জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার জীবনী: রাজবংশের অন্দরমহল থেকে রাজনীতির অলিন্দের সফর একনজরে
রাজবংশের অন্দরমহল থেকে রাজনীতির অলিন্দে, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার জীবনী একনজরে
রাজবংশের সন্তান তিনি। এককালে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় রাজত্ব করেছে তাঁর পরিবার। আর সেই সিন্ধিয়া রাজবংশের সন্তান হলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। যাঁকে ঘিরে মধ্যপ্রদেশ রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। ভারতীয় রাজনীতির এই তরুণ তুর্কীর মধ্যে বহু বছর আগে 'সম্ভাবনা' দেখেছিলেন প্রয়াত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। এমন এক উজ্জ্বল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবন সফর এবং রাজনৈতিক সফর কম উজ্জ্বল নয়! হার্ভাডের ছাত্র জ্যোতিরাদিত্য কীভাবে ভারতীয় রাজনীতির একটি বড় 'মুখ' হয়ে উঠছেন , তা দেখে নেওয়া যাক।
গোয়ালিয়ারের রাজবংশের সন্তানের শুরুর দিকে কথা...
বাবা মাধব রাও সিন্ধিয়া ছিলেন কংগ্রেসের দাপুটে নেতা তথা দেশের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মা মাধবী রাজে সিন্ধিয়া ছিলেন নেপালের কাসকি রাজবংশের সন্তান। মাধবীর বাবা শমশের জং বাহাদুর রানা ছিলেন নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এমন এক পরিবারে ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি জন্মেছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। যাঁর বাবার বংশ মারাঠা রাজত্বের ইতিহাসে আজও উজ্জ্বল। আর যাঁর মায়ের বংশ নেপালের রাজ ঘরানার অন্যতম নাম।
ছেলের জন্মের বছর থেকেই মাধব রাও লোকসভা ভোট জিততে থাকেন
১৯৭১ সালে মাধব রাও সিন্ধিয়া প্রথমবার ২৬ বছর বয়সে মধ্যপ্রদেশের গুনা কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোট জেতেন। আর সেই বছরই সিন্ধিয়া রাজ বাংশে জন্ম নেন জ্যোতিরাদিত্য। এরপর টানা ৩০ বছর ওই কেন্দ্র থেকে জেতেন মাধব রাও। এদিকে, ছোট্ট জ্যোতিরাদিত্যর স্কুলজীবনের শুরু হয়ে যায় । দেরাদুনের দুন স্কুল থেকে পঠন পাঠন আক্ষরিক অর্থে শুরু করেন জ্যোতি। এরপর ১৯৯৩ সালে হার্ভাড থেকে স্নাতক হন তিনি। তাঁর বিষয় ছিল অর্থনীতি। এরপর ২০০১ সালে স্ট্যান্জফোর্ডের গ্যাজুয়েট স্কুল অফ বিজনেস থেকে জ্যোতিরাদিত্য পাশ করেন এমবিএ।
গোয়ালিয়ারের সর্বশেষ রাজা ও এক রাজবংশে বেড়ে ওঠা
জ্যোতিরাদিত্যর দাদু জিভাজিরাও সিন্ধিয়া ছিলেন গোয়ালিয়ারের শেষ মহারাজা। যাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সন্তান মাধব রাও কেবল 'মহারাজা' উপাধিটি পান, তবে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, তিনি কোনও মহারাজকীয় সুযোগ-সুবিধা পাননি। এমন এক পরিবারে একাধিক নিয়ম , কানুন, নিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। রাজ ঘরানার একাধিক নিয়ম কানুনও ততদিকে জেনে নিতে হচ্ছিল তাঁকে।
আরও এক রাজ পরিবারে বিয়ে!
