পাখির মতো ওড়ার ভালবাসায় পাইলটের ট্রেনিং, স্বপ্নটা বুকে করে নীল আকাশে হারিয়ে গেলেন নিশা
আকাশে ভেসে বেড়ানো পাখির মতো। এই স্বপ্নেই পাইলট ট্রেনিং-এর কোর্সে সওয়ারি হয়েছিলেন দিল্লির মেয়ে নিশা সেজওয়াল।
আকাশে ভেসে বেড়ানো পাখির মতো। এই স্বপ্নেই পাইলট ট্রেনিং-এর কোর্সে সওয়ারি হয়েছিলেন দিল্লির মেয়ে নিশা সেজওয়াল। চেয়েছিলেন কর্মাশিয়াল পাইলট হিসাবে পেশাদার জীবন বেছে নিতে। কিন্তু, মাঝ রাস্তাতেই স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে জীবন-বাতি নিবিয়ে বিদায় নিলেন নিশা।
পাইলট হওয়ার নেশায় দিল্লি থেকে আমেরিকার ফ্লোরিডায় পাড়ি দিয়েছিলেন নিশা। ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ডিন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইয়িং স্কুলে নাম লিখিয়েছিলেন সেপ্টেম্বর ২০১৭-তে। মঙ্গলবার ইনস্টিটিউটেরই একটি বিমানে ট্রেনিং-এর জন্য আকাশে উড়েছিলেন নিশা। কিন্তু মাঝ আকাশেই নিশাদের ছোট্ট ট্রেনিং প্লেনের সঙ্গে ইনস্টিটিউটেরই অন্য একটি প্লেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার পরে নিশা-সহ চার জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আরও এক জনের দেহের মেলে।
জানা গিয়েছে ডিন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইয়িং স্কুলের পাইপার পিএ-৩৪ এবং সেসনা ১৭২ বিমান দুটি আকাশে উঠেছিল। পাইপার পিএ-৩৪ বিমানটিতে ছিলেন বছর বাইসের দুই ট্রেনি জর্জ স্যাঞ্চেজ ও কার্লোস আলফ্রেডো জানেত্তি। আর সেসনা বিমানটিতে ছিলেন বছর ৭২ রালফ কিটিং ও বছর ঊনিশের নিশা সেজওয়াল। দু'টি বিমানই মিয়ামি এক্সিকিউটিভ এয়ারপোর্ট থেকে টেক অফ করে। কিন্তু টেক অফ করার কিছুক্ষণের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার দূরে বিমান দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পরই বিমান দুটি নিচে থাকা জলা জমির মধ্যে আঁছড়ে পড়ে।
এই গোটা ঘটনাটি আবার দেখতে পেয়ে মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করেন ড্যানিয়েল মিরালেস নামে এক ব্যক্তি। দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই ক্যানেলে মাছ ধরছিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল।
বিমান দুটি যেখানে ভেঙে পড়েছিল সেখানে উদ্ধারে প্রচুর বেগ পেতে হয়। কারণ একে জলা জমি তারমধ্যে এক মানুষ সমান ঘাস। অনেক খোঁজাখুজির পর বিমান ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছন উদ্ধারকারী দল। সেখানেই সামান্য একটু দূর থেকে দিল্লির তরুণী নিশা সেজওয়াল, রালফ কিটিং ও জর্জ স্যাঞ্চেজের দেহ উদ্ধার করা হয়। এর অনেক পরে তীব্র তল্লাশি অভিযানে জল-কাদায় মাখা ঘাসের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় কার্লোস আলফ্রেডো জানেত্তি-র দেহ।
ঘটনার পিছনে কোন কারণ আছে তা জানতে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দ্য ফেডারাল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড।
নিশার ইনস্টিটিউট ডিন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইয়িং-এর গত এক দশকের ইতিহাসে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গিয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ডিন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইয়িং স্কুলে দু'ডজনের বেশি এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
জানা গিয়েছে দিল্লির মেয়ে নিশা ডাভ মডেল স্কুল, ইউসুফ সারাই এবং অ্যামিটি ইন্টারন্য়াশনাল স্কুল, সাকেতের প্রাক্তনী। ছাত্রী হিসাবে খুবই ভালো ছিলেন নিশা। তাঁর আচার-আচরণের জন্য অনেকেই তাঁকে 'পিওর সোল' হিসাবেও ডাকতেন।
নিশার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই পরিবার ও বন্ধুরা শোকস্তব্ধ হয়ে যায়। বহু বন্ধু ফেসবুক পেজে ঢুকে নিশার আত্মার শান্তি কামনা করেছে।
নিশার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছে ফেসবুকও। নিশার ফেসবুক প্রেফাইলকে তারা 'রিমেম্বার' বলে লিখে রেখেছে।
এদিকে, নিশার মৃত্যুর খবর আসতেই তাঁর পরিবারের লোকজন আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দেন।