আসন্ন হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে তুরুপের তাস হতে পারেন জেলবন্দি গুরু রাম রহিম
আসন্ন হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে তুরুপের তাস হতে পারেন জেলবন্দি গুরু রাম রহিম
শনিবারের বিকেলে যেন হঠাত্ই প্রানবন্ত হয়ে উঠল হরিয়ানায় ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান কর্যালয় প্রাঙ্গন। এদিন বিকেল ৪টে নাগাদ হরিয়ানার শির্সা শহরে ডেরার মূল কার্য্যালয়ে লাউডস্পিকারে 'পিতাজী’ধ্বনিতে জয়ধ্বনি উঠতেই যেন সাড়া পরে গেল জেলবন্দি গুরু রাম রহিমের অগুনতি ভক্তদের মধ্যে। তার দুজন মহিলা অনুগামীকে ধর্ষণ ও সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতি খুনের মামলায় ইতিমধ্যেই যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা পেয়ে জেল বন্দি স্বঘোষিত ধর্মগুরু তথা ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম।
২০১৭তে দোষী গুরু রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ডেরার অনুগামীদের রাজ্যজুড়ে হিংসার ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল প্রায় ৩০জনের। তারপর দুবছর কেটে গেলেও ভক্তের ভক্তিতে একটুকও ভাটা পড়েনি। আজও অগুনতি ভক্তকে প্রত্যহ ডেরা সাচ্চা সৌদার এই প্রধান কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়। অন্যদিকে ২০১৭-র হিংসাত্মক ঘটনার রেশ টেনে কংগ্রেস, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল সহ জম্নায়াক জনতা পার্টির সদস্যরা বারংবার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের সরকারের উপর তোপ দাগতে থাকেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের ধারণা স্বাভাবিকভাবেই যার রেশ গিয়ে পড়বে ২০১৯শের অক্টোবরে হতে চলা ওই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে। যদিও বিরোধীদল গুলি ডেরার পরবর্তী পদক্ষেপের আঁচ অনুসরণ করে খুবই সন্তর্পনে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। অনেক ডেরা সাচ্চা সৌদার অনুগামীকেই বলতে শোনা যায় পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ একাধিক নির্বাচনক্ষেত্রেই তাদের অবাধ বিচরণ রয়েছে।
ডেরা সাচ্চা সৌদার মুখপত্র 'সাচ কাহো’ সম্পাদক প্রকাশ সিং সারওয়ারা জানান নির্বাচনী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তাদের একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দল রয়েছে। তিনি আরও জানান তারা ডেরার ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কর্মপ্রনালী ঠিক করার পাশাপাশি ভোটের সময় সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও করে থাকে। ডেরার প্রধান কার্যালয়ে তার অফিসে বসে সারওয়ারা জানান, এই বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান কাজই হচ্ছে ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা চালিয়ে তাদের অনুগামীদের রাজনৈতিক মনোভাব বোঝা। তিনি আরও বলেন 'নির্বাচনী প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ উঠতে শোনা গেছে আমাদের বিরুদ্ধে, যা সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যে। আমরা তাদেরই নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করারা অনুমোদন দিই যারা আমাদের সমস্ত নীতি অনুসরণ করে মানুষের সামগ্রিক সেবার কাজে লাগতে পারবে। 'পাশাপাশি তিনি এও স্বীকার করে নেন ২০০৯ সালে তারা কংগ্রেসকে সমর্থন করলেও ২০১৪ সালে তারা বিজেপিকে সমর্থন করেন। কিন্তু তিনি এও বলেন 'আমাদের কংগ্রেস থেকে বিজেপিকে সমর্থনের কারণ যদি কেউ ভেবে নেয় গুরু রাম রহিমের উপর চলা সিবিআই তদন্তের কারণে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা তাহলে তা একদমই ভুল হবে। আমাদের মনে হয়েছে বিজেপি আদর্শগত ভাবে অনেক স্বচ্ছ ও কংগ্রেসের তুলনায় অনেক কম মাংস ভক্ষন করে, তাই আমরা তাদের সমর্থন দিয়েছে। ’
