করোনা ভাইরাস নয়, বিশ্বে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে কিছু পুরনো মারণ রোগ
করোনা ভাইরাস নয়, বিশ্বে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে কিছু পুরনো মারণ রোগ
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারির প্রকোপে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অন্য কোনও রোগ বা সংক্রমণের কথা এখন মানুষের মনে আসছে না। আর এই সুযোগে অন্যান্য রোগগুলিও মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে। মৃদু জ্বর ও অসুস্থতা, এর পাশাপাশি বেদনাদায়ক কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। ভিড়ে গেলে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে, আইসোলেট হয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে এই রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন। উপসর্গগুলির সঙ্গে করোনা ভাইরাসের মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও এই রোগের নাম টিবি বা যক্ষ্মা।
ফিরে আসছে যক্ষ্মা, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া
এই জঘন্য রোগটি বিশ্বের প্রতিটি কোণাকে ছুঁয়ে ফেলেছে। যা বিশ্বজুড়ে বহু মানুষকে প্রাণে মেরে ফেলে। প্রত্যেক বছর এই যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১.৫ মিলিয়ন মানুষের। তবে এই বছরে এখনও পর্যন্ত যক্ষ্মা ও তার মারণ সহযোগী এইআইভি ও ম্যালেরিয়ার দেখা পাওয়া যায়নি। ২০১৮ পর্যন্ত প্রত্যেক রোগের তথ্য উপলব্ধ রয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে রোগগুলির চরম দুরাবস্থা। গত বছরের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তবে করোনা ভাইরাস মহামারি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার কারণে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখন সেই অনুযায়ী গড়ে তোলা হয়েছে আর ইতিমধ্যেই পুরনো রোগগুলি ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
করোনা ভাইরাসের জন্য অন্য রোগ থেকে মনোযোগ সরেছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক ম্যালেরিয়া কার্যক্রমের ডিরেক্টর ডঃ পেড্রো এল.আলানসো এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর ঝুঁকি আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে লাইনচ্যুত করে দিয়েছে এবং আমাদের ২০ বছর পিছনে নিয়ে গিয়েছে।' যদিও এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে করোনা ভাইরাস বিজ্ঞানীদের মনোযোগ টিবি, এইআইভি ও ম্যালেরিয়ার ওপর থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বিশ্বজুড়ে ২৪ জনের বেশি জনস্বাস্থ্য আধিকারিক, চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে সাক্ষাতকারের সময় উঠে এসেছে যে লকডাউনের কারণে, বিশেষ করে আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার অংশে রোগীদের চিকিৎসা করাতে ও ওষুধ কিনতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে অনেক ক্লিনিকই এই সময় বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যার কারণে বহু রোগী এইচআইভি, টিবি ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগে ভুক্তভোগী। উপরন্তু বিমান ও জলপথে ভ্রমণ বন্ধ থাকার দরুণ এই বহু ওষুধই সীমিত সংখ্যায় ডেলিভার হচ্ছে।
৮০ শতাংশ পরিষেবা ব্যাহত
বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া কার্যক্রমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ৮০ শতাংশ পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে এবং এইচআইভির ৪ জনের মধ্যে একজন রোগী জানিয়েছেন যে তাঁদের ওষুধ পেতে সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসায় বাধা বা দেরি হওয়ার কারণে তা ওষুধ প্রতিরোধের দিকে চালিত হতে পারে, যা বহু দেশের এক চূড়ান্ত সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
ভারতে প্রায় ২৭ শতাংশ ঘরে যক্ষ্মা রোগের রোগী রয়েছে। এর মধ্যে মহামারি শুরু হওয়ার কারণে এই রোগের চিকিৎসা ৭৫ শতাংশ হ্রাস ঘটেছে। রাশিয়াতে এইআইভি ক্লিনিককে করোনা ভাইরাস টেস্টের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। পশ্চিম আফ্রিকায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ম্যালেরিয়ার মরশুম, যেখানে বিশ্বে ৯০ শতাংশ মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়ায়। তবে প্রতিরোধেপ সাধারণ কৌশলগুলি, কীটনাশক-নিয়ন্ত্রিত বিছানার মশারি ও কীটনাশক স্প্রে-এর বিতরণ লকডাউনের কারণে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা ব্যাহত
একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তিন মাসের লকডাউন এবং ১০ মাস পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসার ফলে এটির জন্য অতিরিক্ত ৬.৩ মিলিয়ন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে এবং এর থেকে ১.৪ মিলিয়ন মারা যেতে পারে। অন্যদিকে হু-এর মতে, ছ'মাসের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপির বাধার কারণে এইআইভিতে ভুগে অতিরিক্ত ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। হু পূর্বাভাস করেছিল যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ম্যালেরিয়াজনিত রোগ প্রতি বছর দ্বিগুণ হয়ে ৭৭০,০০০ পৌঁছতে পারে। বহু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বর্তমান এই করোনা ভাইরাস প্রবণতা বছরের পর বছর ও দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তবে যক্ষ্মা, এইআইভি ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগের চিকিৎসার উন্নয়ন অনেক পিছিয়ে পড়বে।
করোনা পরিস্থিতিতে সংসদের বাদল অধিবেশন নিয়ে কথা! অবস্থান জানিয়ে বার্তা দিল তৃণমূল