দেশে করোনা কেসের বৃদ্ধি লাফিয়ে ৩০০ শতাংশের ওপরে গেলেও আইসিইউ বেড বেড়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ
দেশে করোনা কেসের বৃদ্ধি লাফিয়ে ৩০০ শতাংশের ওপরে
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভের দাপটে ভারত বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে ছিলেন গত বছরের প্রথম ওয়েভের চেয়ে এই দ্বিতীয় ওয়েভ আরও বেশি মারাত্মক এবং দ্রুত সংক্রমক ছড়ায়। এরই মধ্যে সরকারের তথ্যে উঠে এসেছে যে ভারতে দৈনিক কেসের ক্ষেত্রে প্রথম করোনা ভাইরাসের শিখরের চেয়ে দ্বিতীয় করোনা ভাইরাসের শিখর লাফিয়ে তিনশোর বেশি বেড়ে গিয়েছে কিন্তু সেই তুলনায় আইসিইউ বেডের বৃদ্ধি সেরকম হয়নি। দেখা গিয়েছে আইসিইউ বেড মাত্র ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রথম করোনা ভাইরাস ওয়েভের শিখর
প্রথম করোনা ভাইরাস ওয়েভের শিখর ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দেখা যায়, যেখানে দেশে একদিনে মোট ৯৭,৮৯৪টি কেস রিপোর্ট হয়েছিল। ওই একই মাসে ভারতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ছিল ৬৩,৭৫৮টি। এরপর ভারত প্রথম ওয়েভের শিখর পেরোয় ৪ এপ্রিল, যেখানে একদিনে কেস সংখ্যা দাঁড়ায় ১.০৩ লক্ষ, যা আমেরিকার পর ভারতকে দ্বিতীয় দেশ হিসাবে সামনে নিয়ে আসে।
দেশে সংক্রমণের বৃদ্ধি
৪ তারিখের পর ১৫ এপ্রিল ভারত ২ লক্ষের গণ্ডি পের হয় দৈনিক কেসের ক্ষেত্রে এবং এক সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল সংক্রমণ ৩ লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে যায়, যা বিশ্বে নতুন করে রেকর্ড গড়ে। ১ মে ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪,০১,৯৯৩টি কেস সনাক্ত হয়। ৭ মে ভারতে ফের কোভিড-১৯ সংখ্যা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়, যা ৪,১৪,১৮৮টি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে ভারতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ছিল ৭৫,৮৬৭টি।
বিভিন্ন রাজ্যে আইসিইউ বেড খালি
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে দৈনিক কেসের শিখর ৩২৩ শতাংশ যেখানে বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে আইসিইউ বেডের সংখ্যা মাত্র ১৮.৯৯ শতাংশ বেড়েছে, যা কেস সংখ্যার তুলনায় খুবই নগন্য। ২০২০ সালের এপ্রিলে ভারতে ২৪ হাজার আইসিইউ বেড উপলব্ধ ছিল। এটা মনে রাখতে হবে যে প্রথম ওয়েভের শিখরে কেস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেপ্টেম্বরে আইসিইউ বেডও বৃদ্ধি পায়। যদিও ফের জানুয়ারিতে দৈনিক করোনা কেসের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি আইসিইউ বেডের সংখ্যাও কমে ৩৬,০০৮-এ নেমে আসে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একাধিক রাজ্যে দৈনিক কেস নিয়ে রেকর্ড গড়তে শুরু করে দিয়েছে। যদিও গত সপ্তাহ থেকে কিছু রাজ্যে দৈনিক কেসের সংখ্যা কমতে দেখা যায়।
আইসিইউ বেড খালি বহু রাজ্যে
তবে কেসের সংখ্যা কমতে দেখা দিলেও অনেক রাজ্যেই খালি আইসিইউ বেড পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুম্বইতে ২,৯৮৪টি আইসিইউ বেডের মধ্যে শনিবার মাত্র ২৭৭টি বা ৯.২৮ শতাংশ বেড খালি ছিল। একইভাবে শনিবার সন্ধ্যায় গোয়ায় মোট ২৪৯টি আইসিইউ বেডের মধ্যে একটি বেডও উপলব্ধ ছিল না। দিল্লিতে মোট ৬,৩১৩টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ৫৫৮টি বেড বা ৮.৮৪ শতাংশ বেড খালি পড়ে ছিল। একই পরিস্থিতি অন্ধ্রপ্রদেশেও, এখানে মোট ৬,৪০৬টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ২৯৮টি বেড খালি পড়ে রয়েছে, অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে ৮,৯৫৭টি বেডের মধ্যে ৫.৪৯ শতাংশ বা ৪৯২টি আইসিইউ বেড খালি পড়ে রয়েছে।
ব্যতিক্রম কেরল ও ছত্তিশগড়
তবে কেরল ও ছত্তিশগড়ে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভালো। কেরলে ৭,২৯০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ২,০৯২টি বেড খালি এবং ছত্তিশগড়ে ২,৩৩৭ টি আইসিউই বেডের মধ্যে ৯২৬টি বেড খালি পড়ে রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৯৪টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৫টি বেড খালি রয়েছে।
পেট্রোল-ডিজেলের দাম টানা ৯ দিনে আরও উর্ধ্বমুখী, ১৬ মে কলকাতা সহ বাকি শহরের দর একনজরে
রোগী ও বেডের অনুপাত
শনিবার ভারতের মোট সক্রিয় কেসের সংখ্যা ছিল ৩৬,৭৩,৮০২টি এবং নতুন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা রিপোর্ট হয়েছিল ৩.২৬ লক্ষ। দেশে ক্রমবর্ধমান কেসের সংখ্যা দাঁড়িয়ে রয়েছে ২.৪৩-তে এবং সুস্থতার সংখ্যা ২.০৪ কোটিতে রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৩,৮৯০ জনের এবং এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা দেশে ২.৬৬ লক্ষে দাঁড়িয়ে। এটাও লক্ষনীয় যে সরকারের অনুযায়ী, সব কেসের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি বা বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না। তবে তার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ রয়েছে। আইসিইউ বেডের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ সক্রিয় কেস আইসিইউ কেয়ার পেয়েছে। এটাও লক্ষণীয় যে একাধিক রাজ্যে চাহিদা অনুযায়ী আইসিইউ বেডের বৃদ্ধি হয়েছে।