স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাণীকুমার মিত্রের বাড়িতে আয়কর তল্লাশি, মিলল কোটি কোটি টাকা
চিকিৎসকের বাড়িতে আয়কর হানা। প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাণীকুমার মিত্রের বাড়িতে শুক্রবার থেকে হওয়া এই তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের একাধিক জায়গায় তল্লাশি
শহরের এক নামী চিকিৎসকের বাড়িতে আয়কর হানায় মিলল কোটি কোটি টাকা। প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাণীকুমার মিত্রের বাড়িতে শুক্রবার থেকে হওয়া এই তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের একাধিক জায়গায় একযোগে এই তল্লাশি চলে।
আয়কর বিভাগ সূত্রে খবর, ওই চিকিৎসকের ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের আয়ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখে নোটিস দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু নোটিসকে গুরুত্ব দেননি ওই চিকিৎসক। এরপরেই তাঁর বাড়ি ও চেম্বারের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে আয়কর বিভাগ। চিকিৎসক স্ত্রী ও ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে আলিপুরের বাড়িতে হানা দেন আয়কর আধিকারিকরা।
শুধু কলকাতায় নয়, পূর্ব ভারত এমন কি বাংলাদেশের স্ত্রীরোগ চিকিৎসায় পরিচিত নাম বাণীকুমার মিত্র। পূর্বের স্ত্রীর মৃত্যুর পর শ্বশুরমশাইয়েরও মৃত্যু হয়। সেখান থেকেই বোকারোর বিশাল সম্পত্তির মালিক হন এই চিকিৎসক। বেহালার বকুলতলার কাছে নিজের একটি বাড়িতেই 'সার্জি সেন্টার' নামে একটি বন্ধ্য়াত্ব চিকিৎসার কেন্দ্র আছে তাঁর। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ্যাত্ব নিরাময় কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত তিনি। সূত্রের খবর, নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছ থেকে গর্ভধারনের জন্য তিনি নিতেন ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বাংলাদেশ থেকেও আসতেন রোগীরা। জটিল সমস্যার জন্য ফি ছিল আরও বেশি। তৎকাল রোগী দেখার বন্দোবস্তও ছিল। স্বভাবতই সেখানকার ফি থাকত বেশি। অভিযোগ, বেশিরভাগ লেনদেনই হতো বিনা রসিদেই। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগেই আয়কর কর্তারা তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
শুক্রবার রাত থেকে তল্লাশি শুরু হলেও, শনিবার তাঁর চেম্বারের সামনে হাতে লেখা কাগজ সাঁটা ছিল। তাতে লেখা ছিল চেম্বার সাময়িকভাবে বন্ধ। যাঁরা বাণীকুমার মিত্রের কাছে দেখাতে এসেছিলেন তাঁদের গলায় ছিল উৎকণ্ঠা।
কলকাতা ও বোকারোর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির সঙ্গে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও চালান আয়কর আধিকারিকরা। বাড়ির আলমারি, সুটকেসসহ একাধিক জায়গায় সাজানো ছিল নতুন নোট। বেশ কিছু পরিমাণ পুরনো নোটও মিলেছে তাঁর হেফাজত থেকে। টাকা গোনার মেশিন এনে টাকা গোনেন আয়কর আধিকারিকরা। বেহালা, নিউআলিপুরের যে সমস্ত ব্যাঙ্কে ওই চিকিৎসকের অ্যাকাউন্ট আছে, সেইসব ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন আয়কর আধিকারিকরা।
কলকাতার বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে আয়কর হানা হলেও, চিকিৎসকের বাড়িতে আয়কর হানা এই প্রথম। আয়কর বিভাগ সূত্রে খবর, শহরের আরও বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগ থাকায়, তাঁরাও তালিকায় রয়েছেন।