দুঃসময়ে কেরল! এই তিনটি প্রধান কারণে ঘটে থাকতে পারে কোঝিকোড়ের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা
একটানা ভারী বর্ষণ ও বন্যার অশনি সংকেতের মাঝেই শুক্রবার রাতেই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কেরলবাসী। শুক্রবার রাতে কোঝিকোড়ে কারিপুর বিমানবন্দরে নামার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এক্স ১৩৪৪ বিমান। রাত পৌনে ৮টা নাগাদ অবতরণের সময় পিছলে গিয়ে দু’টুকরো হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। কিন্তু কি কারণে ঘটল এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা?
দৃশ্যমানতা কম থাকাতেই দুর্ঘটনা?
ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনার আসলে কারণ জানতে বিশেষজ্ঞদের দু'টি দল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই তদন্তকারী দলে আছেন এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো-র বিশেষজ্ঞরা। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৭ জনের। আহত কম পক্ষে ১১২। প্রবল বৃষ্টির কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকাতেই এই এই দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে অবতরণের কারণেই বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে যায়। যদিও এর পিছনে আরও একাধিক তথ্যই উঠে আসছে।
করোনা আবহে বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে ফিরছিল এয়ার ইণ্ডিয়ার বিমান
এদিকে করোনা-পরিস্থিতির আবহে বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে নিয়ে আসছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার এক্স ১৩৪৪ বিমানটি। দুবাই থেকে কোঝিকোড়গামী ওই বিমানে কর্মী ও যাত্রী-সহ মোট ১৯১ জন ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। যার মধ্যে ২ বিমান চালক ৫ বিমানকর্মী ছিলেন। এদিকে এই দুর্ঘটনার ফলে ইতিমধ্যেই কোঝিকোড় বিমানবন্দরের ওই রানওয়ের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কোঝিকোড় বিমানবন্দরের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় রানওয়ে থেকে ছিটকে যাওয়ার পর বিমান প্রথমে ৩৫ ফুট নীচে আটকে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোঝিকোড় বিমানবন্দরের রানওয়েটি বেশ ঢালু। রানওয়ের শেষ মাথায় রয়েছে প্রায় ২০০ মিটার গভীর খাদ। যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাথমিক অবস্থায় সেখানে পৌঁছানোও দুষ্কর। একইসাথে রানওয়েটি পর্যাপ্ত দৈর্ঘ্যেরও নয় বলেও জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
পাইলটদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে দুর্ঘটনা?
বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণ রানওয়ের শেষ প্রান্তের দৈর্ঘ্য থাকে ২৪০ মিটারের আশেপাশে। কিন্তু কোঝিকোড় বিমানবন্দরের শেষ প্রান্তের দৈর্ঘ্য মাত্র ৯০ মিটার। এছাড়া উভয় পাশের জায়গাও কম। যেখানে উভয় পাশের জায়গা থাকার কথা ১০০ মিটার, সেখানে কোঝিকোড়ের রয়েছে মাত্র ৭৫ মিটার। বিমান বিন্দরের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছাড়াও এই ঘটনায় ইতিমধ্যেও পাইলটদের যথেষ্ট প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। সাধারণত প্রতিবছর পাইলটদের অন্তত ২ বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান করোনা মহামারীর কারণে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
করোনা আবহে উঠে আসছে পাইলটদের মানসিক চাপের প্রসঙ্গ
পাশাপাশি গোটা ঘটনায় পাইলটদের মানসিক চাপের বিষয়টি নিয়েও কথা বলছেন অনেকেই। করোনা আবহে গোটা দেশের বিমান পরিববন ব্যবস্থাই বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। চাকরি হারিয়েছেন অগুনতি বিমান কর্মী। সম্প্রতি পাইলটদের বেতন ৬০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা করা হয়েছে। সূত্রের খবর, গত এপ্রিল থেকে এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণে এর জেরে ঘরে বাইরে চাপের মুখে থাকতে পারেন পাইলটেরা।