বাণিজ্যে লক্ষ্মী কথাতেই আছে! এই পথেই পকেটে ২০০ কোটি টাকা পুড়ল ইসরো
বাণিজ্যে লক্ষ্মী। বাংলায় এই কথাটা বহুল প্রচারিত। ভারতের বাণিজ্য ইতিহাসের জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যশালী ইতিহাস। নদী মাতৃক দেশ ভারতে একটা সময় বাণিজ্যই ছিল অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
বাণিজ্যে লক্ষ্মী। বাংলায় এই কথাটা বহুল প্রচারিত। ভারতের বাণিজ্য ইতিহাসের জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যশালী ইতিহাস। নদী-মাতৃক দেশ ভারতে একটা সময় বাণিজ্যই ছিল অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ইংরেজ শাসনের অধীনস্থ হওয়ার পর সেই ভারতের সেই বাণিজ্য শিল্প ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতার পর রফতানি শুরু হলেও তা অতিত গৌরবের সঙ্গে কোনওভাবেই প্রতিযোগিতায় আসে না।
বর্তমান সময়ে ফের ভারতের বাণিজ্য শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার চেষ্টা চলছে। আর এই পথের অনুসরণকারী হয়ে রবিবার রাতে ইসরোর পকেটে এলে ২০০ কোটি টাকা। রবিবার রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় ইসরো দুটি কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠায়। এই দুই কৃত্রিম উপগ্রহ একটি ব্রিটিশ বেসরকারি সংস্থার। এই যাত্রায় কোনও ভারতীয় কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠানো হয়নি। ইসরোর কর্মাশিয়াল উইং অ্যান্ট্রিক্স কর্পোরেশন-এর মাধ্যমে এদিনের এই কমার্শিয়াল লঞ্চ করা হয়।
এটা ছিল পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল বা পিএসএলভি-র ৪৪তম উৎক্ষেপণ। দুই কমার্শিয়াল কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠাতে হালকা পিএসএলভি রকেট ব্যবহার করা হয়। তিরুঅনন্তপূরম-এর বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের ডিরেক্টর এস সোমনাথ জানিয়েছেন, এটা ইসরোর কমার্শিয়াল লঞ্চ এবং ভারত এই উৎক্ষেপণের ফলে অর্থ আয় করবে।
এস সোমনাথ জানান, 'এটা ছিল ইসরোর পঞ্চম কমার্শিয়াল লঞ্চ। রবিবার রাতে পিএসএলভি-র যে রকেটটি দিয়ে উৎক্ষেপণ করা হয় তা পুরোপুরি ভাড়া করেছিল এক ব্রিটিশ সংস্থা। পিএসএলভি রকেট এই মুহূর্তে বিদেশি সংস্থাগুলির কাছে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তারমধ্যে ইসরোর মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয় না। বেসরকারি সংস্থার বলে দেওয়া সময়েই ইসরো উৎক্ষেপণ করায়। যা অন্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলিতে কার্যত অসম্ভব।'
উৎক্ষেপণের পর পরই টুইট করে ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
Congratulations to our space scientists! ISRO successfully launched PSLV C42, putting two UK satellites in orbit, demonstrating India's prowess in the competitive space business. @isro
— Narendra Modi (@narendramodi) September 16, 2018
ব্রিটিশ সংস্থা চেয়েছিল রবিবার রাতে তাদের বলে দেওয়া সময়েই যাতে উৎক্ষেপণ হয়। কারণ তারা এমন একটা কক্ষপথে দুই কৃত্রিম উপগ্রহে পাঠাতে চেয়েছিল তাতে রবিবার রাতের ওই সময়ে উৎক্ষেপণ করলে খুব সহজে উপগ্রহগুলিকে সেখানে পাঠানো সম্ভব ছিল। রবিবার রাতের উৎক্ষেপণের পর শ্রীহরিকোঠা থেকে ৩টি উৎক্ষেপণ হল।
ISRO launches PSLV-C42 into orbit carrying two foreign satellites, NovaSAR & S1-4, from Satish Dhawan Space Centre, Sriharikota in #AndhraPradesh. pic.twitter.com/CB1xBbPfXs
— ANI (@ANI) September 16, 2018
যে দুটি ব্রিটিশ কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয়েছে তা বানিয়েছে সারে স্যাটেলাইট টেকনোলজি লিমিটেড। এই দুই কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে নোভাএসএআর- দিন ও রাতে নজরদারিতে সক্ষম। মহাকাশ থেকে কোনও স্থানের ম্যাপিং করা থেকে শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলা ও শিপ ডিটেকশনে সক্ষম। অন্যদিকে অপর স্যাটেলাইট এস১-৪ পরিবেশ সংক্রান্ত নজরদারি এবং আর্বান ম্যানেজমেন্টের কাজে সহায়তায় পারদর্শী।
নোভাএসএআর-এর নজরদারি এতটাই সুক্ষ যে জাহাজের সঙ্গে জুড়ে থাকা ছোট ছোট জিনিসগুলির ছবিও মহাকাশ থেকে তুলে নিতে সক্ষম। এমনকী, সমুদ্রে কোনও অবৈধ বোটের গতিবিধি থাকে তার ছবিও মুহূর্তে তুলে নিতে পারে নোভাএসএআর। বলতে গেলে মুম্বই হামলার সময় আজমল কাসভরা যেমন বোটে করে সমুদ্র পথে মুম্বই উপকূলে এসে হাজির হয়েছিল, তেমন ধরনের বোটের গতিবিধিকে নজরে আনতে সক্ষম এই নোভাএসএআর।
যে পিএসএলভি রকেটটি দিয়ে দুই কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে তার ওজন ছিল ২৩০ টন। এবং লম্বায় ৪৪.৪ মিটার। পিএসএলভি-র এই লাইটার ভার্সান রকেটটিকে 'কোর অ্য়ালোন' বলে ডাকা হয়। এই লাইটার ভার্সান রকেট দিয়ে ৪৩টি উৎক্ষেপণ করেছে ইসরো। তারমধ্যে মাত্র ২বার ব্যর্থ হয়েছে পিএসএলভি।
বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের ডিরেক্টর এস সোমনাথ যিনি আবার দেশের মেন রকেট ল্য়াবের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি জানিয়েছেন, 'এই ধরণের উৎক্ষেপণ দেশের পক্ষে ভালো। কারণ এর থেকে অর্থ আয় হবে যা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা শিল্পের বিকাশে সাহায্য করবে। বর্তমানে পিএসএলভি-র ৮৫ শতাংশই তৈরি করছে মহাকাশ গবেষণা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় সংস্থাগুলি। ইসরো বাকি ১৫ শতাংশ তৈরি করছে। কিন্তু, ইসরো চাইছে এই রকেট তৈরির পুরো কাজটাই করুন এই সব ভারতীয় সংস্থা। প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে ইসরো।'