রাহুল 'মোদী' পদবীকে নিশানা করতেই প্রধানমন্ত্রী জাতপাতের আইডেন্টিটি পলিটিক্স খেললেন চাতুরির সঙ্গে
নির্বাচনী কৌশল কাহারে বলে, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর থেকে শিক্ষণীয়। মুখে তিনি যদিও বলেন যে তিনি উন্নয়নের ব্যাপারী এবং উন্নয়ন ছাড়া আর কিছু নিয়ে তিনি ভাবিত নন, বাস্তবে তিনি কিন্তু অবস্থা বুঝে ব্যাট করেন।
বুধবার, ১৭ এপ্রিল, মহারাষ্ট্রের মাধা লোকসভা আসনের (মাধাতে ভোট আগামী ২৩ এপ্রিল) অন্তর্গত সোলাপুর জেলার আকলুজে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদী সরাসরি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেন। আক্রমণটি আসলে ছিল প্রতি আক্রমণ। মহারাষ্ট্রের সম্প্রতি রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন যে সব চোরেরই নাম"মোদী" রয়েছে। নীরব মোদী এবং ললিত মোদীর নামের উদাহরণ দেন।

রাহুল পুরো অনগ্রসর শ্রেণীকেই চোর বলেছেন, পাল্টা আক্রমণে মোদী
সেই বিষয়টি তুলে এদিন মোদী পাল্টা রাহুলকে দিয়ে বলেন যে তিনি যেহেতু অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ, তাই তাঁকে কংগ্রেস এবং তার জোটসঙ্গীরা তাঁকে বারেবারে আক্রমণ করেছে।
আর এবারে শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বিরোধীরা সমস্ত অনগ্রসর সম্প্রদায়কেই চোর বলে অপমান করেছে। মোদী অভিযোগ করে বলেন যে অনগ্রসর শ্রেণীর প্রতি বিরোধীদের কী মনোভাব, তা এই আক্রমণ দেখেই বোঝা যায়।

বিরোধীদের আক্রমণের সামনে মোদী নিমেষে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নেন
মোদীর এই কৌশল লক্ষ্য করা গিয়েছে আগের অনেক নির্বাচনেই। বিরোধীদের আক্রমণের সামনে প্রধানমন্ত্রী কায়দা করে যেভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর নিজের পরিচয়টিকে মিলিয়ে দিয়ে লড়াইটি বিরোধীদের সঙ্গে মানুষের করে দেন, তা লক্ষ্যণীয়। এই স্ট্র্যাটেজিটি কার্যকর কারণ এতে মুহূর্তের মধ্যে একটি উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ তৈরী করে নিজেকে সুবিধেজনক জায়গায় প্রতিস্থাপন করে জনসাধারণের সমর্থন কুড়োনো যায়।
[আরও পড়ুন:সাতসকালেই ভোট, দক্ষিণের রাজনীতিবিদ থেকে অভিনেতাদের]

মোদী সাধারণত জাতপাতের ঊর্ধ্বে থাকলেও প্রয়োজনে তিনি সে তাসও খেলেন
মোদীর এই রাজনৈতিক চালটি কিন্তু তাঁর নেতৃত্বের সঙ্গে বা প্রশাসক ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খায় না। মোদীর মুখে জাতপাতের কথা সেভাবে শোনা যায় না। দু'হাজার চোদ্দোর সেই বিরাট জনাদেশ পাওয়ার জন্যে তাঁকে জাতপাতের কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। জাতপাতভিত্তিক রাজনীতি যাঁরা করে, সেই সমস্ত নেতৃত্বের সঙ্গে মোদীর এই পার্থক্যটি নিয়ে গর্বই অনুভব করেন তাঁর সমর্থকরা। কিন্তু মাধার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী দেখালেন যে দরকার পড়লে তিনি জাতপাতের প্রাসঙ্গিকতা টানতেও পিছপা নন।
আর সেই টানার কর্মটি যথেষ্ট সুচিন্তিতভাবে করা।
বিরোধীরা যখন"মোদী" পদবীকে আক্রমণ করে তাঁর"গান্ধী" পদবীকে নিশানা করার পাল্টা চাল দিচ্ছেন, বিজেপির শীর্ষ নেতা সেটাকে বদলে দিচ্ছেন সমস্ত অনগ্রসর শ্রেণীর অপমানে। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতির প্রশ্নে বিরোধীদের শক্তিশেলকে প্রতিহত করা যাচ্ছে, উচ্চবর্গ-প্রিয় বিজেপিকে অনগ্রসর শ্রেণীর মধ্যেও জনপ্রিয় করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
ওয়াহ, মোদীজি, ওয়াহ!
[আরও পড়ুুন:ফিরদৌসকে ভোটের প্রচারে নামানো তৃণমূল কংগ্রেসের সেমসাইড গোল ]