লাদাখের শান্তি প্রক্রিয়া কি ভেস্তে গেল? এলএসি বরাবর ভারত ফের সেনা মোতায়েন করায় উঠছে প্রশ্ন
গালওয়ান সংঘর্ষের পর কেটে গেছে এগারো সপ্তাহ। সাম্প্রতিক ঘটনা অনুযায়ী, লাদাখে ভারত-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে দু'দেশের তরফে। গালওয়ান থেকে সেনা সরাচ্ছে চিন। এই পরিস্থিতিতে গালওয়ান সংঘর্ষের ঠিক এক মাস পর লাদাখ সফরে যান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। আর সেখানে গিয়ে রাজনাথ জানিয়েছিলেন যে লাদাখের পরিস্থিতির কোনও গ্যারান্টি নেই, তাই ভারত সর্বদা তৈরি। এই ইঙ্গিতেই অনেকে ভাবতে শুরু করেছিল যে তবে কি চিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে গিয়েছে!

ভারতীয় সেনার পদক্ষেপ
প্রসঙ্গত, সেই জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে ভারতীয় সেনার এক পদক্ষেপ। জানা গিয়েছে লাদাখে আরও অতিরিক্ত তিন ডিভিশন সেনা মোতায়েন করবে ভারত। যেখানে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছিল, ঠিক তখনই সেনার এই সিদ্ধান্ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এছাড়া ভারতীয় নৌসেনাও তাদের বেশ কয়েকটি মাগ ২৯ উত্তর ভারতের ফরোয়ার্ড বেসগুলিতে স্থানান্তর করেছে বলে খবর মিলছে।

লাদাখ সফরে গিয়ে কী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাজনাথ?
এর আগে লাদাখ সফরের সময়ই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। সীমান্তে কত সেনা মজুত রয়েছে। কী কী অস্ত্র রয়েছে তাঁদের কাছে। কত অস্ত্র দরকার সে-সব খতিয়ে দেখেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী । খোঁজ নেন গালওয়ান সংঘর্ষে জখম সেনাদেরও। সেনা সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর তিনি সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলেন।

সেনার হাতে আসছে প্রচুর অস্ত্র
এদিকে লাদাখের উত্তেজনার আবহেই কয়েকদিন আগেই সেনার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা ও অর্থ বরাদ্দের জন্য অনুমতি দেয় ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর জন্য ৩৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানা গেছে।

দেশে আসছে আরও সুখোই ও মিগ
এদিকে বায়ুসেনার তরফে আরও উন্নত মানের যুদ্ধবিমানের দাবি জানানো হয়েছিল। ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল এই প্রস্তাব পাশে রাজি হয়। পাশাপাশি ২১টি মিগ ২৯ এস ও সুখোই যুদ্ধবিমান কেনা হবে। মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমানের উন্নত সংস্করণ রাশিয়া থেকে আনা হবে। এর জন্য ৭ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা খরচ হবে।

চিনের উপর নজরদারি
এদিকে চিনের তিন দফায় সেনা সরানোর প্রক্রিয়ার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ভারত। কোনও ভাবে যদি চিন সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে তাহলে ভারতও থমকে যাবে। সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি যাতে কোনও ভাবে লঙ্ঘন না করা হয় সেদিকে নজর রাখছে ভারতীয় সেনা। এর জন্য দিনের পাশাপাশি রাতেও বায়ুসেনার বিমান ও হেলিকপ্টর টহল দিচ্ছে লাদাখের সীমান্ত জুড়ে।

ফিঙ্গার এলাকা নিয়ে ভারত-চিন বিবাদ
টহলদারী সীমান্ত নিয়ে বরাবরই ভারত ও চিনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। ভারত বিশ্বাস করে 'ফিঙ্গার ১' থেকে 'ফিঙ্গার ৮' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের এবং চিন মনে করে যে 'ফিঙ্গার ৮' থেকে 'ফিঙ্গার ৪' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদেরই। ১৫ জুন, এই 'ফিঙ্গার ৪' এলাকাতেই উভয় পক্ষের সেনার মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ বাঁধে। পরে উভয় পক্ষের সীমানা যেখানে কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্যকে কাঁটাতারের সাথে জড়িত লাঠির মতো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। 'ফিঙ্গার ৪'-এ এই জন্যেই উল্লেখযোগ্য হারে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছিল চিন যাতে ভারতীয় সেনারা আর 'ফিঙ্গার ৮' এর দিক দিয়ে টহল দেওয়ার সুযোগ না পায়।
চড়ছে পারদ, লাদাখের উত্তেজনা বাড়তেই মার্কিন নির্দেশে আমেরিকায় দূতাবাস গোটাচ্ছে বেজিং