রোজ ৩৪২ কিলোমিটারের ডেইলি প্যাসেঞ্জারি! কর্ণাটকের এই মন্ত্রীর গল্প ভীষণ অদ্ভুতুড়ে
বাস্তু মিলিয়ে বেঙ্গলুরুতে কোনও বাড়ি পাননি, তাই কর্ণাটকের পিডব্লিউডি মন্ত্রী এইচডি রেভান্না রোজ ৩৪২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কার্যালয়ে যাতায়াত করেন।
তিনি কর্ণাটকের পিডব্লুটি মন্ত্রী। ডেজিএস-এর সর্বোচ্চ নেতা এইচডি দেবগৌড়ার পুত্র তথা মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমার স্বামীর ভাই। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে তাঁরই নাকি থাকার জায়গা নেই। অগত্যা হোলেনার্সিপুরার বাড়ি থেকেই রোজ যাতায়াত করেন বিধান সৌধে। পারি দিতে হয় ৩৪২ কিলোমিটার পথ। কী করা যাবে বেঙ্গালুরুর কোনও বাড়িরই যে বাস্তু মিলছে না। আর বাস্তু বা জ্যোতিষের সঙ্গে আপোষ, এইচডি রেভান্না কখনই করবেন না।
বেঙ্গালুরুতে অবশ্য একটি সরকারি বাংলো বাস্তু মিলিয়ে তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে। পূর্ব কুমারাক্রুপা পার্কের গান্ধী ভবনের কাছে এক একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত সেই বাংলোটি এখনও ছাড়েননি এইচ সি মহাদেবাপ্পা। তাই রোজ ৩৪২ কিলোমিটারের পথশ্রমে দ্বিধা নেই এইচডি রেভান্নার।
তাঁর সকাল শুরু হয় ভোর ৫টায়। ঘুম ভাঙার পর স্নান ও পূজাপাঠ সেরে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্ষন্ত তিনি এলাকার মানুষের অভাব অভিযোগ শোনেন। তারপর হোলেনার্সিপুরার বাড়ি থেকে তিনি বের হন বিধান সৌধের উদ্দেশ্য। পথে খান ছয়েক মন্দিরে পূজো দেন। সকাল ৯টায় পথেই এক হোটেলে তিনি প্রাতরাশ সাড়েন। ১১টা নাগাদ বিধানসৌধে পৌঁছে প্রথমে অধিবেশনে যোগ দেন, তারপর দপ্তরের নানা মিটিং ও অন্যান্য কাজ সামলান। তারপর যান বাবা ও বোনের সঙ্গে দেখা করতে। আবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি রওনা হন হোলেনার্সিপুরার উদ্দেশ্যে। রাত ১১টায় বাড়ি পৌঁছান তিনি।
মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই এরকমটা চলে আসছে। মন্ত্রীর কথায়, 'কিছু করার নেই রে ভাই, বেঙ্গালুরুতে তো আমার কোনও বাড়ি নেই।' কিন্তু রেভান্না এতদিন বেঙ্গালুরুর মহামেডান ব্লকের একটি বাড়িতে থাকতেন। তিনি জানিয়েছেন, সেইটি তাঁর বোনের বাড়ি। বোনের বাড়িতে বছরের পর বছর থাকাটা ভাল দেখায় না। তাছাড়া সদ্য বিয়ে হয়েছে রেভান্নার বড় ছেলে ডা. সুরজের। তারপর থেকে সস্ত্রীক সুরজ ওই বাড়িটিতেই থাকেন।
রেভান্নার এই বাস্তু বা জ্যোতিষ নির্ভরতা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে জনতা দল সেকুলারের সদর দপ্তর জেপি ভবন নির্মাণের সময় বাস্তু মিলছিল না বলে, রেভান্না ভবনটির সিঁড়ি ভেঙে নতুন করে গড়িয়েছিলেন। এমনকী তাঁর ভাই তথা কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণের সময় ইত্যাদিও তিনিই জ্য়োতিষীর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে দিয়েছিলেন।
জোট সরকারকে দীর্ঘায়ু করতেও তাঁর এই জ্যোতিষভক্তির অবদান আছে। মন্ত্রীসভার বিভিন্ন বৈঠক থেকে কর্মসূচীর সময়ও রেভান্নার সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হয়। কাজেই বাস্তু না মিললে যত কষ্টই হোক আপোষ যে তিনি করবেন না তা বলাই বাহুল্য। তাতে জনগণের টাকায় তেল পুড়িয়ে ৩৪২ কিলোমিটার পারি দিতে হলেও, কুছ পরোয়া নেহি।