অস্ত্র না নিয়েও স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব,পথ দেখিয়েছিলেন তিনি, মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা রামনাথ কোবিন্দের
অস্ত্র না নিয়েও স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব,পথ দেখিয়েছিলেন তিনি, মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা রামনাথ কোবিন্দের
২ অক্টোবর, শুক্রবার জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে গান্ধী জয়ন্তী। তাঁর আদর্শ ও শিক্ষা আজও আমাদের চলার পথে পাথেয়। বিশ্বের দরবারে যে সমস্ত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব তাঁদের ছাপ ছেড়ে গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।
জেলেও গান্ধীজি একইরকম নিয়মে চলতেন
অসহযোগ ও নাগরিক অবাধ্যতা প্রচারের ওপর প্রবন্ধ লেখার জন্য গান্ধীজি ১৯২২ সালে জেলে যান। তাঁর সহযোগী শঙ্করলাল বাঙ্কার তিনিও জেলে ছিলেন গান্ধীজির সঙ্গে। শঙ্করলাল দেখেন, মহাত্মা রোজ তাঁর দিন শুরু করেন ভোর চারটের সময় এবং রাত পর্যন্ত তিনি একটুও সময় নষ্ট করেন না। প্রতিদিন তিনি ছ'ঘণ্টা করে চরকা কাটতেন এবং ধর্মগ্রন্থ অধ্যায়নের মাধ্যমে তিনি তাঁর সময়কে ধরে রাখতেন। শঙ্করলাল অত্যন্ত উদ্দীপিত হয়ে গান্ধীজির এই রোজের জীবনের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহী হন এবং গান্ধীজিও তাঁর সময়সূচি বেঁধে দেন। শঙ্করলালকে ছেড়ে দেওয়া হয় গান্ধীর অনেক আগেই, তবে শঙ্করলাল জানিয়েছিলেন যে তিনি জীবনে নতুনভাবে বাঁচার শিক্ষা পেলেন। গান্ধীজি তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর এই শিক্ষা যেন শঙ্করলাল সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। গান্ধীজি এরপর তাঁকে প্রশ্ন করেন যে তাঁর কি কোনও ধারণা রয়েছে মানুষ কিভাবে প্রতিক্রিয়া করবে। শঙ্করলাল ঠিক বুঝতে পারেনা গান্ধীজি কথা। গান্ধীজি তখন বলেন, ‘আমি তোমায় বলছি সকলে কি বলবে। তাঁরা বলবে, তিনি হলেন মহাত্মা এবং তিনি এ ধরনের জাবন যাপন করতেই পারেন। আমরা পারব না।' গান্ধীজি তখন শঙ্করলালকে বলেন যে তিনি যেন সকলকে জানান যে গান্ধীজি মহাত্মা হয়ে জন্মাননি। মহাত্মা বলেন, ‘আমারও অনেক ব্যর্থতা রয়েছে এবং আমি খুব সতর্কভাবে ও নিরলসভাবে সেগুলিকে সরিয়ে ফেলার জন্য কাজ করছি। আমাকে মানুষ মহাত্মা বললেও, আমি তার থেকে অনেক দূরে রয়েছি। তবে এই পথটি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং প্রতিটি পুরুষ ও মহিলা যদি সেটির মধ্য দিয়ে চিন্তা করে এবং আত্মবিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে সেই দিকে অগ্রগতি করতে পারে তবে সেও মহাত্মা হতে পারে।'
গান্ধীজি দুর্বল দকগুলি বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন
গান্ধী জয়ন্তিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ লেখেন এটি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গান্ধীজির ১৫১তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করছি, তাঁর উপদেশকে চিন্তা করে। এই চিন্তা সমপরিমাণে নম্র ও ক্ষমতায়ন করেছে আমাদের। তিনি নিজেকে কখনও মহান আত্মা বলে দাবি করেননি। প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর দুর্বল দিকগুলি বিশ্বের কাছে তুলে ধরলেন। তবুও তিনি সর্বাধিক মানবিক সম্ভাবনা উপলব্ধি করার সেরা উদাহরণ। যদিও তাঁর অর্জনগুলি আমাদের কাছে অতিমানবিক বলে মনে হয়। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন মহাত্মার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদনে যা বলেছেন তা সত্য এবং বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয় যে দাঁতযুক্ত হাসিওয়ালা একজন দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তি অস্ত্র হাতে না নিয়েও স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব করতে পারতেন।'
