কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ট্রায়ালের ফলাফল সম্পর্কিত তথ্য অমিল, উদ্বেগ প্রকাশ বিজ্ঞানী মহলের
কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ট্রায়ালের ফলাফল সম্পর্কিত তথ্য অমিল, উদ্বেগ প্রকাশ বিজ্ঞানী মহলের
জাতীয় কোভিড–১৯ টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাকসিন 'ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ মোডে ব্যবহার করা হবে এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন যে এই ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন 'আমাদের ভ্যাকসিন সুরক্ষার কৌশলগত সিদ্ধান্ত।’ অন্যদিকে রবিবার কোভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর আইসিএমআর জানিয়েছে যে এই ভ্যাকসিন করোনার নতুন স্ট্রেন থেকেও মুক্তি দেবে।
কোভ্যাকসিনের ট্রায়ালের তথ্য হাতে আসেনি
তবে কিছু স্বাধীনচেতা বিজ্ঞানী এই কোভ্যাকসিন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন এই ভ্যাকসিনের এক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বেশ উৎসাহজনক ছিল, কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল যা নভেম্বরে শুরু হয়েছিল, কিন্তু তার তথ্য এখনও হাতে না আসায় ভ্যাকসিন অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাঁরা। ভ্যাকসিন কার্যকারিতার তথ্য এটা ইঙ্গিত দেয় যে এই ভাইরাস হামলায় এই ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর। ভ্যাকসিন বিজ্ঞানী ও ক্রিস্টিয়ান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ গগনদীপ কাং এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিসিজিআই (ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া) সেপ্টেম্বরে পর্যাপ্ত ডেটা প্যাকেজ হিসাবে, তাদের যে খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে খুব স্পষ্ট করে উল্লেখ ছিল যে তারা সুরক্ষা ও কার্যকাইতার তথ্য চায় এবং সুরক্ষা তথ্যের জন্য এটা প্রত্যাশিত ছিল যে কমপক্ষে দু'মাস অনুসরণ করা হবে।' তিনি আরও বলেন, ‘কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে, আপনি তো তালিকাভুক্তি শেষ করেননি। তবে ডিসিজিআই যে সুরক্ষার কথা বলছে তা কোন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে? অবশ্যই এখনও কোনও কার্যকরিতার তথ্য হাতে আসেনি।'
বিকল্প হিসাবে কোভ্যাকসিনের ব্যবহার
অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিবেদী স্কুল অফ বায়োসায়েন্সের ভায়রোলজিস্ট ও ডিরেক্টর শাহিদ জামিল বলেন, ‘এমনকী জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের ক্ষেত্রেও কার্যকারিতার তথ্য প্রয়োজন। এই ভারতীয় ভ্যাকসিনগুলি আন্তজার্তিক বাজারেও পৌঁছাবে। এটা খুবই প্রয়োজন যে আমাদের নিয়ন্ত্রক ইনস্টিটিউশনের ওপর সকলের আস্থা বজায় থাকুক। নতুবা এই একই সংস্থাগুলি ভুক্তভোগী হবে।' এইমসের রণদীপ গুলেরিয়া, যিনি জাতীয় কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্সের সদস্য, তিনি জানিয়েছেন যে কোভ্যাকসিনের অনুমোদন নিশ্চিত করা হয়েছে এটা ভেবে যে কেসের তীব্রতা যদি বাড়ে এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন অপর্যাপ্ত হয় তবে সেক্ষেত্রে কোভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মোডে ব্যবহার করা হবে।
তাড়াহুড়ো নয় কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে
জামিল জানিয়েছেন যে এই কারণেই কোভ্যাকসিনের অনুমোদনে এত তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘সিরাম ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে তারা ৫ কোটি ডৌজ প্রস্তুত করে রেখেছে। তাই ভারত বায়োটেক ভ্যাকসিন এত দ্রুত সরবরাহ করার দরকার নেই। তাই তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য আসা পর্যন্ত সরকার অপেক্ষা করে যাক। তারপর অনুমোদন দেবে। ট্রায়াল এখন চলছে এবং প্রাথমিক তথ্য হাতে এখনও পাওয়া বাকি, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলে আসবে।'
অনুমোদনের নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে
দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজির প্রাক্তন এক প্রতিরোধক সত্যজিৎ রথ জানান, বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনের সুরক্ষা বা কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন না, বরং প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান অনুমোদন যেভাবে দেওয়া হয়েছে তার নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা নিয়ন্ত্রক মাধ্যমের ওপর থেকে মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
কোভ্যাক্সিন ঘিরে জোর জল্পনা! ভারতীয় টিকার প্রয়োগ নিয়ে কী বলছে আইসিএমআর-এইমস?