অগ্রগতি নিয়ে জানিয়েছেন যে স্বপ্না সুরেশ স্বীকার করেছেন যে এটা তাঁরই গলার স্বর, কিন্তু তিনি সেটা জেল থেকে পাঠাননি। জেরার সময় স্বপ্না জানান যে এটা তিনি কখন বলেছেন তা মনে করতে পারছেন না। কফেপোসা ধারায় স্বপ্না এই মুহূর্তে তিরুবন্তপুরমের মহিলা সংশোধনাগারে রয়েছেন।

ইডি খারিজ করল অভিযুক্তদের অভিযোগ
এই মামলার অন্য এক অভিযুক্ত তথা শীর্ষ আমলা-মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন সচিব এম শিবশঙ্কর, তিনিও একই অভিযোগ করেন আদালতে। যদিও ইডি গোটা বিষয়টি খারিজ করে দেয়। বহু-এজেন্সির তদন্তের অংশে থাকা এক প্রবীণ কর্মকর্তা জানান যে কেন্দ্রীয় সংস্থার ওপর চাপ তৈরি করার এটি কৌশল ছিল। সিপিআই (এম)-এর রাজ্য সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয় যে কেন্দ্রীয় সংস্থা এই চোরাচালান কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরকে জড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেচে এবং দল এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। তবে বিদেশমন্ত্রী ভি মুরলীধর সাম্প্রতিকতম এই বিতর্কে ঘি যোগ করে জানিয়েছেন যে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এই নাটকগুলি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই দিনগুলোতে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রশংসা করে এসেছেন কিন্তু নিজের দপ্তরে হাত পড়তেই তিনি বিরোধীতা করতে শুরু করলেন।'

বিরোধী দল উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছে
বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি জানিয়েছে যে সোনা পাচার কাণ্ডে এই ভয়েসমেল চলমান তদন্তে অন্তর্ঘাতের পদক্ষেপ এবং এটা উচ্চ-পর্যায়ের তদন্তের দাবি করে এই দুই দল। দু'দিন আগেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন অভিযোগ করেছেন যে জেলে সুরেশের সঙ্গে অনেকেই দেখা করতে আসছেন এবং অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জেলবন্দী সুরেশের সঙ্গে কারা কারা দেখা করতে এসেছেন তার তালিকা চেয়েছেন তিনি। কংগ্রেস ইউনিটের প্রধান মুলাপাল্লি রামচন্দ্রন জানান যে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের নাম এই কাণ্ডে জড়িয়ে পড়া সাম্প্রতিক অগ্রগতি। তিনি এও জানান যে তদন্তকারীরা বিজয়নের কাছে পৌঁছালে তিনি নিজেই নিজের কোটে গোল দিয়ে বসবেন।

ইডির সমন সিএম রবীন্দ্রনকে
দু'সপ্তাহ আগে মুখ্যমন্ত্রী সিএম রবীন্দ্রন, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর অন্য এক সচিব, তাঁকে ইডি সমন পাঠায়। কিন্তু তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ায় তিনি ইডি দপ্তরে হাজিরা দিতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ৫ জুলাই ৩০ কেজি সোনা উদ্ধার হয় করে শুল্ক দপ্তর। আরব আমিরশাহির কনস্যুলেট থেকে সোনাভর্তি ব্যাগটি পাঠানো হয়েছিল। এরপরই তদন্তে নামে ইডি।
প্রতীকী ছবি