নিজের প্রচেষ্টায় গান্ধীজি মহাত্মা হয়েছেন
রামনাথ কোবিন্দের কথায় জানা যায়, ‘গান্ধীজি আমাদের বলেছিলেন, তিনি সাধারণ শিশু ছিলেন এবং খুবই দুর্বল। পার্থক্যটি হল তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর নৈতিক ভিত্তির ওপর কাজ করেছিলেন। যুবক বয়স তিনি খুব লাজুক ও আত্মবিশ্বাসহীন ছিলেন, তবে তিনি তাঁর নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী সুসংহত করেছিলেন। তাঁর এই অনবরত প্রয়াস তাঁকে উন্নততর মানুষ হওয়ার এবং তাঁর চারপাশের লোতদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হওয়ার এই অবিরাম প্রচেষ্টা তাঁকে সকলের কাছে মহাত্মা করে তুলেছিল। এই পথটি অবশ্যই খুব কঠিন। পথে অনেক ব্যর্থতা এসেছে। কিন্তু তিনি ক্রমাগত সেই পথে চলে গিয়েছেন, একটা সময় একটাই পদক্ষেপ।'
এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারি
গান্ধীজি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন যে তিনি নিজের আত্ম-উপলব্ধির জন্য কৃশ হওয়ার প্রয়াস চালান, যাতে মোক্ষ লাভের জন্য ইশ্বরের মুখোমুখি হতে পারেন। তাঁর এই বিরল প্রচেষ্টা শুধু তাঁকে বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেয়নি বরং মানুষের উন্নয়নের কথা ভাবা এবং সহকর্মী ভারতীয়দের ক্ষমতায়নের জন্য পুরো জীবন আত্মত্যাগ করা। তিনি তাঁর অধিকারের চেয়ে নিজের কর্তব্য নিয়ে বেশি ফদ্বিগ্ন ছিলেন এবং দলিত, কৃষক, শ্রমিক, মহিলা ও অন্যদের জন্য সর্বদা আগে ভেবেছেন। তাঁর এই পদ্ধতিতে, তিনি একটি নতুন ধরনের করণাময়ী রাজনীতির বিবর্তন করেছিলেন যেখানে সমসাময়িক বিশ্বের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। গান্ধীজি দেখিয়েছেন যে, বিশদভাবে, ব্যক্তি, সংস্থা ও জাতিসমূহ- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য অর্জনের জন্য কী করা দরকার। তিনি সম্পূর্ণ নম্রভাবে সবকিছু সম্পাদন করেছিলেন। তাঁর সহকর্মী ও অনুসরণণকারীরা তাঁকে শুধু বাবা হিসাবে নয়, মাও ভাবতেন।
গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধা
মহাত্মা গান্ধির ১৫১ তম জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং দেশবাসীকে বাপুর নীতি ও তাঁর সত্য ও অহিংসার পথ অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি নিতে বলেন। মহাত্মা গান্ধিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ লেখেন, ‘আসুন আমরা সবাই আবার গান্ধী জয়ন্তীর শুভ উপলক্ষে সংকল্প করি যে, আমরা সত্য ও অহিংসার পথ অনুসরণ করে সর্বদা জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতির বিষয়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাই৷' পরিচ্ছন্ন, সমৃদ্ধ, শক্তিশালী এবং অন্তর্ভুক্ত ভারত তৈরির মাধ্যমে গান্ধিজীর স্বপ্নগুলি উপলব্ধি করার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
কঙ্গনা বনাম শিবসেনা সংঘাত ফের জোরদার! হাথরাস নিয়ে সঞ্জয় রাউতের তির অভিনেত্রীর দিকে