পেটের দায়ে উপেক্ষিত করোনার চোখ রাঙানি, উৎসবের মরশুমে 'ট্র্যাকে' ফিরছে অর্থনীতি
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আনলক প্রক্রিয়া দেখে অনেক লগ্নিকারী ফের ভরসা ফিরে পেয়েছেন দেশের অর্থনীতিতে। এহেন পরিস্থিতিতে কোভিড পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক পর্যায়ের ৯৩ শতাংশ কর্মক্ষমতা ফিরে এসেছে দেশে। যা দেশের অর্থনীতিকে গভীর গহ্বর থেকে ফের উঠে আসতে সাহায্য করবে। তবে মহালয়া এবং বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে এ রাজ্যে। প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদায় শপিং মলগুলিতে মানুষের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। শপিং মল খোলার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার থেকে যা যা এসওপি দেওয়া হয়েছিল, তা অবশ্য পালন হচ্ছে না। তবে এই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে শপিং করা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। পেটের দায়ে মানুষ করোনাকে ভুলেছে। তবে সেই অশতর্কতা অর্থীতিকে ফেরাচ্ছে গতিতে।

উর্ধ্বমুখী গ্রাফ দেখা গিয়েছে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে
বিশ্বের সব জাতীয় স্টক মার্কেটগুলির মধ্যে তুলনামূলক ভাবে ভালো উর্ধ্বমুখী গ্রাফ দেখা গিয়েছে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে। গত প্রায় দুই মাসে ১১ শতাংশ ব়্যালি করে সেনসেক্স ফের ৪০ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। আরও ২ শতাংশ বৃদ্ধি হলেই চলতি বছরে করোনা উদ্ভুত ক্ষতি পুনরুদ্ধার করে ফেলবে শেয়ার বাজার।

উৎসবের মরশুমের আগে বিধিনিষেধ শিথিল
তবে এই পরিস্থিতি কীভাবে উপনীত হল? আদতে দেশের করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেও উৎসবের মরশুমের আগে যেভাবে বিধিনিষেধ শিথিল করার পথে সরকার হেঁটেছে, তার উপর ভর করেই এই অগ্রগতি। আনলক প্রক্রিয়াতে এতটা তাড়াতাড়ি এতটি শিথিলতা দেখা যাবে, তা কেউই আশা করেনি। আর তাই পেটের দায়ে করোনার চোখ রাঙানি ভুলে ফের রাস্তায় নেমেছে মানুষ।

করোনার জেরে দেশের অর্থনীতিতে ধস
করোনার জেরে দেশের অর্থনীতিতে ধস৷ প্রায় ৪০ বছর পর এভাবে পড়ল ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনীতিতে এই ধসের প্রধান কারণ হল করোনা প্যানডেমিক৷ দেশব্যাপী করোনা প্যানডেমিকের জন্য বাধ্যতামূলক লকডাউনের ফলেই পড়েছে জিডিপি৷ এর আগে, ১৯৭৯ সালে জিডিপির পতন হয়েছিল মাইনাস ৫.২ শতাংশ৷

জিডিপিতে পতন
২০২০-২১ আর্থিক বছরে জিডিপি দাঁড়িয়েছে মোট ২৬.৯ লক্ষ কোটি টাকা৷ যা ২০১৯-২০ সালে ছিল ৩৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা৷ ২০২০-২১ আর্থিক বছরে কোয়াটারলি গ্রস ভ্যালু ২৫.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা৷ যা ২০১৯-২০ সালে ছিল ৩৩.০৮ লক্ষ কোটি টাকা৷ ফলে কোয়াটারলি গ্রস ভ্যালু পড়েছে ২২.৮ শতাংশ৷

বহাত তবিয়তে ফেরার পথে ভারতীয় অর্থনীতি
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের বহাত তবিয়তে ফেরার পথে ভারতীয় অর্থনীতি। করোনা আবহে যে হারে মানুষ কাজ হারিয়েছে, তাতে দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি দেশের করোনা পরিসংখ্যানের উর্ধ্বমুখী গ্রাফও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা পরিস্থিতিতে তাতে করোনা সংক্রমিতের তালিকায় বিশ্বের মধ্যা শীর্ষে পৌঁছাতে চলেছে ভারত।

আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছে ৭১ লক্ষের গণ্ডি
দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছে ৭১ লক্ষের গণ্ডি৷ গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৩২ জন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ লক্ষ ২০ হাজার ৫৩৯। মোট সুস্থের সংখ্যা ৬১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৩৬। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮১৬ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯ হাজার ১৫০। বর্তমানে সক্রিয় আক্রান্ত ৮ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৫৩।

আনলক পর্যায়ে খুলছে প্রতিষ্ঠান
আনলক-৫ পর্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খোলার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যদিও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। চলবে অনলাইন ক্লাস। এর পাশাপাশি সিনেমা হল, থিয়েটার ও মাল্টিপ্লেক্সগুলি খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে ৫০ শতাংশ দর্শক থাকতে পারবেন একেকবারে। সুইমিং পুল, খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জায়গা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ১৫ অক্টোবর থেকে এই নিয়ম কার্যকরী হবে। এই সবের মধ্যেই ফের অর্থনীতির চাকা পূর্ণ গতিতে ঘুরতে শুরু করেছে। তবে এটাই যে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর দীর্ঘমেয়াদী পথ, তা বলা এখনই খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে করোনা
করোনা ভাইরাস যে গতিতে প্রভাব ফেলে সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে এবং অর্থনীতির গতিপথ বদল করে দিয়েছে, তাতে এর প্রভাব আগামী বহু বছর ধরে ভুগতে হবে৷ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট (২০০৮)-এর প্রভাব পৃথিবী কাটিয়ে যখন উঠছিল, তখনই আরও বড় এই সংকট এসে হাজির হল৷ ভারত এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। এর উলটো দিকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির বিশাল রাজস্ব এবং আর্থিক ঘাটতির কারণে ভারতীয় অর্থনীতি তার দুর্বলতম অবস্থানে রয়েছে।

জিএসটি ইস্যুতে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব জারি, ফের রাহুল গান্ধীর নিশানায় প্রধানমন্ত্রী মোদী