রাজঘরানায় বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক নিয়ম মেনে এরপর জ্যোতিরাদিত্যর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় বরোদার গায়কোয়াড় রাজবংশের মেয়ে প্রিয়দর্শিনীর। বর্তমানে তিনি ২ সন্তানের বাবা। এদিকে, জ্যোতিরাদিত্যর জীবন সফর যখন একের পর এক মাইলস্টোন পার হচ্ছে তখন ২০০১ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় আচমকা মৃত্যু হয় তাঁর বাবা মাধব রাও সিন্ধিয়ার। ২০০১ সালের সেই ঘটনার পর থেকেই জ্যোতিরাদিত্যও রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
গুনা কেন্দ্রের আসন তখন খালি.. এরপর এলো ১৮ ডিসেম্বর
মাধব রাও সিন্ধিয়ার মৃত্যুর পর গুনা লোকসভা কেন্দ্রটি খালি হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই বাবার মতোই কংগ্রেসের দিকে জ্যোতিরাদিত্য ঝুঁকবেন কি না , তা নিয়ে জল্পনা ছিল। যদিও জ্যোতিরাদিত্যর ঠাকুমা রাজমাতা বিজয় রাজে , পিসি বসুন্দরা ও যশোধরারা ততদিনে বিজেপির সদস্যদের মধ্যে অন্যতম 'নাম' হিসাবে পরিচিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ১৮ ডিসেম্বর ২০০১ সালে কংগ্রেসের হাত ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে পা রাখেন জ্যোতিরাদিত্য।
প্রথম জয়ের স্বাদ!
২০০২ সালে ১৯ জানুয়ারি গুনা লোকসভা আসনে প্রথম ভোট যুদ্ধ লড়েন জ্যোতিরাদিত্য। একসময় যে আসন টানা ৩০ বছর দখলে রেখেছিলেন তাঁর বাবা মাধব রাও, সেই আসনকে দখলে রাখাই ছিল জ্যোতিরাদিত্যর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই কেন্দ্রে বিজেপিকে ৪৫০,০০০ ভোটে হারিয়ে দেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল হতে শুরু করেন এই তরুণ তুর্কী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ থেকে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের জয়ের কাণ্ডারী!
২০০২ সালে ফের গুনা কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোট জিতে সোজা কেন্দ্রের তথ্য ও সম্প্রচার দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়ে যান জ্যোতি। তারপর থেকে কংগ্রেসের যুব নেতা হিসাবে মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে ফেলতে থাকেন হার্ভাডের প্রাক্তন ছাত্র জ্যোতিরাদিত্য। এরপর আসে ২০১৮ সালের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে কংগ্রেসের জয়ের মূল হোথা ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। মনে করা হয়েছিল তিনিই মধ্যপ্রদেশের তখতে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে। তবে বাধ সাধে কংগ্রেস নেতত্ব।
ক্রিকেটপ্রেমী জ্যোতিরাদিত্য ও সাংগঠনিক শক্তি জোরদার
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ক্রিকেট প্রেম বহুদিনের। আর সেই সূত্র ধরে তিনি মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। এমন পদে বসেও ক্রিকেটীয় রাজনীতির ক্ষমতার অলিন্দেও তিনি উঠে আসেন। ভারতীয় ক্রিকেটে দুর্নীতি নিয়েও বহুবার মুখ খুলেছেন জ্যোতিরাদিত্য।
রাজবংশ সূত্রে পাওয়া ক্ষমতা
মধ্যপ্রদেশের সিন্ধিয়া স্কুলের প্রেসিডেন্ট তিনি। রাজকীয় পদমর্যাদায় তিনি এই দায়িত্ব পেয়েছেন। এছাড়াও রাজবংশের সন্তান হওয়ায় সিন্ধিয়া পরিচালিত ইন্দোরের ডালি কলেজের নিয়ন্তা কমিটির প্রধানও তিনি। এককালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য।
সম্পত্তির পরিমাণ
জানা যায়, ২৫ কোটি টাকার শুধু বিনিয়োগই রয়েছে জ্যোতিরাদিত্যর। এছাড়াও পিতৃদত্ত ২০ ,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি তিনি পেয়েছেন রাজবংশের সন্তান হিসাবে। যদিও এই সম্পত্তি নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। বিদেশে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে ১৬ কোটি টাকার। গয়নার পরিমাণ ৫.৭ কোটি টাকা ।
সনিয়াকে চিঠি লেখার পরেই পাল্টা ব্যবস্থা কংগ্রেসের, বহিষ্কৃত জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া