'আজাদি' কখনই আসবে না, বুঝুন কাশ্মীরিরা, আর কী বললেন সেনাপ্রধান
ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন কাশ্মীরের যুবকদের কারোর কথায় 'অকারণে চালিত হওয়া' উচিত নয়, এবং তাদের বুঝতে হবে 'আজাদি' কখনই আসবে না।
কাশ্মীরের যুবকদের কারোর কথায় 'অকারণে চালিত হওয়া' উচিত নয়, এবং তাদের বুঝতে হবে 'আজাদি' কখনই আসবে না, কারণ নিরাপত্তা বাহিনী সবসময়ই বিচ্ছিন্নতাবাদিদের বিরুদ্ধে লড়বে। সাফ জানালেন ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি কাশ্মীরি যুবকদের হাতে বন্দুক তুলে নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, 'যারা তাদেরকে বোঝাচ্ছে এই পথেই আজাদি আসবে, তারা ভুল বলছে।
২০১৬ সালে লস্কর ই তৈবা কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই কাশ্মীরে যুবকদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত এক বছরে অসংখ্য কাশ্মীরি তরুন সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। তা নিয়ে সেনা প্রধান বলেন, 'এই সংখ্যা (সেনাবাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় এমন জঙ্গিদের) আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় কারণ আমি জানি এই ঘটনা চলতেই থাকবে। এখন যেমন আবার নতুন করে জঙ্গি দলে সদস্য সংগ্রহ চলছে। আমি বলতে চাই বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই, এভাবে কিছু অর্জন করা যাবে না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়।'
অনেকের মতে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কারণেই সাধারণ মানুষ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান। ভারতীয় সেনাদের লক্ষ্য করে ইঁট বৃষ্টি করেন। বিপিন রাওয়াতের মতে এই অভিযোগ ঠিক নয়। সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতার প্রশ্নে তিনি দেখিয়েছেন সিরিয়া ও পাকিস্তানকে। বলেছেন ওইসব দেশ উপত্যকার মতো পরিস্থিতিতে ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে। বিমান হানা চালায়। সে তুলনায় ভারতীয় সেনাবাহিনী অনেক সংযত আচরণ করে। তিনি বলেন, 'অনেক প্ররোচনা সত্ত্বেও আমাদের সেনাবাহিনী অসামরিক নাগরিকদের হত্যা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। তবে সাধারণ মানুষ সেনা অভিযানকে ব্য়হত করার জন্য সেনার ওপর পাথর ছুঁড়লে, নিরাপত্তা বাহিনী আরও আগ্রাসী হয়ে পড়ে।'
তবে সাধারণ মানুষ এসব নিজেদের বিচার বিবেচনায় করছেন বলে মানতে নারাজ বিপিন রাউত। তাঁর মতে এর পেছনে অন্য কোনও পক্ষের ইন্ধন আছে। তারা কাশ্মীরিদের ভুল পথে চালনা করছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, 'আমাদের অভিযান ব্যহত করার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ বেরিয়ে আসছেন। এতেই প্রশ্ন জাগে কারা তাদের উসকাচ্ছে? যদি তারা জঙ্গিদের প্রাণ বাঁচাতেই চান, তাহলে জঙ্গিদের তো বলুন অস্ত্র ফেলে বেরিয়ে আসতে। তাহলেই কাউকে মরতে হয় না। আমরাও অভিযান বন্ধ করে দেব। কিন্তু সাধারণ মানুষ আমাদের অপারেশনে বাধা দেবে আর সন্ত্রাসবাদীদের পালাতে সাহায্য করবে, তা হবে না।' তাঁর মতে ২০১৬-য় বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অবস্থা অনেক ভাল ছিল। কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকেই কাশ্মীরি যুবকরা পাকিস্তানের ফাঁদে আটকে গেছে। তারাই সেনাকে আক্রমণ করার জন্য যুবকদের ক্রমাগত উদ্দীপ্ত করছে'। পাকিস্মাতানিরাই তাদের বোঝাচ্ছে 'আজাদী দূর নাহি।'
কিন্তু কিভাবে এর সমাধান সম্ভব? সেনাপ্রধান কিন্তু সামরিক নয়, রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষপাতি। তাঁর মতে দেশের রাজনীতিবিদদের, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা কাশ্মীরে এসে বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তাঁরাই কাশ্মীরীদের ভুল ভাঙাতে পারবেন, আস্থা ফেরাতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হল রাজনীতিবিদরা এখানে আসতে ভয় পান। আশঙ্কা করেন তাদের এপর হামলা হতে পারে। তাই আপাতত সেনাপ্রধান চান, কাশ্মীরী যুবকরা নিজেদের ভালর জন্যই এটা বুঝে নিন আজাদী অনেক দূরের কেন, একটি অসম্ভব ব্যাপার।