এবার আকসাই চিন নিয়ে পাল্টা দাওয়াই ভারতের! চিনকে চাপে রাখতে রণকৌশল তৈরি সেনার
ভারতের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য এবার ড্রোনের প্রয়োগ চিনের। জানা গিয়েছে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার পোস্টের উপর নজরদারি চালাতে গত এক সপ্তাহ ধরেই অন্তত চারটি স্থানে এই চিনা ড্রোন দেখা গিয়েছে। এদিকে এই আবহেই দুই দিনের সফরে লেহতে গিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান মুকুন্দ নারভানে। আর এই অবস্থাতে এবার বেজিংকে পাল্টা চাপে ফেলতে রণকৌশল তৈরি ভারতের।
ফায়ার ড্রিল করে পিএলএ
শান্তি আলোচনা কি শুধু চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যেই করছে চিন। ফের উঠেছে এই প্রশ্ন। প্রসঙ্গত, জানা যায়, ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলতে থাকলেও ফের তিব্বতে লাইভ ফায়ার ড্রিল করে পিএলএ-র তিব্বত কমান্ডের সেনা। এতেই ফের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এলএসি বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকায়। এরই মধ্যে সামনে এল এই নজরদারি চালানো ড্রোনের খবর। এছাড়া ডিবিও ও ডেপসাংয়ের কাছে চিনা সেনার বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গিয়েছে। এরই মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃহস্পতিবার ফের একবার আকসাই চিনের দাবি তোলেন লাদাখের বিজেপি সাংসদ জামিয়াং সেরিং নামগয়াল।
বেজিংয়ের তরফে এই তৎপরতা কেন?
চিনা সেনারা প্যাংগং লেকের উত্তর তীরে ফিঙ্গার -৪ থেকে ৮ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করতে উচু স্থান দখল করে তা নিয়ন্ত্রণ করছে। গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলের অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে পরিষ্কার। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের তরফে যে পদক্ষপে করা হচ্ছে, তা রীতিমতো বাড়াবাড়ি। এই পরিস্থিতি ফের সংঘর্ষ হওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কেন বেজিংয়ের তরফে এই তৎপরতা?
হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে চিনের বিবাদ
হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিবাদ থাকা সত্ত্বেও চিন সম্প্রতি লাদাখে ঢুকে পড়েছে৷ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে যখন চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চলে এসেছে৷ প্যাংগং সো, ডেমচক, গালওয়ান উপত্যকা এবং দৌলতবেগ ওলডিতে ভারতীয় ও চিনা সেনা মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়িয়েছে৷ এরই মধ্যে চিন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের অধিকার দাবি করেছে৷
নিয়ন্ত্রণরেখায় চিন সেনা সমারোহ
এই পরিস্থিতিতে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিন সেনা সমারোহ বাড়ার সঙ্গেই ভারতও কিন্তু সমরসজ্জা শুরু করে দিয়েছে। সেনা বাহিনীর তিনটি ডিভিশনকে মোতায়েন করে, ভারতও শক্তি বাড়িয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকও ক'দিন হল নিয়ে আসা হয়েছে পূর্ব লাদাখে। বর্তমানে লাদাখে ৪৫ হাজার সেনা রয়েছে বলে খবর।
জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার মসৃণ পথ আকসাই
তিব্বত থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার মসৃণ পথ আকসাই। যদি, এই রুটটি কোনও ভাবে অবরুদ্ধ করা হয়, তবে চিনকে কারাকোরাম হয়ে বিকল্প পথে পৌঁছতে হবে। এখন ভারত যদি আকসাই চিনের দিকে এগোয়, জিনজিয়াং প্রদেশের উপর থেকে চিনের দখল হারিয়ে ফেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এই জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের উপর চিনা সরকারের অত্যাচারের বিষয়ে সারা বিশ্ব অবগত।
একাধিক জটিল এবং বিতর্কিত বিষয় নিয়ে বিবাদ
অঞ্চলভিত্তিক অধিকারকে কেন্দ্র করে একাধিক জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়ের জেরে ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হয়েছে। চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় তৈরি হওয়া সমস্যা সেই দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
১৯৫০ সালে চিন তিব্বত দখল করে
১৯৫০ সালে যখন চিন তিব্বত দখল করে তখন দেশে 'হিন্দি-চিনি ভাই ভাই' রব। সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন সেই সময়ের রাজনীতিবিদরা। তবে তা গ্রাহ্য করেননি নেহরু। ফল, ১৯৬২ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধ। এরপরও বেশ কয়েকবার ভারত-চিন সীামন্ত পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে।
ভারতের ভূখণ্ড দখল করেছে চিন
চিন একটু একটু করে ভারতের ভূখণ্ড দখল করেছে। তবে সেটা ছিল ১৯৬২ সালে। আকসাই চিনের ৩৭,২৪৪ বর্গ কিলোমিটার দখল করে চিন। এরপর ইউপিএ জমানায় ২০০৮ সালে ছবি ও প্যাংনাক উপত্যকায় ২৫০ কিলোমিার ঢুকে যায় চিন। ২০১২ সালে কংগ্রেস জমানায় জোরাওয়ার ফোর্ট ধ্বংস করে সেখানে অবজার্ভিং পয়েন্ট বানায় চিন। ২০০৮ সালে ভারত ডুম চেলির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ভারত।
গোটা লাদাখ দখলের ছক? ডেপসাংয়ে চিনের গতিবিধির দিকে নজর রেখে পাল্টা পদক্ষেপ ভারতের