চিনকে শিক্ষা দিতে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মোদী, জিনপিংকে ঘিরে ধরছে ভারতীয় কূটনৈতিক জাল
আন্তর্জাতিক স্তরে দিল্লিকে কোণঠাসা করতে গত কয়েক মাস ধরেই কূটনৈতিক ঘুঁটি সাজাচ্ছিল চিন। সেই চালের জবাবে এবার ভারতও পাল্টা দাও খেলছে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে। আর এই কূটনৈতিক খেলার তদারকি করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রসঙ্গত, সোমবারই বাংলাদেশের হাইকমিশনার পদে দায়িত্ব নিলেন বিক্রম দোরাইস্বামী। এবং সূত্রের খবর এই নিয়োগের ছাড়পত্র এসেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে।
দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে চিনের জাল বিস্তার
প্রঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই দেখা গিয়েছে যে ভারতকে কাবু করতে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে আরও গভীর চিহ্ন রাখতে শুরু করেছে চিন। এই কাজ করতে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিবিদদের রাষ্ট্রদূতত হিসাবে নিয়োগ করা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। পাকিস্তানে চিনের ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের অধীনে থাকা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে এই পদে বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশ, মায়ানমারের মতো দেশের উপরও প্রভাব বিস্তার
ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের আসল কাজ নন-কমিউনিস্টদের মধ্যে কমিউনিজমের বিস্তার ঘটানো। সেই বিভাগের একজনকে রাষ্ট্রদূতের পদে পাকিস্তানে পাঠানোর মূল কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত বিরোধী একটি অক্ষ তৈরি করা। পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের বন্ধু। সেখান থেকেই বাংলাদেশ, মায়ানমারের মতো দেশের উপরও প্রভাব বিস্তার সম্ভব চিনের পক্ষে। এবং চিনের এই চালকেই ধরতে পেরে পাল্টা চাল দিয়েছে ভারত।
মুশকিলে পড়বে ভারত
ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তবে এই বৈঠক ভার্চুয়ালি হবে কি না সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ তবে বর্তমানে চিনের সঙ্গে ভারতের দূরত্বের মাঝেই বাংলাদেশকে কাছে পেতে চাইছে চিন। এতে মুশকিলে পড়বে ভারত। সেই কারণেই পুরোনো বন্ধু হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশকে কাছে রাখতে চাইছে দিল্লি। এর আগে চিনের কাছে পুরোনো বন্ধু নেপালকে হারাতে হয়েছে ভারতকে। এবং এর নেপথ্যেও ছিল চিনের কূটনৈতিক জাল বিস্তারের ক্ষমতা।
চিনের নেপাল যোগ
নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চিনের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রমাণ করেছে যে দক্ষিণ এশিয়ায় কীভাবে চিন বিস্তার ঘটাচ্ছে। নেপালে চিনের রাষ্ট্রদূত হৌ ইয়নকি দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি পিএলএ-র গোয়েন্দা বিভাগেও কাজ করার অঅভিজ্ঞতা রাখেন। তিনি ঊর্দু ভাষাতেও সাবলিল। কেপি শর্মা ওলির সরকার বাঁচাতে তিনি যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, তেমনই পাকিস্তান-নেপালকে কাছাকাছি আনার পিছনেও হাত রয়েছে তাঁর। আর চিনের এহেন খুরদর মস্তিষ্কের মোকাবিলা করতে সমপ্র্তি নেপালে বিনয় মোহনকে রাষ্ট্রদূত হিসাবে পাঠিয়েছে। প্রসঙ্গত, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ফিসে যুগ্ম সচিবের পদ সামলেছিলেন এর আগে।
জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ
এদিকে নেপালের মতো একই পরিস্থিতি যাতে বাংলাদেশে তৈরি না হয়, তাই সজাগ রয়েছে দিল্লি। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকেও গ্রহণ করেছেন। ভারত বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হতে চায়নি। কারণ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর যা, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যায়। এনেক বিশেষজ্ঞেরই মত, 'সিপেক' এর বিরোধিতা এবং লাদাখ, কাশ্মীরের স্টেটাস বদলের জেরেই এলএসিতে সংঘাতের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে।
জিনপিংকে ঘিরে ভারতীয় জাল
এদিকে বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তানেও রুদেন্দ্র ট্যান্ডনকে নিযুক্ত করেছে ভারত। এই নিয়োগটিও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে অনুমোদিত হয়েছে বলে খবর। এই প্রতিটি নিয়োগই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী করছেন বলে খবর। এই সিদ্ধান্তের পিছনে অজিত ডোভালের প্রভাব স্পষ্ট দেখা গিয়েছে মায়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে। মায়ানমারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সৌরভ কুমার এর আগে জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিলে কাজ করতেন এবং সরাসরি ডোভাল ও মোদীকে জবাবদিহি করতেন।