অন্যদিক খুন হওয়া সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতির পুত্র অংশুল ছত্রপতি এই প্রসঙ্গে অভিযোগ করেন 'অস্ত্র ব্যবসা ও সিবিআই তদন্তের ভয়েই ডেরা বিজেপির তালে তাল মেলাচ্ছে। বর্তমানে এই একই কারণে তারা প্রায় একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। ’এই বিষয়ে তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন 'গুরু রাম রহিম জেলে যাওয়ার পর থেকে কারা ডেরায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা ডেরার কাছে রয়েছে। তাদের ব্লক প্রতিনিধিরা তাদের ডেরায় ফেরাতে তাদের মনে ভয় সৃষ্টি করে বলছেন তারা ডেরায় ফিরে না এলে তাদের অভিশাপ দেওয়া। এমনকি তাদের এটাও বোঝানো হচ্ছে যে রাম রহিমের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুধুমাত্র তার ক্ষমতা কমানোর উদ্দেশ্যে একটা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার খেলা। অথবা তাদের এও বলা হচ্ছে যে গুরু রাম রহিম জেলে আছেন সেখানে ডেরার যে সমস্ত অনুগামীদের গুরুর কৃপা দরকার তাদের সাহায্যের জন্য।’
সাম্প্রতিক কালে ডেরার উপর লেখা একটি বইয়ের লেখক অনুরাগ ত্রিপাঠী বলেন 'হরিয়ানার কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ডেরা অনুসারীরা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে বিজেপি থেকে শুরু করে কংগ্রেস এবং একাধিক আঞ্চলিক দলও তাদের কাছে আসছে সমর্থনের আশায়। ’ শির্শায় সংসদের প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য অশোক তানওয়ার মনে করেন এখনও হরিয়ানা জুড়ে ডেরার সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাব কায়েম রয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন 'ডেরার মামলাটি আদালতের বিচারাধীন হলেও তাদের প্রভাব উপেক্ষা করা যায় না’। যদিও ডেরার অন্যতম সদস্য রামপাল ইনসান এবং ডেরার রাজনৈতিক শাখার অন্যান্য সদস্য এবং বিজেপি নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে ডেরার প্রভাব সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডেরার সদর দফতরের পাশে একটা ছোট জলখাবারের দোকান চালায় ডেরার আর এক অনুসারী ভারত সিং। তিনি বলেন 'ডেরায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কমলেও এখনও প্রায় প্রতিদিন দেড় হাজারের কাছাকাছি জনসামাগম হয়। রাম রহিমের উপদেশ গুলি রোজ বিকেল ৪টে থেকে ৫টা অবধি প্রজেক্টরের মাধ্যমে ভক্তদের দেখানো হয়। একই সাথে চলে স্তবগান।’ ভারত সিং আরও বলেন 'একইসাথে রবিবার সকাল ১১টা থেকে 'সাবধানী’ নামক দু'ঘণ্টার একটা বর্ধিত অধিবেশন বসে। যাতে প্রায় ৫০০০ দর্শকের উপস্থিতি দেখা যায়।’
প্রত্যেক শনিবার ডেরা অনুগামীরা স্বপরিবার শির্শা শহরে ডেরার সদর দফতরে এসে পৌঁছান। কড়া নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে ২নং গেট দিয়ে শুধুমাত্র মহিলারা প্রবেশ করতে পারেন আর ১নং গেট নির্ধারিত পুরুষদের জন্য। অন্যদিকে ২০১৭-র হিংসাত্মক ঘটনার ফুটেজ মিডিয়ার হাতে চলে যাওয়ায় থেকেই ডেরা সাচ্চ সৌদার এই প্রধান কার্যালয়ে মিডিয়ার প্রবেশ নিষিদ্ধ।
ডেরার আর এক অনুসারী শ্বেতা ইনসান জানান তিনি তার ১১ বছরের পুত্রের সঙ্গে ডেরার সদর দফতরে মাসিক পরিদর্শনে এসেছিলেন। যদিও মাঝে মাঝে তিনি তার স্বামীর সঙ্গেও এখানে আসেন বলে জানান বছর ৩৬-র ওই মহিলা। জেলবন্দি রাম রহিম প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সুস্পষ্ট ভাবে জানান 'এরপর আমি কাকে ভোট দেব সেটা একদমই চিন্তার বিষয় নয়। তিনি জেলে যাওয়ার আগেও আমার মনে তার সম্পর্কে যে জায়গায় ছিল আজও আমার কাছে তিনি একই আসনে আছেন। ’
[ সনিয়া হলেন 'মরি হুয়ি চুহিয়া'! খাট্টারের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ক্ষমা চাওয়ার দাবি কংগ্রেসের]