
দুটি ফুটবল মাঠের সমান এয়ারবেস থেকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত INS Vikrant
আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই স্বপ্নেরই বাস্তব রূপ হল INS Vikrant। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে একেবারে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বিশাল এই বিমানবাহী রণতরী জলে ভাসল। আর এরপরেই স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, সমুদ্রপথে ভারত ইতিহাস তৈরি করল। শুধু তাই নয়, বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলির চোখে চোখ এবার ভারত রাখতে পারবে বলেও মত প্রধানমন্ত্রীর। আর এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মোদী বলে, ফ্রান্স, চিন আমেরিকার মতোই এবার ভারতই বিমানবাহী রণতরী বানানোর ক্ষমতা পেল। শুধু তাই নয়, এই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হাতে আসার পর এক ধাক্কায় ভারতের ক্ষমতা অনেকটাই বাড়ল বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকরা।

এয়ারবেস প্রায় দুটি ফুটবল মাঠের সমান
ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে প্রযুক্তি নির্ভর এই এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, INS Vikrant-এর প্রতিটি ক্ষেত্রে একটা বিশিষ্ট রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধ জাহাজকে দেশীয় সম্ভাবনা, দেশীয় সম্পদ এবং দেশীয় দক্ষতার প্রতীক বলে ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বিশ্বের সামনে নয়া এই এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ারের ক্ষমতা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, এই এয়ারক্রাফট কেরিয়ারের এয়ারবেস অনেক বড়। আর তাতে যে স্টিল লাগানো হয়েছে, সেটাও তৈরি হয়েছে ভারতেই। ডিআরডিও-র গবেষকরা সেই স্টিল তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন মোদী। তিনি উল্লেখ করেন ওই এয়ারবেস প্রায় দুটি ফুটবল মাঠের সমান। প্রধানমন্ত্রী মোদীর মতে বিক্রান্ত বিশাল এবং বিরাট।

হাজার কিলোমিটার লম্বা তার
দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি INS Vikrant-এ প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ বৈদ্যুতিক তার বসানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান যদি সোজাসুজি ভাবে এই তারগুলিকে বিছানো হয় তাহলে এর দূরত্ব হবে কোচি থেকে দিল্লি পর্যন্ত। এছাড়াও নয়া এই এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ারে অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। এই জাহাজ যে পরিমাণ ইলেকট্রিক তৈরি করতে পারে তা যে কোনও ছোট শহরকে আলোকিত করার জন্য যথেষ্ট।

একেবারে ব্রাজিল চলে যেতে পারবে-
বিক্রান্তের সর্বোচ্চ গতি 28 নট এবং এটি এক সময়ে 7500 নটিক্যাল মাইল (14 হাজার কিমি) দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ ভারত থেকে যদি এই যুদ্ধ জাহাজ ছাড়ে তাহলে একেবারে ব্রাজিল পর্যন্ত খুব সহজেই এগিয়ে যেতে পারবে। যে কোনও পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে এই এয়ারক্রাফট কেরিয়ার এগিয়ে যেতে পারবে বলে দাবি সাওরিক বিশ্লেষকরা। যা সত্যিই চনকে দেওয়ার মতো বলে দাবি।

মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা-
আইএনএস বিক্রান্তের 14 টি ডেক অর্থাৎ ফ্লোর রয়েছে। 2300টি কম্পারমেন্ট রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। প্রায় ১৭০০ নৌসেনা খুব সহজেই এখানে থেকে যেতে পারবেন। এমনকি মহিলা আধিকারিক এবং মহিলা অগ্নিবীরদের স্বাস্থ্য বিষয়টি মাথায় রেখে ক্যারিয়ারে আলাদা ব্যবস্থা এবং থাকার জায়গা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া বিক্রান্তের রান্নাঘরে দিনে ৪৮০০ মানুষের জন্য খাবার তৈরি করা যায়। এমনকি একদিনে ১০ হাজার রুটি সেঁকা যায়।

রয়েছে একটা ছোট হাসপাতালও
আইএনএস বিক্রান্তে একটি ছোট হাসপাতালও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে 16 শয্যা রয়েছে। এছাড়াও এটি একটি 18 তলা যুদ্ধজাহাজ। যেখানে 250 টি তেল ট্যাংকার রয়েছে।

সমরাস্ত্রে সজ্জিত জাহাজ
আইএনএস বিক্রান্ত এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার হল সমুদ্রের উপরে ভাসমান একটি স্টেশন। যেখান থেকে খুব সহজেই ফাইটার জেট, মিসাইল, ড্রোনের মাধ্যমে শত্রুদের মুহূর্তে ধ্বংস করা যায়। নয়া এই বিমানবাহী এয়ারক্র্যাফট থেকে 32 বারাক-8 ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যাবে। 44,570 টন ওজনের এই রণতরীতে ৩০ টি যুদ্ধবিমান রাখা যাবে। ভিজ্যুয়াল রেঞ্জের বাইরে এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল এবং গাইডেড বোমা এবং রকেট সহ জাহাজ-বিরোধী মিসাইল দিয়ে সজ্জিত এই জাহাজ। মিগ ২৯ এর মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান রাখা থাকবে এই ক্যারিয়ারে।
ভারতীয় নৌবাহিনীকে নয়া পতাকা দিয়ে মোদী বললেন, 'গোলামির চিহ্ন থেকে মুক্তি'