চিনকে চাপে রেখে লাদাখ সীমান্তে সড়ক তৈরিতে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পথে ভারত
লাদাখ জুড়ে এবার রাস্তার নেটওয়ার্ক তৈরির বিষয়টি নিয়ে আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে জানা যাচ্ছে সূত্র মারফত। ভারতের স্ট্র্যাটেজি প্রথম থেকেই একই ছিল। চিন নিজের মতো পদক্ষেপ নিলেও, ভারত নিজের নীতিতেই লাদাখ সীমান্তে রাস্তা নির্মাণের কাজে অবিচল থাকবে। আর সেই নীতি ধরে রেখেই এদিন, নয়া দিল্লিতে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজনাথ সিং।
লাদাখের সংঘর্ষের আবহেও গালওয়ান নদীর ওপর ব্রিজ
লাদাখের সংঘর্ষের আবহেও গালওয়ান নদীর ওপর দিয়ে ভারত ব্রিজ নির্মাণ করছে। ৬০ মিটারের দীর্ঘ এই ব্রিজ নিয়ে বেজিং বাধা দিতে শুরু করে দিল্লিকে। বেজিং দাবি করে এলাকা তাদের। আর পাল্টা জবাবে ভারত তা কিছুতেই মেনে নিতে চাইনি। এরপর সংঘাত। ১৫ জুন সেই সংঘাত রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়। এদিকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এদিন দিল্লিতে বসে লাদাখে রাস্তা নির্মাণের কাজে কতটা গতি এসেছে, সেই দিকটি খতিয়ে দেখেন।
চিনের দাবি
চিনের দাবি ছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে ভারতের দিকে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ বন্ধ রাখা হোক৷ যা মেনে নিতে নারাজ ভারত৷ পাল্টা ভারত সরকারের তরফে বেজিংয়ের কাছে দাবি করা হয়েছে, যাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হয়৷ এরপরই গতসপ্তাহে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ শহিদ হন ২০ ভারতীয় জওয়ান। সেনার পাল্টা জাবাবে প্রাণ হারায় অন্তত ৪০ চিনা সৈনিকও।
৩৪৪০ কিলোমিটারের এলএসি
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা হল ৩৪৪০ কিলোমিটারের একটা চিহ্নিতকরণ এলাকা। যার মাধ্যমে ভারতীয় সেনার দখলে থাকা এবং চিনা সেনার দখলে থাকা অঞ্চলকে আলাদা করা হয়৷ যেহেতু এলএসি একাধিক জায়গায় ওভারল্যাপ করে আছে, তাই চিনা নিজেদের অবৈধ দাবি সবসময় জানায়৷ প্রায়শই বিবাদ এবং মুখোমুখি বাদানুবাদ এখানকার সাধারণ ঘটনা৷ এলএসি তিনটি অংশে বিভক্ত৷ পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্য৷
২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবরুক-শিয়ক-ডিবিও রোড
ভারতের দিকে গত বছর তৈরি করা ২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবরুক-শিয়ক-ডিবিও রোড তৈরি করা নিয়েই চিনের মূল আপত্তি৷ এই রাস্তাটি তৈরির ফলে সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যাতায়াত এবং নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধে হয়েছে৷ তবে পরপর সংঘর্ষ ও চিনের আপত্তি সত্ত্বেও ভারত এই রাস্তা তৈরির কাজ জারি রাখবে বলে জানা গিয়েছে।
আঞ্চলিক বিবাদ
হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিবাদ থাকা সত্ত্বেও চিন সম্প্রতি লাদাখে ঢুকে পড়েছে৷ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে যখন চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চলে এসেছে৷ প্যাংগং সো, ডেমচক, গালওয়ান উপত্যকা এবং দৌলতবেগ ওলডিতে ভারতীয় ও চিনা সেনা মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়িয়েছে৷ এরই মধ্যে চিন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের অধিকার দাবি করেছে৷
২০১৭ সালে দু'দেশের উত্তেজনা
২০১৭ সালের জুনে এক রাস্তা নিয়ে দু'দেশের উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। মেরুগ লা থেকে ডোকলাম থেকে যে সড়ক চিনা সেনা বানাচ্ছিল, তা সব ধরনের আবহাওয়া সইতে পারে। অর্থাৎ, সারা বছরই ডোকলামে সেনার যাতায়াত নিশ্চিত করতে চেয়েছিল বেজিং। ইয়াতুং থেকে জেলেপ লা পর্যন্ত একই ধরনের রাস্তা বানানোর চিনা পরিকল্পনাও তখন সামনে আসে। শুধু তাই নয়, ডোকলামকে কেন্দ্র করে গাড়ি রাখার বন্দোবস্ত, হেলিপ্যাড, বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব, এমন পরিখাও তৈরি করে চিন।
গালওয়ান নদী নিয়ে বিতর্ক
গালওয়ান নদী বিতর্কিত আকসাই চিন এলাকা থেকে ভারতের লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ ১৯৬২ সালের যুদ্ধে মূল এলাকাগুলির মধ্যে গালওয়ান উপত্যকাও অন্যতম ছিল, যেখানে ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে লড়াই হয়েছিল৷ এই নদীর নামকরণ করা হয়েছে গোলাম রসুল গালওয়ানের নামে৷ যিনি একজন কাশ্মীরি বাসিন্দা এবং লাদাখে ঘুরে বেড়াতেন৷ যখন ভারত আকসাই চিনের অধিকারের দাবি অনড় থেকেছে, তখন চিনের তরফে গালওয়ান নদীর পশ্চিম এলাকাকে নিজের বলে দাবি করা হয়েছে৷
লাদাখ ইস্যুতে ভারতের পাশেই মার্কিন সেনা, চিনকে চাপে রেখে মোদীকে খুল্লামখুল্লা সমর্থন ওয়াশিংটনের